Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
Krishnanagar case

মেয়ে পুলিশ হতে চেয়েছিল, বললেন কৃষ্ণনগরে মৃতার মা, পরিজনেরা ক্ষোভে জুতো ছুড়লেন পুলিশকে

তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত রইল কৃষ্ণনগর। পরিবারের দাবি, মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তা ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে দাবি পরিজন-প্রতিবেশীদের।

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ২০:১০
Share: Save:

পুলিশ হতে চাওয়া মেয়ের রহস্যমৃত্যুতে পুলিশের উদ্দেশেই জুতো ছুড়লেন পরিজন-প্রতিবেশী!

তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত রইল কৃষ্ণনগর। পরিবারের দাবি, মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তা ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে দাবি করে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিজন-প্রতিবেশীরা। কোতোয়ালি থানার সামনে চলে বিক্ষোভ। শুধু তা-ই নয়, পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে জুতো ছুড়ে মারতেও দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। মৃতার মায়ের অভিযোগ, ‘‘আত্মহত্যা করার মেয়ে নয় ও। ওর প্রেমিক আর তার বন্ধুরা মিলে গণধর্ষণ করে খুন করেছে ওকে। ওর (মেয়ের) স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। সেই পুলিশই এখন ঘটনাটা ধামাচাপা দিতে চাইছে।’’

কৃষ্ণনগরকাণ্ডে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক করা হচ্ছে অভিযুক্তের মা-বাবাকে। তবে পুলিশ ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে মৃতার শরীরে ‘বার্নিং স্পট’ (পোড়া দাগ) ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘তরুণীর মৃত্যুর নেপথ্যে ধর্ষণ না কি আত্মহত্যা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবার ইতিমধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।’’

বুধবার সকালে কৃষ্ণনগরে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়েরাই দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, তরুণীর মুখ পুড়ে যাওয়ায় তাতে প্রাথমিক ভাবে বেগ পেতে হয়েছিল পুলিশকে। পরে খোঁজ মেলে। খবর দেওয়া হয় পরিবারকে। পরে পরিবারের লোকেরা থানায় দেহটি শনাক্ত করেন। পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই তরুণী। প্রেমিকের বাড়িতেই গিয়েছিলেন। তার পর সকালে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তরুণীর মা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘মেয়ে ওর দিদিমা-মাসির কাছে থাকত। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ও আর ফোন ধরেনি। মেয়ের বন্ধুকে যখন প্রথম বার ফোন করি, ও বলে, ‘আমার বাড়িতেই আছে।’ কিছু ক্ষণ বাদে যখন আমার বাবা ওই ছেলেটাকে ফোন করে, তখন বাবাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে ছেলেটা। সকালে ছেলেটির বাড়িতে মেয়ের খোঁজে গিয়েছিল বাবা। তখন সব অস্বীকার করে ছেলেটা।’’

মৃতার মা দাবি করেছেন, সকালে তাঁর ফোনে দু’টি মেসেজ আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’’ মৃতার শেষ ফেসবুক পোস্টেও লেখা, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, আমি নিজেই দায়ী। তোমরা ভাল থেকো।’’ তা নিয়েই রহস্য দানা বেঁধেছে। যদিও মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে মানতে নারাজ মৃতার মা। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক লড়াই করার ইচ্ছে ছিল ওর (মেয়ের) মধ্যে। আমি বার বার বলেছিলাম ছেলেটি ভাল নয়। শেষমেশ ওর জেদের কাছে হার স্বীকার করে নিই। পুজোর মধ্যেও দু’জনে একসঙ্গে ঘুরেছিল। আমরা তো বিয়েও দিতে চেয়েছিলাম। তবু কেন করল এ রকম?’’ বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন মেয়েটির মা। বলেন, ‘‘মেয়েকে খুন করা, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। অত দূরে দেহ নিয়ে গিয়ে ফেলে আসা। এটা এক জনের কাজ হতে পারে না। ওই ছেলেটি আর ওর বন্ধুরা মিলে আমার মেয়েকে গণধর্ষণ করে খুন করেছে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’

গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তরুণীর পরিজন-প্রতিবেশীদের বিক্ষোভের জেরে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কোতোয়ালি থানা চত্বরে। পরিজনদের দাবি, পুলিশ কিছু লুকোতে চাইছে। শহর জুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ সে সব দিকে কোনও নজর না দিয়ে, যত তাড়াতাড়ি ময়নাতদন্ত ও অন্ত্যেষ্টি করা যায়, তার উপরে জোর দিচ্ছে। তরুণীর মা-ও বলেন, ‘‘পুলিশ গাড়িতে করে দেহ বেশ কয়েক বার অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। শক্তিনগর হাসপাতালের মর্গের কাছে সাদা কাগজে সই করার জন্যেও বলেছে। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশ কিছু লুকোতে চাইছে।’’ কোতোয়ালি থানা চত্বরে পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছে মৃতার পরিজনদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদেরও পাল্টা অভিযোগ, তাঁদের হঠাতে অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। এক বিক্ষোভকারীকে টেনেহিঁচড়ে সরানোরও চেষ্টা করে তারা।

পুলিশের অবশ্য দাবি, তারা সংযত আচরণই করেছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার বলেন, ‘‘বাইরে পরিস্থিতি সামান্য উত্তপ্ত হয়েছিল। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।’’ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে উপযুক্ত ধারা যুক্ত করে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত চলাকালীন যা তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে, সেগুলি তদন্তে সাক্ষ্য হিসাবে যুক্ত করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE