Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National Green Tribunal

জবরদখল নিয়ে চুপ কেন? প্রশ্নে ‘জেরবার’ রাজ্য

আদিগঙ্গা সংস্কার প্রকল্প বা সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ রোধ অথবা সরস্বতী নদী সংক্রান্ত মামলা, প্রতিটি ঘটনাতেই জবরদখলের প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কৈফিয়ত দাবি করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।

জাতীয় পরিবেশ আদালত।

জাতীয় পরিবেশ আদালত। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

জবরদখল কি ‘অজুহাত’ মাত্র? না কি ‘ভোটব্যাঙ্কে’ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় শাসকদল সব জেনেশুনেও জবরদখল নিয়ে নিরুত্তর থাকে? একের পর এক পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের মামলায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই জবরদখল। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পরিবেশ আদালতের প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে রীতিমতো জেরবার হতে হচ্ছে! ফলে এই প্রশ্নগুলোই উঠছে বিভিন্ন মহলে।

আদিগঙ্গা সংস্কার প্রকল্প বা সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ রোধ অথবা সরস্বতী নদী সংক্রান্ত মামলা, প্রতিটি ঘটনাতেই জবরদখলের প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কৈফিয়ত দাবি করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত! যেমন, চলতি সপ্তাহেই সরস্বতীনদী সংক্রান্ত মামলার নির্দেশে নদীর দুই পাড়ের জবরদখলের প্রসঙ্গতুলে পরিবেশ আদালত জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট মামলায় রাজ্য সেচ ও জল পরিবহণ দফতরের জমা দেওয়া রিপোর্টটি অসম্পূর্ণ। কারণ, জবরদখল সরানোর জন্য কী পরিকল্পনা হয়েছে বা কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে একটা কথাও বলেনি রাজ্য।

আবার জবরদখলকে কেন্দ্র করেই আদিগঙ্গা সংস্কার প্রকল্প দিনের পর দিন পিছিয়েছে। তা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধও হয়েছে। আদিগঙ্গা সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ হলেও কেন্দ্র তা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছিল রাজ্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমসিজি) জানিয়েছিল, আদিগঙ্গা সংস্কারের অর্থ বিশ্ব ব্যাঙ্কের থেকে নেওয়া হবে। তাই তাদের ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রোটোকল’-এর নির্ধারিত মাপকাঠি পূরণ করা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী যে কোনও প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট এলাকা দখলদারমুক্ত হওয়া ও সেখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। কবে দখলদার সরানো হবে, কী ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হবে, এই সংক্রান্ত কোনও সময়সীমাই রাজ্য সরকার জানায়নি বলে এনএমসিজি দাবি করেছিল।

সম্প্রতি ওই প্রকল্পের জন্য এনএমসিজি অর্থ বরাদ্দ করলেও বাস্তবায়নে একই ভাবে থেকে গিয়েছে জবরদখলের ‘কাঁটা’। যে কারণে চলতি মাসেই আদিগঙ্গা সংক্রান্ত মামলার রায়েও জবরদখলের প্রসঙ্গ টেনেছে পরিবেশ আদালত। মুখ্যসচিবকে আদালত নির্দিষ্ট ভাবে নির্দেশ দিয়েছে, দু’পাড়ের জবরদখল ঠেকাতে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, রিপোর্টে তা বিস্তারিত বলতে হবে। সাঁতরাগাছি ঝিল সংস্কার মামলাতেও জবরদখল সরানো নিয়ে রেল-রাজ্যের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ আদালতে মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের জবরদখল সরানো নিয়ে অদ্ভুত অনীহা রয়েছে। এমনকি, কোনও প্রকল্প, সে আদিগঙ্গাই হোক বা সরস্বতী নদী, পাড়ে জবরদখল থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে পুরোপুরি চুপ থাকে রাজ্য সরকার।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘বেআইনি হকার উচ্ছেদ করা হবে বলে তো অনেক কিছু ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। হল কোথায়? তেমনই জবরদখলকারীদের অনেকেই শাসকদলের ভোটার হওয়ায় সরকার তাঁদেরও সরাতে চায় না।’’

এই অভিযোগ উড়িয়ে প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, রাজনীতির সঙ্গে সরকারি কাজকর্মের কোনও যোগ নেই। তাই এই সমালোচনা অর্থহীন। তবে অনেক জায়গায় জবরদখল সরাতে গেলেঅনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সব দিক ভেবে পদক্ষেপ করা হয়। ওই কর্তার কথায়, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কখনও অমান্য করা হয়নি। জবরদখলকারীদের পুনর্বাসন দিতে সরকার সব রকম পদক্ষেপ করছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE