কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসব ঘিরে বিতর্ক! বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নোটিস দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁদের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র ১২ এবং ১৩ মার্চ দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বসন্ত উৎসব পালন করতে পারবেন। এ দিকে, তিনটি পৃথক গোষ্ঠী সেখানে বসন্ত উৎসব পালনে উদ্যোগী হয়। সেই তিন পক্ষের মধ্যে দু’টি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠী। অন্য পক্ষ এসএফআই।
টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই মঙ্গলবার বসন্ত উৎসব পালনে উদ্যোগী হয়। এ নিয়ে অন্যতম উদ্যোক্তা অভিরূপ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, তাঁরা এ দিন উৎসব পালন করবেনই। টিএমসিপি-র আর কোনও বসন্ত উৎসব হচ্ছে না। রেজিস্ট্রারের নোটিসের বিষয়ে তাঁর সাফ কথা, ‘‘ওই নোটিসের কী মূল্য আছে? যিনি নোটিস দিয়েছেন, তাঁরই বা কী মূল্য?’’ তৃণমূলের অপর গোষ্ঠীর নেতা রনি ঘোষ আবার বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা আমাদের পূর্ব-নির্ধারিত বসন্ত উৎসব বুধবার করব।’’ এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে কাল, বৃহস্পতিবার। অন্যতম উদ্যোক্তা মাল্যবান গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘গত বারের মতো এ বারও আমরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’’
এ দিন বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, ‘‘কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ১২ এবং ১৩ মার্চ ছাড়া কোনও দিনই আমরা দোল উৎসব করতে দেব না। এ বিষয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এ দিন কলেজ স্ট্রিটে কোনও দোল উৎসব হয়নি। তবে, অভিরূপের বক্তব্য, তাঁদের তরফে উৎসব পালিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক কোনও অনুষ্ঠান হয়নি। তবে, টিএমসিপি সমর্থকেরা আবির খেলেছেন, রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মালা দিয়েছেন। এর বেশি করলে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আর এক টিএমসিপি গোষ্ঠী যে কর্তৃপক্ষের বলে দেওয়া নির্দিষ্ট দিনেই অনুষ্ঠান করবে, সে বিষয়টি ধর্তব্যেই আনতে চাননি অভিরূপ। উল্টে তাঁর বক্তব্য, এসএফআই-কে ‘বেআইনি’ অন্তর্বর্তী উপাচার্য অনুমতি দেন। কিন্তু তাঁদের দেন না। তিনি বলেন, ‘‘এ বার এই বেআইনি উপাচার্য এসএফআইয়ের ঝান্ডা ধরুন।’’
অন্তর্বর্তী উপাচার্য জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে কেউ রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে অনুষ্ঠান করছেন বলে জানাননি। তিনি বলেন, ‘‘খবর পেয়েছি, রাজাবাজার ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের নাম করে টিএমসিপি বসন্ত উৎসব করতে চাইছে। সাত বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের অস্তিত্ব নেই। এই পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে জানিয়েছি, ওই উৎসব যেন করতে দেওয়া না হয়। আলিপুর ক্যাম্পাসে পরীক্ষা চলছে বলে মাইক ব্যবহার না করে বসন্ত উৎসব করতে বলা হয়েছে। তবে, কোথাও রাজনৈতিক ব্যানার লাগানো যাবে না।’’ এ দিন বিহারীলাল কলেজ ক্যাম্পাসে দোল উৎসব হয়। উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী উপাচার্য স্বয়ং।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)