—প্রতীকী চিত্র।
আর জি করের ঘটনার ধাক্কাতেই কি গড়ে উঠেছিল এই মূর্তি?
সল্টলেকের এ কে ব্লকের পুজো উদ্যোক্তারা বোঝাচ্ছেন, না, শিল্পী ভবতোষ সুতার অনেক আগেই কাজ শুরু করেন। প্রায় ২০ ফুটের কন্যামূর্তিটির পায়ের কাছে বসা চিরাচরিত দেবীমূর্তি। দেখে মনে হয়, দেবীত্বের ধারণাটিই টালমাটাল এ মণ্ডপে। মেয়েটির চোখে অদ্ভুত বিস্ময়-মাখা জ্বালা। ভবতোষ এ মূর্তি গড়েন, সরশুনায় তাঁর চেনা এক কিশোরীর আদলে। বিকাশ ভট্টাচার্য তাঁর ছবির সাধারণ নারীর কপালে ত্রিনয়ন আঁকতেন। ভবতোষ ইচ্ছা করেই তা করেননি। আর জি কর-কাণ্ডের পরে এই ঠাকুরের যেন আলাদা ব্যঞ্জনা।
এত বড় মূর্তি কার্নিভালে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। পুজোর ডাকসাইটে বিচারক, ভাস্কর বিমল কুণ্ডু পরামর্শ দিয়েছিলেন, মূর্তিটি এ কে ব্লকের পার্কে সাজিয়ে রাখতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কার্নিভালের আগের সন্ধ্যায় মূর্তিটি মণ্ডপেই গলিয়ে ফেলেন উদ্যোক্তারা।
কার্নিভালের আসরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ঘোষণা করা হয়, এ বার কোন মূর্তি কোথায় সংরক্ষণ করবে রাজ্য। কিন্তু দুর্গাপুজোর শিল্প, ভাস্কর্যের সরকারি সংরক্ষণ নিয়ে শিল্পী মহলেই ক্ষোভের সুর। তাই এ বার দু’-একটি মূর্তির সংরক্ষণে শিল্পীরাই এগিয়ে এসেছেন। ভবতোষ নিজে ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক সর্বজনীনের শিল্পী পূর্ণেন্দু দে-র প্রতিমাটি সরশুনায় দুর্গাপুজো শিল্পীদের শিল্প চর্চা কেন্দ্র ‘চাঁদের হাট’-এ সাজানোর কথা ভেবেছেন। পূর্ণেন্দুর ঠাকুরে মিশে ছোটদের ছবির সারল্য। দুর্গার গোল, গোল চোখ, মজাদার ইঁদুর, দুষ্টু ছেলের মতো অসুর! মূর্তির গায়ে প্যাস্টেলে রং করেছেন শিল্পী। ষাটোর্ধ্ব পূর্ণেন্দু বলছেন, “আমার মেয়ের মেয়ে জন্মাতেই এমন বিষয় মাথায় এল। আমাদের আত্মীয়া ন’বছরের একটি মেয়ের আঁকা ছবি দেখেই মূর্তিটা করেছি।” ভবতোষ বলছেন, ‘‘চাঁদের হাটে হয়তো দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশকে আলাদা রাখব।’’
কার্নিভালের শোভাযাত্রা থেকে পূর্ণেন্দুর ঠাকুর সরশুনায় চাঁদের হাটেই গেল। পূর্ণেন্দুর ২০১৬-র আহিরীটোলার প্রতিমা পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে রয়েছে। ভবতোষের ২০০৫-এ পোড়ামাটির উপরে গালার কাজের ঠাকুর বেহালা আর্কিয়োলজিক্যাল মিউজিয়ামে বা মেহগনি কাঠের বহুমূল্য প্রতিমা জনৈক শিল্পরসিক সাংসদের সংগ্রহে। কিন্তু বেশ কিছু প্রতিমার সংরক্ষণ নিয়েই শিল্পীরা অসন্তুষ্ট। গত বছর অর্জুনপুরের মণ্ডপে ভবতোষের বিদ্রোহিণী নারীমূর্তি পিছনে গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে আলিপুর জেল মিউজিয়ামে মাটিতে রাখা। নিউ টাউনের ইকো পার্কেও ভবতোষের একটি পাথুরে আদলের মূর্তি চকচকে রাখতে সরকারি ঠিকাদার উজ্জ্বল পালিশ করেছেন বলে খবর।
শিল্পীরা মনে করেন, মূর্তি সংরক্ষণ মানে কোথাও বসিয়ে দেওয়া নয়। কোথায়, কতটা উঁচুতে, কী ভাবে রাখা জরুরি— তা নিয়ে শিল্পীদের মত কেউ আমলই দেয় না। বাগুইআটির অর্জুনপুরে ভবতোষের এ বারের দুর্গা অজস্র মোষের শবদেহের উপরে হিংস্র দেবীমূর্তি। মাটির উপরে ফাইবার কাস্টিং। কার্নিভাল-ফেরত এ মূর্তি অর্জুনপুরেই ফিরেছে। ভবতোষ চান, তা ভেবেচিন্তে সংরক্ষণ করা হোক।
সরকারি উদ্যোগে রবীন্দ্র সরোবরের কাছে দুর্গা প্রতিমার সংরক্ষণাগার গড়ে ওঠে ২০১২ নাগাদ। তবে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার মানছেন, ‘‘অনেক প্রতিমারই সেখানে দুরবস্থা। কিছু দিন পরে কয়েকটি পুরনো ঠাকুর ভাসান দিতে হয়। আবার বাছাই নতুন প্রতিমা আসে।”
পুজো শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক তথা টালা প্রত্যয়ের কর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু শুভের মতে, “মণ্ডপের বৃহৎ উপস্থাপনা সংরক্ষণের পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া মুশকিল।” তাই প্রতিমা একটি অনুষ্ঠান করে মণ্ডপে গলিয়ে ফেলাই টালা প্রত্যয়ের রীতি। সফল থিম শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তও পুজোর কাজ ডিজিটাল সংরক্ষণে বিশ্বাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy