E-Paper

নেতাদের ‘আশীর্বাদধন্য’ প্রভাবশালীরা দর ঠিক করে বিদ্যুতের খুঁটি ভাগ করেন, সারবে চুরির রোগ?

গৃহস্থের বাড়ির বিদ্যুতের মিটার তো বটেই, রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি, পুরসভার বাতিস্তম্ভ থেকেও বিদ্যুৎ চুরি হয়। রীতিমতো খুঁটি ধরে নিলাম চলে এলাকার কিছুপ্রভাবশালীর মধ্যে!

hooking

শহর জুড়ে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনার উদাহরণ প্রচুর। প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৮:৫৫
Share
Save

ঘটনা ১: সব কিছু ঠিকঠাক। তবু মাসখানেক ধরে টালিগঞ্জ, আলিপুর, ভবানীপুর-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় রাতে লোডশেডিং। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কারণ বোঝা যাচ্ছে না। শেষে দেখা গেল, সিইএসসি-র বিভিন্ন ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে যুক্ত স্তম্ভ থেকে ফিউজ় চুরির কারণে নামছে আঁধার! তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করল দু’জনকে। উদ্ধার ১৬টি ফিউজ়।

ঘটনা ২: কামারহাটি এলাকায় পুরনো পিলার বক্স বদলে জার্মান প্রযুক্তির দু’টি বক্স বসানো হয়। ওই দিনই সিইএসসি-র কর্মীদের ঘিরে ধরে এলাকার কিছু লোক দাবি করেন, পিলার বক্সের দরজায় তালা ঝোলানো যাবে না। কারণ, সেখান থেকে তাঁরা বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নেবেন। রাখঢাক না করেই বাসিন্দাদের সরাসরি দাবি, বিদ্যুৎ চুরি করতে দিতেই হবে! পুলিশের উপস্থিতিতে তখনকার মতো তালা ঝোলানো গেলেও শাবল, গাঁইতি, গ্যাস কাটার দিয়ে বক্সের দরজা ভেঙে ফেলা হয় রাতেই। পরের দিন সিইএসসি-র কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, মোটা তার দিয়ে টেনে চারটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে!

কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়, শহর জুড়ে বিদ্যুৎ চুরির এমন ঘটনার উদাহরণ প্রচুর। লালবাজারের হিসাব, প্রতি বছর বিদ্যুৎ সংক্রান্ত প্রায় হাজার চারেক অভিযোগ জমা পড়ে তাদের কাছে। অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে ধরপাকড় হলেও বাকি ক্ষেত্রে তা থেকে যায় খাতায় কলমেই। তবে এমন বিদ্যুৎ চুরির জেরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে আলোচনা চলে আরও কিছু দিন। যেমনটা হচ্ছে গত ১৫ মে, একবালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মা-মেয়ের মৃত্যুর পরে। সেই ঘটনার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে ৪৫ জনকে। লালবাজার জানিয়েছে, সব চেয়ে বেশি গ্রেফতারি হয়েছে নারকেলডাঙা, কসবা, তিলজলা, তপসিয়া এবং বন্দর এলাকা থেকে। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ কেন আগেই সক্রিয় হয়নি? যে সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ বেশি, সেখানকার মানুষের প্রশ্ন, গ্রেফতারির জেরে সাময়িক ভাবে বন্ধ হলেও রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে আদৌ কি বন্ধ হবে বিদ্যুৎ হুকিংয়ের ব্যবসা?

পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছেন, ধরপাকড় করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, গৃহস্থের বাড়ির বিদ্যুতের মিটার তো বটেই, রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি, পুরসভার বাতিস্তম্ভ থেকেও বিদ্যুৎ চুরি হয়। রীতিমতো খুঁটি ধরে নিলাম চলে এলাকার কিছুপ্রভাবশালীর মধ্যে! নেতা-দাদাদের ‘আশীর্বাদধন্য’ প্রভাবশালীরা নিজেদের মধ্যে দর ঠিক করে খুঁটি ভাগাভাগি করেন। এর পরে স্থানীয় ডেকরেটরকে দিয়ে খুঁটি থেকে তার বার করে চলে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘ক’টা পাখা বা আলো জ্বলবে, তার উপরে দর দেওয়া হয়। বন্দর এলাকার বহু পাড়ায় যেমন একটা পাখার জন্য দর মাসে ৬০-৭০ টাকা, টিউবলাইট মাসে ৫০ টাকা। মোটা পাওয়ারের বাল্ব জ্বললে ৪০-৫০ টাকা। টিভি, এসি চালাতে দর মাসে ১২০ টাকা এবং ১৫০ টাকা।’’ আর এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রচুর বেআইনি নির্মাণ তৈরি হয়েছে এই সব এলাকায়। বাসিন্দাদের বেশির ভাগের বৈধ কাগজ নেই। ফলে চেষ্টা করে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার বদলে নেতাদের থেকে লাইন নিয়ে নেওয়া হয়।’’ এ থেকে এক-এক জন প্রভাবশালীর আয় হচ্ছে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা। তা থেকে নেতা-দাদাদের কাছে যায় লক্ষ টাকা মতো।

রাজাবাজারের এমনই একটি ঘিঞ্জি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে টানা হয়েছে হুকিংয়ের তার। দলা পাকানো তার বিপজ্জনক ভাবে বাড়ির ছাদের পাশ দিয়ে ঝুলছে। তিলজলার শিবতলা লেন, তিলজলা মসজিদ বাড়ি লেন, তপসিয়া রোড, কুষ্টিয়া মসজিদ বাড়ি লেন, জি জে খান রোডে আবার সিইএসসি-র বিদ্যুতের তার থেকেই চুরি করে বাড়ি-বাড়ি চলছে আলো, পাখা, ফ্রিজ সবই।

সিইএসসি-র এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস অভিজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘মিটারের কাছে বিদ্যুতের তার আমরা সিল করে দিই। চুরি করা কঠিন, এমন ‘কো-এক্সিয়াল’ তারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পরেও বহু জায়গায় চুরি হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব দল শহরে ঘুরছে। পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান হচ্ছে। যে কেউ অনিয়ম দেখলে নিজের নাম না জানিয়ে আমাদের সংস্থায় অভিযোগ করতে পারেন। আগামী দিনে আরও কড়াকড়ি হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Electricity Hooking Hooking CESC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।