Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Baruipur

ছেলেধরা সন্দেহে ধরেও পথভোলা মহিলার শুশ্রূষায় বাসিন্দারা

বুধবার রাত তখন দশটা। পাড়া প্রায় নিঝুম। কয়েক জন যুবক পাড়ার মোড়ে বসে গল্পগুজব করছিলেন। তখনই তাঁরা দেখেন, বছর পঞ্চাশের এক মহিলা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

নুরসুনা বিবি।

নুরসুনা বিবি। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারুইপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ ০৭:২৩
Share: Save:

ছেলেধরা সন্দেহে এক মহিলাকে ধরে ফেলে তাঁকে মারধর করতে যাচ্ছিলেন পাড়ার ছেলেরা। রুখে দাঁড়ান এলাকারই কয়েক জন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিলা ছেলেধরা নন। তিনি আসলে অ্যালঝাইমার’স রোগী। পথ ভুলে চলে এসেছেন বহু দূর। বুধবার রাতে বারুইপুরের ধোপাগাছির বটতলা এলাকার ওই ঘটনায় অবশেষে মহিলার পরিবারের খোঁজ মেলে। জানা যায়, তিনি ডায়মন্ড হারবারের রামনগর থানা এলাকার বাসিন্দা। রাতে তাঁকে গ্রামবাসীরাই আশ্রয় দেন। সকালে স্বামী-ছেলের হাতে তাঁকে তুলে দেন স্থানীয় মানুষ।

বুধবার রাত তখন দশটা। পাড়া প্রায় নিঝুম। কয়েক জন যুবক পাড়ার মোড়ে বসে গল্পগুজব করছিলেন। তখনই তাঁরা দেখেন, বছর পঞ্চাশের এক মহিলা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাড়ায় ছেলেধরার আনাগোনা নিয়ে ক’দিন ধরেই চর্চা চলছিল। মহিলাকে দেখে তেমনই সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে ধরে রেখে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। মহিলা কিছুই বলতে পারছিলেন না। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। কথা বার করতে কয়েক ঘা দেওয়ার নিদানও দেন কেউ কেউ।

ঘটনাচক্রে সেই সময়ে এলাকায় আসেন বিপুল পর্বত নামে এক ব্যক্তি। পেশায় কেব‌্ল অপারেটর বিপুল কাছেই টংতলায় থাকেন। জটলা দেখে দাঁড়িয়ে বিষয়টি বুঝে নিয়ে মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। মহিলার সাজ-পোশাক, খালি পা দেখে বিপুল বুঝে যান, তিনি ছেলেধরা হতে পারেন না। ছেলেদের সে কথা বোঝানও। পাড়ার অন্য মহিলাদের ডেকে এনে ওই মহিলার শুশ্রূষার ব্যবস্থা করেন। খাবারেরও ব্যবস্থা হয়।

ইতিমধ্যে হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিপুল। মহিলা অসংলগ্ন কথাবার্তার মাঝেই ডায়মন্ড হারবারের কথা বলেছিলেন। তা ধরেই মহিলার ছবি দিয়ে খোঁজ শুরু হয়। রাতেই পরিবারের খোঁজ মেলে। তবে তত ক্ষণে রাত গভীর হয়েছে। গ্রামেরই এক বাড়িতে মহিলার থাকার ব্যবস্থা হয়। ভোরে মহিলার ছেলে, স্বামী ও পরিবারের অন্যেরা এসে তাঁকে নিয়ে যান। মহিলার ছেলে জাহির শেখ জানান, মায়ের নাম নুরসুনা বিবি। তাঁর ভুলে যাওয়ার রোগ রয়েছে। মাসখানেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। থানায় অভিযোগ করেও সন্ধান মেলেনি। মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান জাহির।

বিপুল বলেন, “জটলা দেখে এগিয়ে যাই। মহিলাকে দেখে মনে হয়নি ওঁর অসৎ উদ্দেশ্য আছে। কথা বলার চেষ্টা করি। কথা বলেই বুঝতে পারি, ওঁর কিছু সমস্যা রয়েছে। গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে শুশ্রূষার ব্যবস্থা করি। পরিবারের খোঁজও পাওয়া যায়।” ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “চার দিকে যা চলছে, তার জেরে অনেক নিরীহ মানুষও খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারেন। এই ঘটনাই তার প্রমাণ। সকলকে বলব, কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার আগে ভাবুন। হঠকারি সিদ্ধান্ত নেবেন না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Baruipur woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy