নিহত মইদুলের স্ত্রী আলিয়ার সঙ্গে তাঁর দুই কন্যা। সোমবার। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী
নিজস্ব সংবাদদাতা
কোতুলপুর ও বাঁকুড়া
কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দিতে কলকাতা গিয়েছিলেন। ঠিক ছিল, ফেরার সময়ে কলেজ স্ট্রিট থেকে মেয়ের পড়ার বই কিনে আনবেন। কিন্তু ফেরা হয়নি বাঁকুড়ার কোতুলপুরের চোরকোলা গ্রামের ফরিদ ওরফে মইদুল ইসলাম মিদ্যার। বৃহস্পতিবার বাম ছাত্র-যুব সংগঠনগুলির নবান্ন অভিযানে জখম হয়ে সোমবার মৃত্যু হয়েছে বছর তেত্রিশের ওই যুবকের। ফরিদের স্ত্রী আলিয়া বেগমের প্রশ্ন, ‘‘আমার স্বামী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে যায়নি। তা হলে কেন মারা হল?’’
লোকসভা নির্বাচনের পরে, সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফে যোগ দেন ফরিদ। সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, অল্প সময়েই গোপীনাথপুর ইউনিটের সম্পাদকের পদ পান। তবে আলিয়া জানান, ওই এলাকায় সিপিএমের পোক্ত সংগঠন না থাকায় ফরিদ প্রকাশ্যে রাজনীতি করতেন না। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন।
আলিয়া বলেন, ‘‘সমস্যা হতে পারে ভেবে মিছিলে যাওয়ার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেছিল ও। গোলমালের খবর পেয়ে বার বার ফোন করেছিলাম। পাইনি। শুক্রবার ফোনটা কেউ এক জন ধরেন। জানান, ঘুমোচ্ছে। রবিবার ও নিজে ফোন ধরে বলেছিল, বাড়ি আসবে তাড়াতাড়ি। সকালে খবরটা পেয়ে তাই বিশ্বাসই করতে পারিনি।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরিদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ছ’জনের পরিবারে ছেলে বলতে একাই ছিলেন। একা রোজগেরেও। এক সময়ে বাসে হকারি করেছেন। পরে পুরনো টোটো কিনে এলাকায় চালাতেন। মাস তিনেক আগে ঋণ করে অটো কিনেছিলেন। আলিয়ার কথায়, ‘‘দিনরাত পরিশ্রম করে খাওয়া-পরার অভাব হতে দেয়নি আমার স্বামী।’’
ফরিদ ও আলিয়ার বড় মেয়ে সুরাইয়া পারভিনের বয়স দশ বছর। বর্ধমানের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বছর পাঁচের ছোট মেয়ে সুমাইয়া পারভিন গ্রামের অঙ্গনওয়াড়িতে যায়। আলিয়া জানান, পিতৃহারা বছর বারোর ভাগ্নি রেবেকা সুলতানার দায়িত্বও সামলাতেন ফরিদ। এ দিন ফরিদের অসুস্থ মা তহমিনা বিবি বার বার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। আলিয়া বলেন, ‘‘মেয়ে দু’টোকে কী ভাবে মানুষ করব? সব শেষ হয়ে গেল!’’
ফরিদদের বাড়িতে এ দিন যান গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ বসিরুদ্দিন। তিনি বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। বাড়ির লোককে গাড়ি ভাড়া করে কলকাতা পাঠানো হয়েছে।’’ দুপুরে যান বাম নেতারা। পড়শি রেজ্জাক মিদ্যা, মিসকাতুল খান ও আয়ুব মণ্ডল বলেন, “সবার সঙ্গে ফরিদের ভাল সম্পর্ক ছিল। ওর মৃত্যু মানতে পারছি না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy