E-Paper

জ্যাজ়ের মায়ায় পার্ক স্ট্রিটের রূপকথাকে কুর্নিশ 

কিবোর্ড, পিয়ানোয় ঝঙ্কার তোলা লুই ব্যাঙ্কস ও পার্ক স্ট্রিট একাকার ছিল একদা। প্রায় পাঁচ দশকের পারে ২০২৫-এর প্রথম শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় ফের পার্ক স্ট্রিটের দখল নিলেন তিনিই।

ট্রিঙ্কাজ়ে কিবোর্ড বাজালেন লুই ব্যাঙ্কস। সঙ্গে গাইলেন ঊষা উত্থুপ।

ট্রিঙ্কাজ়ে কিবোর্ড বাজালেন লুই ব্যাঙ্কস। সঙ্গে গাইলেন ঊষা উত্থুপ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:১১
Share
Save

তিনি নিজেই পার্ক স্ট্রিটের সোনালি অতীতের মূর্তিমান কালখণ্ড। আবার বিশ্ব মঞ্চে পার্ক স্ট্রিটের দিগন্ত ছোঁয়া উড়ানেরও একটি নাম তিনি। কিবোর্ড, পিয়ানোয় ঝঙ্কার তোলা লুই ব্যাঙ্কস ও পার্ক স্ট্রিট একাকার ছিল একদা। প্রায় পাঁচ দশকের পারে ২০২৫-এর প্রথম শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় ফের পার্ক স্ট্রিটের দখল নিলেন তিনিই।

ব্যাঙ্কস একা নন। প্যাম ক্রেন, ডন সায়গলদের কণ্ঠের মাদকতা, কার্লটন কিটোর গিটার, পিটার সালদানহার বেস, জেমস ডায়াজ়ের ট্রাম্পেট সবই ‘লুই ব্যাঙ্কস ব্রাদারহুড’ আখ্যা পেয়েছিল সে-কালের ব্লু ফক্সে। স্যাক্সোফোনের ব্র‍্যাজ গঞ্জালভেস বা পার্ক স্ট্রিটের প্রতিবেশী ট্রিঙ্কাজ়ে নিয়মিত শিল্পী উষা আইয়ারের সঙ্গে গানবাজনাতেও আকছার শামিল হতেন ওঁরা।

ব্লু ফক্স আর নেই! ট্রিঙ্কাজ়েই ফের আজকের উষা উত্থুপের সঙ্গে দেখা হল ব্যাঙ্কসের। নিজেকে ট্রিঙ্কাজ়ের আদ্যিকালের ঝাড়বাতির সমবয়সি বলা উষা মজা করলেন, এখন বছর তিরাশির ব্যাঙ্কসের হাঁড়ির খবর তিনি যা জানেন, ওঁর ছেলেরাও কিচ্ছু জানে না! সদ‍্যপ্রয়াত জ়াকির হুসেনের বন্ধু বা ভারতীয় জ্যাজ় সঙ্গীতের ‘গডফাদার’ ব্যাঙ্কসকে এ বার অন‍্য ভূমিকায় দেখল কলকাতা। সদ‍্য সমাপ্ত ‘বেঙ্গল বিয়েনেল’-এর আসরে ব্যাঙ্কসের আঁকা ছবির উপস্থাপনা মেলে ধরে ট্রিঙ্কাজ়। ব্যাঙ্কস বরাবর তাঁর ছোটবেলার দার্জিলিংয়ের টুকরো ছবি, পোর্ট্রেট এঁকেছেন। প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির বিমূর্ততায় জ্যাজ় পিয়ানোরই মায়া। ব্যাঙ্কসের ৩৫টি বাছাই ছবির সঙ্গে তাঁর রচিত জ্যাজ় মূর্ছনার যুগলবন্দিতে দেখা গেল ডিজিটাল আর্ট উপস্থাপনা। তাতেও পুরনো পার্ক স্ট্রিটেরই ছায়া। ব্যাঙ্কসের জন্যই ‘বেঙ্গল বিয়েনেল’-এও মুছে গেল ছবি আর সঙ্গীতের সীমানা।

কবীর সুমনের গানের গিটার হাতে কলকাতায় গাইতে আসা নেপালি ছেলেটা তিনি নন। তবে ব্যাঙ্কসের আসল নামও ডম্বরবাহাদুর বুডাপ্রীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কলকাতায় আগত আমেরিকান জ্যাজ় শিল্পীর দলে বাবা ট্রাম্পেট বাজাতেন। ব্যাঙ্কস কলকাতায় জন্মান। তবে ওঁরা দার্জিলিংয়ে সরে যান। যৌবনে ব্লু ফক্সে গানবাজনার সময়ে অবশ‍্য লুই ব্যাঙ্কসের পৃথিবী ছিল শুধুই পার্ক স্ট্রিট। কিন্তু এখানেই পার্ক স্ট্রিটের মুকুটের হীরের টুকরোটি চিনে নেন আর ডি বর্মণ।

সেটা ১৯৭৭। ‘মূর্তি’ ছবির নায়ক শশী কপূরের পিয়ানো বাদনের কয়েকটি দৃশ্যের জন‍্য শিল্পী খুঁজছিলেন আরডি। তাতেই ব্যাঙ্কসের জীবন পাল্টে গেল। একান্ত আড্ডায় ব্যাঙ্কস অকপট, ‘‘এক জন বেয়ারা মারফত আর ডি আমায় ডাকলেন, ওঁর নাম বললেন কিন্তু আমি তখম ওঁকে চিনতামও না! এতটাই পরিপূর্ণ ছিলাম আমরা, আমাদের পার্ক স্ট্রিটের গানবাজনায়!’’

তখন দুর্লভ ঢাউস ইলেকট্রিক পিয়ানোও আমেরিকা থেকে নিয়ে এসেছেন ব্যাঙ্কস। রিকশায় সেটা কোলে নিয়ে ইলিয়ট রোডে বৌ লোরেনের বাড়িতে ফিরতেন রাতে। পিয়ানো কোলে কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতেও বেঁচেছেন। পার্ক স্ট্রিট, ব্লু ফক্স জীবনসঙ্গিনী লোরেনকেও চিনিয়েছে ব্যাঙ্কসকে। তবে বলিউড আরও বড় জানলা খোলে তাঁর জন‍্য। ৮০-র দশকে দূরদর্শনের ‘ফ্রিডম রান’ বা ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’র সঙ্গীত রচনায়ও ইতিহাসে ঢুকে পড়েন ব্যাঙ্কস। ২০০৯-এ গ্র‍্যামি শিরোপার কাছেও এসেছিলেন।
শনিবার সন্ধ‍্যায় ট্রিঙ্কাজ়ে সেই ব্যাঙ্কস তাঁর সুর ‘হাওড়া ব্রিজ’ শোনালেন। উষা উত্থুপের সঙ্গে গল্প, গানবাজনায় মাতলেন। আর পার্ক স্ট্রিট থেকে ব্লু ফক্স মুছে যাওয়ার দুঃখ তাঁকে ছুঁয়ে থাকল প্রায় পুরোটা সময়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Singer ParkStreet

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।