গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পৌষ মাসের দু’ধারে সর্বনাশের লেশমাত্র চিহ্ন ছিল না। শীত-বিয়ের মরসুমটা বেশ ভালই কেটেছিল। মরসুম জুড়ে কাজ আর কাজ। কিন্তু বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ পর্যন্তও ফি বছর আসর জমায় আরও এক বিয়ে-ঋতু। সেই মরসুমটা যে এ বছর এ রকম ডুবিয়ে দেবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বিয়ে ব্যবসায়ীরা।
বাগুইআটি-বেলেঘাটা হোক বা নিউ গড়িয়া-সোনারপুর, বিয়ে-কেন্দ্রিক নানা ব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁরা প্রত্যেকে বেজায় সমস্যায়। বার্ষিক ব্যবসার প্রায় অর্ধেকটাই চোখের সামনে ধুয়েমুছে যাচ্ছে লকডাউনের ধাক্কায়। মুন্না মহারাজ থেকে গণপতি রাজেশ, নিক্কো গ্রুপ থেকে পি সি চন্দ্র গার্ডেন— রাঘব বোয়ালদের ঘরেও হাহাকারের দশা। ক্ষতির অঙ্ক আরও কতটা দৌড়বে, গোটা ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে প্রশ্ন এখন সেটাই।
বিয়ে-বৌভাত, পৈতে-সহ নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মরসুমটা সবে শুরু হব হব করছে। তখনই শুরু হল লকডাউন। সতর্কবার্তা অবশ্য কিছু দিন আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। জমায়েত বা ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। সুতরাং আগেই ঠিক হয়ে থাকা অনুষ্ঠান নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন অনেকে। নির্ধারিত সময়েই সব হবে, নাকি পিছিয়ে দেওয়া হবে, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক পরিবারে। লকডাউনের মেয়াদ যে ধাপে ধাপে অনেকটাই বাড়বে, প্রথমে তা আন্দাজ করা যায়নি। ফলে নির্ধারিত বিয়ে-পৈতে পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে কেউ খুব একটা দ্বিধান্বিত হননি। লকডাউন উঠলেই নতুন করে তারিখ ঠিক করা যাবে, এ রকমই ভেবেছিলেন সম্ভবত। কিন্তু লকডাউন বাড়তে বাড়তে যে গোটা মরসুমটাই পেরিয়ে যাবে, আবার যে শীতকালের অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে, সে কথা প্রায় কেউই আঁচ করতে পারেননি।
বাইপাসের ধারে একটি ফাঁকা ব্যাঙ্কোয়েট।—ফাইল চিত্র।
কলকাতার সবচেয়ে নামী ওয়েডিং প্ল্যানার তথা ইভেন্ট ম্যানেজারদের সঙ্গে কাজ করেন স্বরূপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘শীতের মরসুমের তুলনায় এই সময়টায় বিয়ে-পৈতের সংখ্যা কিছুটা কম থাকে। গরমের সময় তো। আর গরম কাটলেই বর্ষা শুরু যাবে। তাই অনেকেই এই সময়টায় অনুষ্ঠান করা এড়িয়ে যেতে চান। তবে হিন্দুদের বিয়ে যে হেতু গোটা বছর ধরে হয় না, তাই এই মরসুমটাকে সবাই অবহেলাও করতে পারেন না।’’ স্বরূপ ঘোষের কথায়, ‘‘শীতকালেই বিয়ে-বৌভাত-পৈতের সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই সময়েও মাস তিনেক জমজমাট মরসুমই চলে। গোটা বছরের যে ব্যবসা, তার বেশ বড় একটা অংশই এই সময়টাতে হয়।’’
আরও পড়ুন: হাতে কাজ নেই, পেটে ভাত নেই, বিনোদনের দুনিয়ায় চোখের জলও নেই: রুদ্রনীল ঘোষ
এই মরসুমে বাঙালি হিন্দুদের বিয়ে এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে প্রায় অগাস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। মারওয়াড়ি বিয়ের লগ্ন অবশ্য অত দিন থাকে না। জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত মারওয়াড়িদের বিয়ে চলে। তবে মুসলিম বিয়ে সারা বছরই হয়। সব মিলিয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে তিন-সাড়ে তিন মাসে ব্যবসার পরিমাণটা বড় অঙ্কেরই।
ফুল ব্যবসায়ী থেকে বিয়েবাড়ি সাজানোর ফ্লোরিস্ট, ডেকরেটর থেকে ক্যাটারার, ইলেকট্রিশিয়ান থেকে প্যান্ডেল বাঁধার শ্রমিক, লকডাউন আপাতত রুজি কেড়েছে সবার। নামী ব্যাঙ্কোয়েট হোক বা শহরতলির অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক, মানিকতলা বাজারের মাছের আড়তদার হন বা বিয়ের সিজনে খেপ খাটতে থাকা রাঁধুনি, সঙ্কটে প্রত্যেকে। ভেদাভেদ করছে না করোনার অভিঘাত, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব বিয়ে ব্যবসায়ীকে এক বন্ধনীতে এনে ফেলেছে সে।
হাই-বাজেট বিয়েতে ভেন্যু (অনুষ্ঠান স্থল) বা ব্যাঙ্কোয়েট খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই সব অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতার পছন্দসই হটস্পট এখন বাইপাস বা তার আশপাশের এলাকা। পি সি চন্দ্র গার্ডেন, নিক্কো পার্ক, ইকো পার্ক তো রয়েইছে। রুবি থেকে নিউটাউন পর্যন্ত এলাকায় বাইপাস সংলগ্ন রাস্তাগুলোয় ঢুকলেও আরও নানা হাই-বাজেট ভেন্যুর সমাহার। বাইপাসের ধারে মাথা তোলা গোটা তিনেক পাঁচতারা হোটোলও রয়েছে। এই সব জায়গায় কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আয়োজকরা কেমন খরচ করেন? নিক্কো পার্কের একেবারে সামনের অংশে অর্থাৎ বিশ্ববাংলা সরণির ধারেই যে চোখধাঁধানো ব্যাঙ্কোয়েট, সাজসজ্জা, লাইটিং-সহ তার ভাড়া ১২ লক্ষ টাকার আশেপাশে। এর ঠিক পিছনেই অর্থাৎ নিক্কো চত্বরেই আর এক রাজসূয় আয়োজন। ওয়েডিং প্ল্যানাররা বলেন ‘মন্টু সাহার ব্যাঙ্কোয়েট’। ডাকনাম শুনে অবশ্য তার ঠাটবাট বোঝা যাবে না। সে ব্যাঙ্কোয়েটের অন্দরমহল, তার আবহ, তার অন্দরসজ্জা এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা নিক্কো চত্বরে সবচেয়ে নজরকাড়া। অতএব মন্টু সাহার ব্যাঙ্কোয়েট বেছে নিলে অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করতেই হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ওপেন এয়ার ব্যবস্থাপনা— নিক্কো ওয়াটার পার্ক। আর রয়েছে নিক্কো ওয়াটারসাইড ১/২, সেটাও ওপেন এয়ার। প্রথমটির জন্য সাজসজ্জা-সহ খরচ ১০ লক্ষের মতো। দ্বিতীয়টির জন্য লাখ ছয়েক।
এই কাজ এখন বন্ধ।—ফাইল চিত্র।
এ হেন নিক্কো চত্বরে ক’টা অনুষ্ঠান হয় বছরের এই সময়টায়। যাঁরা ওই চত্বরে নানান ইভেন্ট সামলান সারা বছর, তাঁরা জানাচ্ছেন, বছরের এই তিন-সাড়ে তিন মাসে নিক্কো পার্কের সবক’টা ভেন্যু মিলিয়ে অন্তত ৪০টা অনুষ্ঠান তো হয়ই। ব্যাঙ্কোয়েট বা লন ভাড়া এবং সাজসজ্জা মিলিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের ব্যবসা হয়। কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, বিদ্যুৎ বিল, ডেকরেটর, ফ্লোরিস্ট-সহ সব খরচ-খরচা মিটিয়েও দেড় কোটি টাকার মতো লভ্যাংশ ঘরে তুলতে পারেন ব্যাঙ্কোয়েট মালিকরা। এ বছর প্রায় কোনও অনুষ্ঠানই নেই। মাঙ্গলিক মরসুম পুরোপুরি ফাঁকা। কিন্তু কর্মীদের বেতন বা রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। অতএব লাভ দূরে থাক, আপাতত লোকসানের ধাক্কা সামলানোর উপায় খুঁজতে হচ্ছে অভিজাত ব্যাঙ্কোয়েট মালিকদের।
হাই-বাজেট বিয়েতে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত ঘিরেও বড় অঙ্কের ব্যবসা চলে। মারওয়াড়ি বা অন্যান্য অবাঙালি সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে ক্যাটারার হিসেবে যাঁদের ডাক পড়ে, বাঙালি বিয়েতে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের ডাক পড়ে না। কারণ মারওয়াড়িদের অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া নিরামিষ। আর বাঙালির মহাভোজ আমিষ ছাড়া ভাবাই যায় না। নিরামিষ ভোজে স্পেশ্যালিস্ট কারা? মুন্না মহারাজ (অত্যন্ত ধনীদের জন্য), গণপতি রাজেশ, গুপ্তা ক্যাটারার, পুঘোলিয়া ক্যাটারার। আর বাঙালি মহাভোজে কাদের ডাক পড়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তের মেগা ইভেন্টগুলোয়? ৬ বালিগঞ্জ প্লেস, ওহ্ ক্যালকাটা, ভোজ, সেন মহাশয় এবং আরও অনেকে। কলকাতার ওয়েডিং প্ল্যানাররা জানাচ্ছেন, গণপতি রাজেশকে দিয়ে যদি ৫০০ লোকের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করাতে হয়, তা হলে প্লেটপিছু ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ পড়বে। হাজার লোকের ক্ষেত্রে প্লেটপিছু খরচ একচু কমবে, ১ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। এর মধ্যে স্টার্টার থেকে শুরু করে স্মুদি, মেন কোর্স থেকে ডেজার্ট, সবই থাকছে। আর বাঙালি অনুষ্ঠানে আমিষের বাহার যদি সাজাতে হয় আমিষ স্পেশ্যালিস্টদের দিয়ে, তা হলে ৫০০ লোকের আয়োজনে প্লেটপিছু ৯০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে। হাজার লোকের ক্ষেত্রে সেটা আর একটু কমে ৭৫০ টাকায় দাঁড়াবে। তার মধ্যেও স্টার্টারের নানা রকম কবাব বা ফ্রাই, মেন কোর্সের চিংড়ি-ভেটকি-মাটন, ডেজার্টের তিন রকম মিষ্টি-সহ পুরো প্যাকেজটাই থাকছে।
এই দৃশ্য আবার কবে দেখা যাবে জানা নেই। —ফাইল চিত্র।
রাজেশ গণপতি বা ৬ বালিগঞ্জ প্লেসের মতো ক্যাটরাররা এই মরসুমে ৪০ থেকে ৫০টা করে বরাত পেয়েই থাকে বলে খবর। কোন অনুষ্ঠানে কত জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়, সে সংখ্যাটা বাড়া-কমা করে। তবে সব মিলিয়ে এই সংস্থাগুলো কত টাকার ব্যবসা করে থাকে এই মরসুমটায়, তা আঁচ করা শক্ত নয়। মোট উপার্জনের ৩০ শতাংশ লাভও অনায়াসেই সম্ভব। কিন্তু লকডাউনের জেরে এ মরসুমে আপাতত কোনও বরাত নেই। ফলে ক্ষতির অঙ্কটা ক্যাটারারদের ঘরেও হানা দিচ্ছে বড় আকারেই। কারণ পরিকাঠামো এবং স্থায়ী কর্মীদের বেতন বাবদ খরচটা নেহাৎ কম নয় প্রতি মাসে।
মধ্যবিত্ত বিয়ের ক্ষেত্রেও প্রভাবটা একই রকম। বাগুইআটি, কেষ্টপুর, তেঘরিয়া, কৈখালি এলাকায় ব্যবসা করেন ফ্লোরিস্ট (ফুল ও বিয়েবাড়ির সাজসজ্জা) দেবু শিকদার। একটা ভেন্যুর গোটা ব্যবস্থাপনাটাই তিনি নিজে করেন। আরও ৪-৫টা ভেন্যুতে শুধু ফুল এবং সাজসজ্জার কাজটা সামলান। সেই দেবু শিকদার জানাচ্ছেন, এই সময়টায় এক একটা ব্যাঙ্কোয়েটে মাসে ৭-৮টা করে বুকিং থাকে। অর্থাৎ তিন-সাড়ে তিন মাসে কম করেও ২০টা বুকিং তো বটেই। কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি। ৫-৬টা ভেন্যুর কাজ মিলিয়ে এই মরসুমে ১০০টার বেশি বরাত সামলাতে হয় তাঁকে। দেবুর কথায়, ‘‘আমাদের ব্যবসা তো সারা বছরের ব্যবসা নয়, মরসুমি ব্যবসা। তাই এই মরসুমগুলোর দিকেই আমাদের সারা বছর তাকিয়ে থাকতে হয়, শীতের মরসুমে কাজ ভালই হয়েছে। কিন্তু এই মরসুমটা পুরো ফাঁকা। একদম বাড়িতে বসে রয়েছি। বছরের অর্ধেকটা ব্যবসাই মার খেয়ে গেল বলতে পারেন।’’
মধ্যবিত্ত বিয়েগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবসার অঙ্কটা অনেকটাই ছোট। এ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান ভবনের ভাড়া, ডেকরেটরের খরচ, ভিতরের ও বাইরের সাজসজ্জা (ফুল ও শোপিস), আলোকসজ্জা ও অন্যান্য পরিকাঠামো মিলিয়ে ১ লক্ষ টাকার আশেপাশেই খরচটাকে বেঁধে রাখতে চান গৃহস্থ। কারও ক্ষেত্রে লাখের একটু কম, কারও ক্ষেত্রে লাখের সামান্য বেশি। লাভের অঙ্ক সেখানেও ৩০ শতাংশের আশেপাশেই থাকে। ভেন্যুর মালিক, ডেকরেটর, ফ্লোরিস্ট-সহ প্রত্যেকেই নিজেদের বিনিয়োগের অনুপাতে লভ্যাংশের ভাগ পেয়ে যান। এ বার সে সব হিসেব-নিকেশ পুরোপুরি শিকেয় তোলা।
ডেকরেটর তথা ক্যাটরার দীপক নাথ কাজ করেন ভিআইপি রোড সংলগ্ন এলাকায়, মধ্য কলকাতার কোনও কোনও পাড়াতেও। দীপকের কথায়, ‘‘কাজ তো কিছুই নেই। উল্টে ঘর থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। স্টোরের ম্যানেজার, অন্যান্য কর্মী, কুক, দু’জন বাঁধা ভ্যানওয়ালা— এঁদের মাইনেটা তো আমাকে দিতেই হচ্ছে।’’ আবার কবে ব্যবসা শুরু হবে, জানেন না দেবু-দীপকরা। তত দিনে ঘর থেকে কতটা টাকা বেরিয়ে যাবে, সে হিসেব করেই মাথায় হাত পড়ার জোগাড় হচ্ছে।
বড়সড় ধাক্কার মুখে পড়েছে গয়নার ব্যবসাও। এই বিয়ে মরসুমে সোনার গয়নার ব্যবসা আকাশ ছোঁয় প্রতি বছর। নামী জুয়েলারি চেন থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ের জুয়েলার, লক্ষ্মীর কৃপাদৃষ্টি পড়ে সবার উপরেই। যাঁর যেমন ব্যবসার আকার, তাঁর ঘরে সেই অনুপাতে লেনদেন। লকডাউনে সে লেনদেনেও তালা পড়ে গিয়েছে।
পি সি চন্দ্রের সঙ্গে কাজ করেন সোনার কারবারি বৈদ্যনাথ রায়। তিনি বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির প্রাক্তন সভাপতিও। বৈদ্যনাথের কথায়, ‘‘যত বড় কারবার, তত বড় লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে। যাঁদের ছোটখাট জুয়েলারি দোকান বা যাঁরা নিজেরাই কাজ করেন, তাঁদের অন্তত কর্মীদের বেতন দেওয়ার কথা ভাবতে হয় না। কিন্তু বড় বড় জুয়েলারি চেনকে সেই ব্যবস্থাটা তো করতেই হচ্ছে। সেটা খুব বড় আর্থিক চাপ।’’
বড় জুয়েলারি চেন বা খুব নামী জুয়েলাররা এই বিয়ে মরসুমে কী রকম ব্যবসা করেন? বৌবাজার সোনাপট্টির অভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই মরসুমে বড় জুয়েলাররা এক এক জনে অন্তত ১০০ ভরি সোনার গয়না তো বেচেই থাকেন। এক স্বর্ণশিল্পীর কথায়, ‘‘৪৫ হাজার টাকা ভরি ধরলে সাড়ে চার কোটি টাকার ব্যবসা। সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে খুব কম করেও ৫ থেকে ১০ শতাংশ লাভ তো থাকেই। এ বার কিচ্ছু নেই। উল্টে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। বড় জুয়েলারদের পক্ষে খুব বড় ধাক্কা।’’
লকডাউনের জেরে যে সব পরিবার পিছিয়ে দিয়েছে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান, তাঁরা তো দুশ্চিন্তায় রয়েইছেন। কিন্তু যাঁদের হাতে আয়োজন ঝলমল করে ওঠার কথা ছিল, তাঁরা আরও বড় দুশ্চিন্তায়। মরসুম থাকতে থাকতে করোনার বিপদ কেটে যাবে, সে আশা আপাতত আর কেউই করছেন না। পরের মরসুমের কথাই ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু লোক-লস্কর নিয়ে কাজ, নির্জলা ঘরে বসে থেকে তত দিন পর্যন্ত সব টানা যাবে কী ভাবে? ভেবে উঠতে পারছেন না অনেকেই।
আরও পড়ুন: বাংলা সাহিত্যে বিকল্প আদর্শের সন্ধানী, বিরল ভাবুক দেবেশ রায়
তবে আশার আলোও রয়েছে। বিয়ের আকালেও কিন্তু ধাক্কা লাগেনি অনলাইন ম্যাট্রিমনি ব্যবসায়। এবিপি ওয়েডিংসের সিইও ললিত মস্তা বলছেন, ‘‘লকডাউনের জেরে আমাদের রিটেল আউটলেট বা এজেন্ট নির্ভর ব্যবস্থাটা ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু কলিং চ্যানেলের মাধ্যমে যাঁরা যোগাযোগ করেন, তাঁদের কোনও অসুবিধা হয়নি। বরং এই সময়টায় আমাদের সাইট এনগেজমেন্ট অনেক বেড়ে গিয়েছে। আগের চেয়েও বেশি লোক এখন সাইটে ঢুকছেন।’’
এটা কী ভাবে ঘটছে? ওয়াকিবহাল মহলের ব্যাখ্যা— লকডাউনে অধিকাংশ মানুষই ঘরবন্দি, তাঁদের অনেকেই এই অবকাশটাকে কাজে লাগিয়ে পাত্রপাত্রী খুঁজে রাখতে চাইছেন। যে সব পরিবারে বিবাহযোগ্য ছেলে বা মেয়ে রয়েছেন, সেই সব পরিবার ঘরে বসে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট দেখে এই সময়টায় পছন্দসই পাত্র বা পাত্রীর খোঁজ চালাতেই পারেন। আর কিছু দিন পরে খুঁজলেও হয়তো চলত, কিন্তু অবসর যখন কিছুটা পাওয়ায় গিয়েছে, খোঁজ শুরু করতে দোষ কী?
বিয়ের বাজার আশার ক্ষীণ রশ্মি দেখতে চাইছে সেখানেই। ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েবসাইট ঘিরে যদি উৎসাহ বাড়ে, তা হলে লকডাউন মিটলে কিছুটা বেশি সংখ্যাতেই ফুটতে পারে বিয়ের ফুল, এমনটা ধরে নিচ্ছেন কেউ কেউ। আর যে সব বিয়ে বা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান আটকে গেল, লকডাউনের পর বিয়ের মরসুম এলে সেগুলোর আয়োজনও হবেই। সব কিছু মিলিয়ে যদি সামলে নেওয়া যায় ধাক্কাটা, টিকে থাকার লক্ষ্যে এমনই আশায় বুক বাঁধতে চাইছে ওয়েডিং ইন্ডাস্ট্রি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy