ধৃত: আলিপুর আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হচ্ছে অভিযুক্ত অভিষেককুমার পাণ্ডেকে। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অভিষেককুমার পাণ্ডের সঙ্গে বেশ কয়েক বছরের প্রেম। বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় আচমকা একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যে পড়ে প্রায় বাধ্য হয়েই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা বলে তো আর নিজের ‘হবু স্বামী’কে জেলে পাঠানো যায় না! তাই শনিবার রাতের ঘটনার পর থেকে পুলিশকে তিনি কী কী বলেছেন, পুলিশই বা তাঁকে কী কী জিজ্ঞাসা করেছে— তার সব তথ্যই ফোন করে অভিষেককে দিয়ে যাচ্ছিলেন খোদ ‘নির্যাতিতা’ তরুণী!
মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পরে অভিষেককে জেরা করে এমনটাই জেনেছেন তদন্তকারীরা। তবে সেই তথ্য যাচাই করার জন্য নির্যাতিতা তরুণীকে আর এক প্রস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার অভিষেকের মা, জামাইবাবু এবং ওই নির্যাতিতা তরুণীর সঙ্গে কথা বলেই গোয়েন্দারা বুঝে যান যে, দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। সামনেই ওই তরুণীর সঙ্গে অভিষেকের বিয়ে। তাই সব দিক সামাল দিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েই পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন ওই তরুণী।
অভিযোগকারিণীর সঙ্গেই যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে, জেরার মুখে অভিষেকও জানিয়েছে সে কথা। ওই তরুণীর সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি ফ্ল্যাট কেনারও পরিকল্পনা করছিল সে। কিন্তু লকডাউনের আগে আগের চাকরি ছেড়ে অভিষেক নতুন একটি চাকরিতে ঢুকেছিল। তাই সে ঠিক করে, ফ্ল্যাট আরও কিছু দিন পরে কেনা হবে। এ নিয়েই দু’জনের মধ্যে মতপার্থক্যের জেরে কথা কাটাকাটি হয়। শনিবার গাড়ি নিয়ে বেরোনোর আগে দু’জনের কথা বন্ধ ছিল বলে অভিষেকের দাবি।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে মেট্রো চালু, কোথায় কীভাবে পাবেন ই-পাস
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর ‘রাবীন্দ্রিকরা’ আগে নিজের বাড়ির পাঁচিলটা ভাঙুন
আরও পড়ুন: অনেকে এখনও এগিয়ে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস
অভিষেকের আরও দাবি, শনিবার হবু স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতেই সন্ধ্যার পরে তাঁকে নিয়ে লং ড্রাইভে বেরিয়েছিল সে। ইচ্ছে ছিল, গাড়িতে ঘুরতে ঘুরতেই আলোচনা করে একটা সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর। সেই মতো ওই তরুণীকে নিয়ে ঘুরতে বেরোলেও গাড়িতে ফের ঝগড়া বেধে যায় দু’জনের। অভিষেকের অভিযোগ, ওই সময়ে তরুণী তার হাতের আঙুল কামড়ে দেন। তাতে রেগে গিয়ে সে-ও কয়েকটা চড়-থাপ্পড় মারে। অভিষেকের দাবি, এর আগেও দু’জনের মধ্যে এ রকম ঝগড়া হয়েছে। ওই তরুণী রেগে গিয়ে মাঝ রাস্তায় নেমে গিয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে। ধৃতের বক্তব্য, শনিবার রাতেও সে রকমই ঘটেছিল। দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হলে এক সময়ে তরুণী গাড়ি থেকে নেমে যেতে চান। অভিষেক আনন্দপুরের আর আর প্লটের কাছে গাড়ি থামায়। কিন্তু তার আগেই নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় ও দীপ শতপথীর গাড়ি সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল।
তখনই ওই দম্পতি তরুণীর চিৎকার শুনতে পান। তাঁরা ভাবেন, গুরুতর কিছু ঘটেছে। তাই তরুণীকে বাঁচাতে নিজেদের গাড়ি থেকে থেমে অভিষেকের গাড়ির দিকে এগোন নীলাঞ্জনা। অভিষেকের দাবি, ওই সময়ে তরুণীকে গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে সে এবং গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে চায়। কিন্তু রাগের বশে তরুণী সেখানেই হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ছিটকে পড়ে যান। গাড়ির দরজায় আটকে তাঁর জামা ছিঁড়ে যায়। ভয় পেয়ে পালাতে যায় অভিষেক। তখনই নীলাঞ্জনার পায়ের উপরে তার গাড়ির চাকা উঠে যায়। দুর্ঘটনার বিষয়টি বুঝতে পেরে আরও জোরে গাড়ি ছোটায় অভিষেক।
বাড়ি গিয়ে মাকে সব জানানোর পরে তরুণীর চাবি ও মোবাইল তাঁর নয়াবাদের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেয় অভিষেক। ওঠে একটি হোটেলে। পরে ওই তরুণী তাকে অভিযোগ দায়ের থেকে শুরু করে ভুল তথ্য দেওয়ার সব কথা ফোনে জানান। সোমবার পুলিশ অভিষেকের আসল নাম জানার পরে তা-ও জানান তরুণী। তখনই হোটেল ছেড়ে প্রথমে আইনজীবীর কাছে ও পরে দমদমে যায় অভিষেক। সেখানেই এক মেসে লুকিয়ে ছিল সে। কিন্তু তার আগেই গোয়েন্দারা জিপিএস ট্র্যাক করে অভিষেকের অবস্থান জেনে যান।
অভিষেককে বুধবার আদালতে তোলা হয়। সরকারি কৌঁসুলি শুভেন্দু ঘোষ জানান, ধৃতকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তার গাড়ি থেকে নির্যাতিতার বিভিন্ন জিনিস মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy