Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
SSKM

দেড় লক্ষ লিটারের জলাধারই এসএসকেএমের বিপদে পরিত্রাতা

শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরই দাবি, অগ্নি-সুরক্ষার জন্য পাম্প ও জলাধার ঠিক রয়েছে কি না, তা জানতে দু’-তিন সপ্তাহ অন্তর ‘মক ড্রিল’ হয়।

ঘটনাস্থলে দমকল বিভাগের ইঞ্জিন।

ঘটনাস্থলে দমকল বিভাগের ইঞ্জিন। — ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

রক্ষা করেছে দেড় লক্ষ লিটারের ভূগর্ভস্থ জলাধার। যার কারণে এসএসকেএমের অগ্নিকাণ্ডে জলসঙ্কট হয়নি। জরুরি বিভাগের দোতলার সিটি স্ক্যান ও ইউএসজি রুমের আগুন নেভাতে করিডরে থাকা জলের পাইপলাইন সহজেই ব্যবহার করা গিয়েছিল। তাতেই অনেকটা সুবিধা হয়েছে বলে মত দমকলকর্মীদের।

বৃহস্পতিবারের ওই অগ্নিকাণ্ড থেকে বোঝা গেল, হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই জলের বন্দোবস্ত থাকা কতটা জরুরি। প্রশ্ন হল, শহরের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কি এই ধরনের ব্যবস্থা আছে? রয়েছে বলেই দাবি করলেন এনআরএস, আর জি কর এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উঠে আসছে আরও বড় প্রশ্ন। অগ্নিকাণ্ড বা কোনও বিপর্যয়ের সময়ে রোগীদের ওয়ার্ড খালি করার প্রশিক্ষণ বা মহড়া কি আদৌ কোথাও হয়?

শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরই দাবি, অগ্নি-সুরক্ষার জন্য পাম্প ও জলাধার ঠিক রয়েছে কি না, তা জানতে দু’-তিন সপ্তাহ অন্তর ‘মক ড্রিল’ হয়। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড বা বিপর্যয়ে রোগী বার করে আনার মহড়া শেষ কবে শহরের হাসপাতালে হয়েছে, মনে করতে পারছেন না কেউই। শহরের একটি হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জলাধার থেকে পাইপলাইনগুলিতে ঠিক মতো জল সরবরাহ হচ্ছে কি না, তা দেখতে মহড়া হয়। কিন্তু বিপর্যয়ে রোগী বার করে আনার মহড়া তেমন হয় না। কারণ তা করায় সমস্যা রয়েছে। তবে কোন পথ বা সিঁড়ি দিয়ে বেরোতে হবে, তা মক ড্রিলে দেখানো হয়।’’

যদিও ২০১৬ সালে তৈরি ‘ন্যাশনাল হসপিটাল সেফটি গাইডলাইন’-এ গুরুত্ব দিয়ে রয়েছে বিপর্যয়ের সময়ে ওয়ার্ড ফাঁকা করার মহড়ার কথা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা অথরিটির তরফে ওই নির্দেশিকা তৈরিতে অংশ নেওয়া চিকিৎসক তমরীশ কোলে বলেন, ‘‘বছরে অন্তত এক বার ওয়ার্ড ফাঁকা করার মক ড্রিল প্রয়োজন। বিপর্যয়ের সময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।’’

তিনি জানাচ্ছেন, অগ্নিকাণ্ড বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ওয়ার্ড থেকে রোগীদের বার করার তিনটি পর্ব রয়েছে। কিছু রোগী নিজেরাই বেরোতে পারেন। কিছু রোগীকে হুইলচেয়ার বা স্ট্রেচারে বার করতে হবে। আইসিইউ-তে থাকা রোগীদের বার করাই জটিল। তাই আধিকারিক, কর্মী, চিকিৎসক, নার্স— সকলের সেই প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। এ বিষয়ে তেমন কিছু না বললেও, স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর আগুন নেভানোর মক ড্রিল সব হাসপাতালেই করা হয়।’’ পিজির ঘটনার পরেই সমস্ত সরকারি হাসপাতালের ফায়ার সেফটি অডিটের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

সূত্রের খবর, ঘটনার দিন মিনিট দশেকের মধ্যে স্নায়ু-শল্যের জরুরি চিকিৎসার ব্লক বা ‘এনসিবি’ পুরো খালি করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন ব্লকে রোগীদের ভাগ করে পাঠাতে গিয়ে কিছুটা থই হারিয়ে ফেলেছিলেন কর্তৃপক্ষ। আপাতত ট্রমা কেয়ারেই চলবে এনসিবি-র পরিষেবা। সিটি স্ক্যান যন্ত্রটির কতটা ক্ষতি হয়েছে, দেখবে প্রস্তুতকারী সংস্থা। অন্য দিকে, স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুক্রবারই নতুন একটি ইউএসজি যন্ত্র পেয়েছে পিজি।

স্থির হয়েছে, আগের জায়গায় ইউএসজি পরিষেবা থাকবে না। মেন বিল্ডিং, স্ত্রীরোগ, ট্রমা কেয়ার এবং জরুরি বিভাগের একতলায় ইউএসজি পরিষেবা মিলবে। বিভিন্ন বিভাগকে ওই চারটি জায়গায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দেখা যায়, জরুরি বিভাগের ভবনের দোতলা ছাড়া বাকি সব ক’টি তলাতেই পরিষেবা পুরোদমে চলছে। ওই ভবনে অক্সিজেন সরবরাহের লাইনও ঠিক রয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে সরবরাহকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার এমআরআই করতে না পেরে ফিরে যাওয়া রোগীদের ফোন করে ট্রমা কেয়ারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে ক্যান্টিন ভেঙে বছর দুয়েক আগে যে ভূগর্ভস্থ জলাধার তৈরি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, বিপদে পরিত্রাতা হল সেই জলধারই। এমনটাই মনে করছেন পিজি কর্তৃপক্ষ। তৈরির পরে এই প্রথম সেটির পুরো ব্যবহার হল।

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Fire Accident Fire Brigade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy