Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape and Murder

প্রতিবাদের জোয়ারে খাঁ খাঁ করছে কুমোরটুলি

দুর্গাপুজোর আগে কুমোরটুলির এই চেনা ছবিটা এ বার উধাও। দুর্গাপুজোর বাকি এক মাসের সামান্য বেশি সময়। সামনেই রয়েছে গণেশ, বিশ্বকর্মা পুজো।

ফাঁকা: ভিড় নেই কুমোরটুলির অলিগলিতে।

ফাঁকা: ভিড় নেই কুমোরটুলির অলিগলিতে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

নিজস্বী তুলতে গিয়ে প্রায় অসুরের ঘাড়ে উঠে পড়া তরুণী। কুমোরপাড়ার সরু গলিতে প্লাস্টিকে মোড়া প্রতিমাদের পিছনে রেখে শখের আলোকচিত্রীদের মডেল ফোটোশুট। তাঁদের ‘উপদ্রবে’ বাধ্য হয়ে প্রতিমা তৈরির ঘরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চালু। বায়না দিতে এসে দোকানে দোকানে ঘোরা পুজো উদ্যোক্তাদের দল। সপ্তাহান্তে প্রতিমা দেখতে আসা উৎসাহী মানুষজন আর আলোকচিত্রীদের ভিড়ে পা ফেলা দায় সরু অলিগলিতে। আর এ সবের মধ্যেই অক্লান্ত হাতে মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করে চলেন মৃৎশিল্পী ও তাঁদের কারিগরেরা।

প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে কুমোরটুলির এই চেনা ছবিটা এ বার উধাও। দুর্গাপুজোর বাকি এক মাসের সামান্য বেশি সময়। সামনেই রয়েছে গণেশ, বিশ্বকর্মা পুজো। তার আগে কুমোরটুলির স্টুডিয়োগুলিতে গণেশ ও দুর্গার সহাবস্থান দেখা গেলেও ভিড়ের দেখা নেই। আর জি কর-কাণ্ডের পর থেকেই প্রতিবাদের জোয়ারে ভাসছে শহর। পুজো এগিয়ে এলেও শহরবাসীর এ বার মন নেই কুমোরটুলিতে। তাই সপ্তাহান্তেও খাঁ খাঁ কুমোরপাড়া। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলছেন, ‘‘আর জি করের নৃশংস ঘটনার বিচার আমরা সবাই চাইছি। যে ভাবে শহরে প্রতিবাদের ঢল নেমেছে, তার পাশে আছে কুমোরটুলিও। সেই জন্যই এ বার এখানে ক্যামেরা হাতে ছেলেমেয়েদের ভিড় নেই। এমনকি, সপ্তাহান্তেও শুনশান থাকছে কুমোরপাড়া। সকলেই মিছিলে পা মেলাচ্ছেন, প্রতিবাদ করছেন।’’

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এ বছর রথের সময়ে ভাল বায়না আসায় উৎফুল্ল ছিলেন তাঁরা। কিন্তু অগস্টের প্রথম দিকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃত্যু ও সেই ঘটনায় বিচারের দাবিতে শহর উত্তাল হওয়ার পর থেকেই লোকের আনাগোনা কমেছে কুমোরটুলিতে। প্রতিমার সাজ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গৌতম দাসের কথায়, ‘‘তিন সপ্তাহ ধরে কুমোরটুলি প্রায় ফাঁকা। কাজ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মধ্যে পুজো নিয়ে উৎসাহটা এ বার নেই। কয়েক সপ্তাহে তেমন বায়নাও আসেনি। ১৫ অগস্ট বা জন্মাষ্টমীর সময়ে কোনও নতুন বায়নাই হয়নি এ বার।’’

আর জি কর-কাণ্ডের পরে অনেকেই সমাজমাধ্যমে এ বছর পুজো বন্ধ করার ডাক দিয়েছিলেন। পুজো মণ্ডপ পরিক্রমা বর্জনের কথাও বলেছেন কেউ কেউ। পুজো বন্ধের কাঁটা খচখচ করলেও কুমোরটুলি অবশ্য আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটবে না। কার্তিক বলেন, ‘‘পুজোর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ পরিবারের রোজগার জড়িয়ে। পুজো বন্ধ করলে তো সব শেষ হয়ে যাবে! করোনার সেই ভয়ঙ্কর সময়টা আমরা দেখেছি। চাই না, সেই পরিস্থিতি আবার আসুক।’’

তবে, আর জি কর-কাণ্ডের জেরে অনেক পুজো উদ্যোক্তাই যে খানিক থমকে গিয়েছেন, তা জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। শিল্পী সমীর পাল বলেন, ‘‘সোদপুর থেকে এক উদ্যোক্তা এসেছিলেন দু’দিন আগে। বলছিলেন, তাঁরা প্রথমে পুজো না-করার কথা ভেবেছিলেন। কারণ, মৃত চিকিৎসক-পডুয়া তো সোদপুরেরই মেয়ে। তবে পরে তাঁরা ঠিক করেন, কোনও রকমে নমো নমো করে পুজোটা সারবেন। তাই অনেক দেরি করেই, ছোটখাটো কোনও প্রতিমার খোঁজে কুমোরটুলিতে এসেছেন।’’ এত দেরি করে প্রতিমার বায়না দিতে এলে হয়তো খালি হাতেই ফিরতে হতে পারে উদ্যোক্তাদের— সে কথাও বলছেন শিল্পীরা।

বিচারের দাবি প্রতিমার বায়নায় তেমন হেরফের ঘটাতে না পারলেও খানিক ধাক্কা খেয়েছে আনুষঙ্গিক জিনিসের ব্যবসা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক
রণজিৎ সরকারের কথায়, ‘‘আগে অনেকেই কুমোরটুলিতে এসে টুকটাক জিনিস কিনে নিয়ে যেতেন। পুজোর উপহার হিসাবে সেই সব হাতের কাজের চাহিদা বেশ ভালই থাকে প্রতি বছর। কিন্তু এ বার সেই সব বিক্রিবাটা প্রায় বন্ধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kumortuli Durga Puja 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE