Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Book Fair 2023

রচনাবলিকেও টেক্কা দিচ্ছে সিনে-পুস্তিকা

বইমেলার মাঠে এ সব দেখলে আজকের ৬০-৭০ বছরের বুড়োবুড়িরাও নির্ঘাত কিশোর, তরুণ হয়ে উঠবেন। তাঁদের পরের প্রজন্মের অনেকেরই এ সব বুকলেট-স্মৃতি ক্ষীণ।

A Photograph of a  book stall for film lovers in Kolkata International Book Fair

বইমেলায় পুরনো বাংলা ছবির সিনে-পুস্তিকা। ছবি: সুমন বল্লভ।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০১
Share: Save:

নায়কটা হাতে আসেনি এখনও! তবে দেবী, চিড়িয়াখানা, অপুর সংসার, পথের পাঁচালী, চারুলতা-রা হাজির। সত্যজিৎ রায়ের কীর্তির ফাঁকে কে আবার গুঁজে দিয়েছে উত্তম-সৌমিত্রের টক্করে ভরপুর তপন সিংহের ‘ঝিন্দের বন্দি’। কবেকার হলদেটে কাগজ। লাল, নীল, সবুজে বাহারি ব্লক ছাপাইয়ে ফুটে ওঠা ধ্রুপদী বাংলা ছবির মহিমা।

বইমেলার মাঠে এ সব দেখলে আজকের ৬০-৭০ বছরের বুড়োবুড়িরাও নির্ঘাত কিশোর, তরুণ হয়ে উঠবেন। তাঁদের পরের প্রজন্মের অনেকেরই এ সব বুকলেট-স্মৃতি ক্ষীণ। তখন নতুন ছবি মুক্তি পেলেই পরিবেশকেরা ছবির সমস্ত কুশীলব, গুরুত্বপূর্ণ কলাকুশলীদের নাম পুস্তিকায় প্রকাশ করতেন। সঙ্গে সিনেমাটির বেশ কয়েকটি ছবির পাশে থাকত গানগুলির বাণী, কাহিনিরও সারসংক্ষেপ। শেষে ‘এর পরে কী হল তার পরিণাম! দেখুন রুপোলি পর্দায়…!’

নতুন ছবির প্রচারের সীমিত পরিসরের সেই যুগে এই বুকলেটেই ছবির অনেক খুঁটিনাটি থাকত। হিন্দি ছবিরও বাংলা, উর্দু, হিন্দি ফিরিস্তি একযোগে প্রকাশিত হত। ১৯৬০-’৭০, এমনকি ১৯৩০-’৪০ বা ’৫০-এর দশকেও বড় পর্দার শোয়ের সময়ে হাতে হাতে ঘুরত সেই চিলতে পুস্তিকা! দাম দু’-এক আনা। অনাদরে পড়েও থাকত ইতিউতি। তা আজ অবিশ্বাস্য মহার্ঘ সম্পদ হয়ে ফিরে এসেছে। বইমেলার ন’নম্বর গেটের কাছেই পুরনো বইয়ের জন্য খ্যাত সবুজপত্রের স্টল। আদি যুগের দেশ, আনন্দমেলা, খেলার আসর, স্পোর্টস অ্যান্ড পাস্টটাইম থেকে রকমারি ইন্দ্রজাল কমিকসের খোঁজ মেলে সেখানে। কিছু, অতি প্রাচীন বিশ্ববিখ্যাত বইও মাঝেমধ্যে বইমেলায় হাজির করে তারা। এ বার সাবেক বাংলা ছবির এক গুচ্ছ সচিত্র বুকলেটও (পুস্তিকা) ওই তল্লাটে রীতিমতো সাড়া ফেলেছে।

ফিনফিনে, বয়সের ভারে কোমল এ সব কাগজ জমিয়ে রাখলে আজ কিছুটা বাবুগিরিই করা যেত, ভাবতে পারেন কোনও কোনও প্রবীণ। ময়দান যুগ থেকে বইমেলার পুরনো বই বিক্রেতা শুভাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “কম কাঠখড় পোড়াইনি এ সব জোগাড় করতে। আমিও চাই যোগ্য হাতে এ সব যাক! যিনি এর মর্ম বুঝবেন, যত্নে রাখবেন।” জাহাজ সংস্থার চাকুরে, টালিগঞ্জের পঞ্চাশোর্ধ্ব মলয় দাস বহু বছর ধরে সিনেমার বুকলেট জমাচ্ছেন। এ বইমেলায় কিছু কিছু কিনেওছেন তিনি। বইমেলার মাঠে জোর চাহিদা সত্যজিতের ছবির বুকলেটের। তা অনেক রচনাবলির দামকেও টেক্কা দেবে। চিড়িয়াখানা-র বুকলেটে গানের লিরিক, ভালবাসার তুমি কী জানো! চারুলতা-তেও রামমোহন, রবীন্দ্রনাথদের লেখা গানগুলি। দেবী-র পুস্তিকায় আবার রহস্যময়তায় আধখানা দৃশ্যমান শর্মিলা ঠাকুরের নীলাভ মুখ। দেবী লেখার সুছাঁদ অক্ষরেও রঙের ফারাকে দেবীত্ব নিয়ে সংঘাত! বইমেলায় শুভাশিসের সংগ্রহে ১৯৩৬-এর কৃষ্ণ সুদামায় রুক্মিণীবেশী কাননদেবীরও ছবি রয়েছে। সঙ্গে অধুনা বিলুপ্ত রূপবাণীতে রিলিজের সন, তারিখ। খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন-এর বুকলেটের দু’রকম নকশা। হাটেবাজার-এর বুকলেটের সঙ্গেই ‘আনন্দ সংবাদ’, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের আসন্ন আনন্দ ছবিতে উত্তমকুমার, রাজ কপূরের অভিনয়ের কথা। ছবিটি এ ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি সবার জানা।

অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এ সব সিনেপুস্তিকা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমাজজীবনেরও একটা সময়ের স্বাক্ষর।” গুপ্তধনের মতো এ সব কাগজ বইমেলায় টেবিলের নীচে আগলে রেখেছেন শুভাশিস। বলছেন, “এ তো উটকো লোকে টানাটানির কাগজ নয়। সত্যিকারের আগ্রহী কেউ এলেই দেখাব!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy