লকডাউনের মধ্যেও কাঁচা বাজার কিনতে উপচে পড়েছে ভিড়। রবিবার, শোভাবাজারে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কলকাতা এমনকি ভিন্ রাজ্যে আনাজ জোগানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যতম বড় কেন্দ্র নদিয়ার মদনপুরে আপাতত মন্দার ছায়া। সাধারণত যত আনাজ রোজ সেখান থেকে বস্তাবন্দি করে পাঠানো হত, তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ দিকে, মদনপুর এবং সংলগ্ন এলাকায়
আনাজের দাম কমলেও পরিবহণের অভাবে তা পৌঁছতে পারছে না শহরে। ফলে ঘাটতির কারণে শহরের বাজারে আনাজের দাম বাড়ছে। দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মদনপুর পাইকারি বাজার সূত্রের খবর, দূরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা ওখান থেকে আনাজ কিনে বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় দূরবর্তী এলাকায় আনাজ সরবরাহ প্রায় বন্ধ। আশপাশের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী সড়কপথে গিয়ে আনাজ নিয়ে যাচ্ছেন। মদনপুর সংলগ্ন এলাকাগুলিতে আনাজের জোগান চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। আবার যে সব আনাজ অন্য রাজ্য থেকে আসত, সে সব কিছুই আসছে না।
লকডাউন শুরুর আগে মদনপুর পাইকারি বাজারে রোজ হাজার পাঁচেক ব্যবসায়ী আসতেন। এখন তার অর্ধেকও আসছেন না। আশপাশ থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁরা টোটো, ভ্যান অথবা রিকশায় চাপিয়ে আনাজ নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে তাঁদের পরিবহণের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ট্রেন চললে এই খরচ হত না। সেই খরচ তুলতেই খুচরো বাজারে দর বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
সরাটির চাষি নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, “এখন মদনপুর বাজারে খুব ভিড় হচ্ছে চাষিদের। বাজারে আনাজ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই এই সময়ে যে আনাজের যত দাম পাওয়ার কথা চাষিদের, সেটা তাঁরা পাচ্ছেন না। ট্রেন চলছে না। সকলের তো লরি বা ছোট পণ্যবাহী গাড়ি ভাড়া করার মতো অবস্থা নেই। তাই কেউ কলকাতা এবং বাইরে আনাজ নিয়ে যেতে পারছেন না।”
মদনপুর ভেন্ডার সমিতি সূত্রের খবর, স্থানীয় স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মের পাশে ৬০ বছর ধরে আনাজের বাজার বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ ‘ইন্দিরা সবজি বাজার’ নামে এই বাজারে আসেন। তাঁদের কেউ কেনেন, কেউ বিক্রি করেন। বিহার থেকে টোম্যাটো, সজনে ডাঁটা, রাঁচী থেকে মটরশুঁটি, বর্ধমান ও হুগলি থেকে আলু, বাঁকুড়া থেকে কুমড়ো আসে এই বাজারে। রাত ১২টা থেকে বেচাকেনা শুরু হয়, চলে বেলা পর্যন্ত। এ ছাড়া, সারাদিন কমবেশি আনাজ বিক্রি হয়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই বাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত।
মদনপুর ভেন্ডার সমিতির সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ বাছার বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলার পরে আমরা ভোর ৪টে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখছি। ট্রেন বন্ধ থাকায় দূরের পাইকার ব্যবসায়ীরা এলাকায় আসতে পারছেন না। এই বাজারে যদি বা আসছেন, আশপাশের বাজারগুলোয় তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। সেই সব বাজারের চাষিরা আবার এখানেও আনাজ নিয়ে আসছেন। ফলে বাজারে আনাজের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ দিকে কলকাতায় আনাজ পাঠাতে পারছি না।”
শিমুরালির আনাজ বিক্রেতা নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “যখন ট্রেন চালু ছিল, ভোরে মদনপুর থেকে আনাজ কিনে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেছি। এখন সেই সুযোগ নেই। সাইকেলে মদনপুর গিয়ে ভ্যানে করে আনাজ নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে।
সময়ও লাগছে। আনাজ বিক্রির সময় কমে গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy