Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

ভবিষ্যতের হাত ধরেই নমাজে হাজির দৃষ্টিহীন

কথায় কথায় ওরা জানতে পারে বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধের নাম কামরে আলম। তাঁর বাড়ি ফিয়ার্স লেনে। টিপু সুলতান মসজিদে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তিনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুমন বল্লভ ও আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪২
Share
Save

মাঝরাস্তায় অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ। পার হওয়ার জন্য দু’পা এগোতেই পাশ দিয়ে হুশহাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল গাড়ি। দূর থেকে দেখতে পেয়েছিল একাদশ শ্রেণির দুই পড়ুয়া। রবিবারের দুপুরে শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে দুই বন্ধু আকাশ সিংহ এবং ভূদেব যাদব বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছিল। কিম্তু বৌবাজারে এমন দৃশ্য দেখে পথ বদলে ওরা এগিয়ে যায় বৃদ্ধের কাছে। জানতে চাইল তাঁর গন্তব্য। এর পরেই বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধের হাত শক্ত করে ধরে দু’জনে তাঁকে পৌঁছে দিয়ে যায় টিপু সুলতান মসজিদে।

যদিও এর কোনও কৃতিত্ব নিতে রাজি নয় দুই পড়ুয়া। এক জন দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে সাহায্য না করে কী ভাবে কেউ চলে যেতে পারে, সেটাই ভাবতে পারছে না বড়বাজারের শ্রী জৈন শ্বেতাম্বর তেরাপন্থি বিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। আকাশ বলে, ‘‘এমজি রোডে স্যরের কাছে কমার্স পড়ে বি বা দী বাগের বাড়িতে ফিরছিলাম। রোজ একসঙ্গেই আমরা ফিরি। বৌবাজার মোড়ের কাছে পৌঁছে দেখি একাই ওই বৃদ্ধ রাস্তা পেরোনোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দিশা পাচ্ছেন না। বুঝতে পারলাম ওঁর দেখতে সমস্যা হচ্ছে। তাই এগিয়ে যাই।’’

কথায় কথায় ওরা জানতে পারে বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধের নাম কামরে আলম। তাঁর বাড়ি ফিয়ার্স লেনে। টিপু সুলতান মসজিদে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মসজিদে যাওয়ার জন্য যাঁর সঙ্গে উনি বেরিয়েছিলেন, তিনি তাঁকে বৌবাজার মোড়ে ফেলে রেখেই চলে গিয়েছেন। এ দিকে নমাজ পড়ার সময় প্রায় পেরিয়ে যেতে বসেছিল।

দৃষ্টিহীনকে রাস্তা পার করে দেওয়ার দৃশ্য এ শহর আগে দেখেনি এমনটা নয়। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় যখন উত্তাল রাজ্য তথা দেশ, এমন আবহে দুই পড়ুয়া দেখিয়ে দিল ভালবাসা আর দায়িত্ববোধ কোনও আইন দিয়ে আটকানো যায় না, মানছেন শ্রীজাত। তবে তাঁর মতে, ‘‘এটাই তো স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কোনও সহ-নাগরিক বিপদে পড়লে তাঁর ধর্ম-জাত না দেখে সাহায্য করা উচিত। সে দিন কবে আসবে, যে দিন এমন ঘটনাকে বিশেষ চোখে দেখা হবে না?’’

বৃদ্ধকে রাস্তা পার করেই দায়িত্ব সারেনি ওরা। ওদের মনে হয়েছিল, বৌবাজার থেকে টিপু সুলতান মসজিদ পর্যন্ত কী ভাবে পৌঁছবেন বৃদ্ধ? তাই তাঁকে মসজিদের ভিতরে ঢুকিয়ে তবেই নিশ্চিন্ত হয় দুই কিশোর। বাড়ি ফিরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল আকাশের। এ কাজে খানিকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেখানে যাওয়া হয়নি। এ জন্য কোনও আফশোস নেই তার। বরং এমন কিছু করতে পেরে খুশি দুই কিশোর। কামরে আলম বলছেন, ‘‘নমাজ পড়তে যাঁর সঙ্গে বেরোলাম তিনিই ফেলে চলে গেলেন! ছুটির দুপুর। কেউ সাহায্য করতেও আসছিলেন না। ওরা না নিয়ে এলে সময়ে মসজিদে পৌঁছতে পারতাম না।’’

আকাশের মতে, ওরা না দেখলে অন্য কেউ নিশ্চয়ই বৃদ্ধের পাশে দাঁড়াতেন। কারণ, শহরটা তো এমনই। ধর্ম-ভাষায় ফারাক না করে বিপদে বাড়ানো হাত দেখেই ওরা বড় হচ্ছে। কিন্তু যে দেশে বন্ধ সরকারেরই চোখ, সেই শাসককেও পথ দেখাবে এই নতুন ভবিষ্যৎ, এমনই মত প্রতিবাদী জনতার।

Namaz Old Man Youth

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।