Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Metro

‘ভাসমান’ পাতাল স্টেশন! রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই প্রশ্ন পার্ক স্ট্রিটে, এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হলেই ‘ডুববে’ মেট্রো?

সকালে ৪ ঘণ্টা ১৪ মিনিট মেট্রো পরিষেবা বন্ধ ছিল পার্ক স্ট্রিট, ময়দান এলাকায়। মেট্রো চলেছে শুধু দক্ষিণেশ্বর-গিরিশ পার্ক এবং টালিগঞ্জ-কবি সুভাষের মধ্যে। পরে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে।

সোমবার পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের পরিস্থিতি।

সোমবার পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের পরিস্থিতি। ছবি: সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার।

সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৪ ১৩:২৬
Share: Save:

সিঁড়ি দিয়ে নামার মুখেই নীচে তাকিয়ে থমকে যেতে হয়। শেষের কয়েকটি সিঁড়ি জলে ডুবে রয়েছে। তা পেরিয়ে এগোনোর চেষ্টা করা গেল। কিন্তু লাভ হল না বিশেষ। কারণ, যে দিকে চোখ যায়, শুধু জল আর জল। সেই জল প্রথমে হাঁটু, তার পর আরও একটু এগোতেই কোমর ছুঁয়ে ফেলল। সুড়ঙ্গের দেওয়াল বেয়ে একাধিক জায়গা দিয়ে হুড়হুড় করে জল ঢুকছে। দেখে মনে হচ্ছে, দেওয়ালে কোথাও চোরা ফাটল তৈরি হয়েছে। সোমবার সকালে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের এই ছবি অতীতের অতি বড় দুর্যোগেও কেউ দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। যদিও মেট্রো স্টেশনে জল ঢোকার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। কিছু দিন আগের বৃষ্টিতেই পার্ক স্ট্রিট স্টেশন ভেসে গিয়েছিল। সে সময়ে মেট্রো চলাচল ব্যাহত না হওয়ায় হয়তো পরিস্থিতির দিকে চোখ পড়েনি আমজনতার। অতীতেও পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে জল ঢোকার নজির রয়েছে। তবে সোমবার সেই পার্ক স্ট্রিটই যাত্রীদের চূড়ান্ত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াল।

সোমবার সকালে ৪ ঘণ্টা ১৪ মিনিট মেট্রো পরিষেবা বন্ধ ছিল পার্ক স্ট্রিট, ময়দান এলাকায়। মেট্রো চলছিল কেবল দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক এবং টালিগঞ্জ থেকে কবি সুভাষের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সোমবার সকালেও বৃষ্টির বিরাম নেই। যার জেরে এমনিতেই জলমগ্ন গোটা শহর। মেট্রো স্টেশনেও জল ঢুকে পড়ায় যাত্রীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, সমস্যা কোথায়? তবে কি এখন থেকে বৃষ্টি হলেই বন্ধ হয়ে যাবে মেট্রো?

সদুত্তর দিতে পারছেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষও। মেট্রোরেলের সঙ্গে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘আমি এত বছর ধরে কাজ করছি, মেট্রো স্টেশনে জল ঢুকে পড়ছে, তাতে পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে, এই পরিস্থিতি আগে কখনও দেখিনি। কিছু জায়গা থেকে কোনও ভাবে হুড়হুড় করে জল ঢুকছে। সেই জায়গাগুলি এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। আপাতত আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পরিষেবা স্বাভাবিক করা। কী ভাবে জল ঢুকছে, তা তার পর ভাবা যাবে। তবে মেট্রোর ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে এটা খারাপ।’’

পাম্পের মাধ্যমে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের ভিতর থেকে জল বার করা হয়েছে। মেট্রোরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘সকাল থেকে মেট্রো চলছিল। পরিষেবা আটকাল শহরে জল জমার পর। ময়দান চত্বরে জমা জল নীচে নামতে পারছে না। তাকে তো কোথাও বেরোতে হবে। তাই পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের উপর দিয়ে চুঁইয়ে জল নীচে চলে এসেছে। স্টেশনে তাই জল ঢুকে গিয়েছে। এই অবস্থায় যাত্রীদের স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া যায় না। বিপদ এড়াতেই তাই এখানে মেট্রো বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’ কোথা থেকে জল ঢুকছে, তা জানা যায়নি। তবে পাম্পিং ব্যবস্থায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কৌশিক।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও অবশ্য উদ্বেগ কাটছে না যাত্রীদের। কারণ, শহর এবং শহরতলির এক বড় অংশের মানুষের প্রতি দিনের যাতায়াতের ভরসা মেট্রোরেল। বর্ষা আসছে। কলকাতায় আরও বৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে প্রতি বারই যদি শহরে জল জমার কারণে কয়েক ঘণ্টা ধরে মেট্রো বন্ধ রাখতে হয়, তবে ভোগান্তি বাড়বে। মেট্রোর তরফে রাস্তার জল চুঁইয়ে স্টেশনে ঢোকার কথা বলা হলেও প্রশ্ন উঠেছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই। অনেকেই বলছেন, কর্তৃপক্ষের তরফেই কোনও গাফিলতি রয়েছে। না হলে এত দিন ধরে এত দুর্যোগেও কেন এই ছবি দেখা যায়নি? স্টেশনে জল ঢুকে পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মতো ঘটনা তো নজিরবিহীনই বটে।

মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা মেট্রোর দেওয়াল, প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ করেন। বাইরে থেকে জল ঢুকলে তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। জল কোথা থেকে ঢুকছে, তা এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এমন কিছু ছবি রয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের দেওয়াল দিয়ে হুড়হুড় করে জল ঢুকছে। সমস্যার সমাধান কী ভাবে হবে? তার উত্তর অবশ্য ভবিষ্যতের গর্ভে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy