Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Transfer Of OC

ওসির বদলিতে ঠিকানা বদলাচ্ছে থানার বাসিন্দা পোষ্যদেরও

মানিকতলা থানার ভিতরের নির্দিষ্ট ঘর ছেড়ে কালু, ভুলু-সহ ন’টি কুকুর যাচ্ছে ১৭ কিলোমিটার দূরে যাদবপুর থানায়। গাড়িতে করে সোমবার বিকেলেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদের। নতুন ঠিকানায়, যাদবপুর থানার ভিতরে নির্দিষ্ট ঘরে ওসির তত্ত্বাবধানেই থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে তাদের।

An image of Dogs

মানিকতলা থানা থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পোষ্যদের। —নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
Share: Save:

বদলি হয়েছেন থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি)। আর তাই পাল্টে যাচ্ছে থানার পোষ্যদের ঠিকানাও। মানিকতলা থানার ভিতরের নির্দিষ্ট ঘর ছেড়ে কালু, ভুলু-সহ ন’টি কুকুর যাচ্ছে ১৭ কিলোমিটার দূরে যাদবপুর থানায়। গাড়িতে করে সোমবার বিকেলেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওদের। নতুন ঠিকানায়, যাদবপুর থানার ভিতরে নির্দিষ্ট ঘরে ওসির তত্ত্বাবধানেই থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে তাদের।

যদিও এই ঠিকানা বদলের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল দিনকয়েক আগে। নিয়ম মেনে শহরের একাধিক থানার আধিকারিকদের বদলির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল লালবাজার। বছর তিনেক ধরে মানিকতলা থানার অফিসার ইন-চার্জের দায়িত্ব সামলানো মৃণালকান্তি মুখোপাধ্যায়কে বদলি করে পাঠানো হয় যাদবপুর থানায়। মানিকতলা থানায় অফিসার ইন-চার্জ হয়ে আসেন বড়তলা থানার আধিকারিক। মানিকতলা থানার দায়িত্বভার ছেড়ে যাদবপুর থানার অফিসার ইন-চার্জের দায়িত্ব নিয়েই থানার ভিতরে পোষ্যদের কোথায় রাখা যায়, তার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন মৃণালকান্তি। সেই কাজ শেষ হতেই অবশেষে মানিকতলা থানা থেকে পোষ্যদের নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুর থানায়। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় থানায় ওদের জন্য রাখা খাবারের প্যাকেট, ওষুধও।

এর সূচনা অবশ্য হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ১৬টি কুকুরছানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছিল। তবে, দু’টি কুকুরছানা পালিয়ে যাওয়ায় কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছিল। পশুপ্রেমীদের একটি সংগঠনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন মৃণালকান্তি। তখন তিনি কড়েয়া থানায় কর্মরত। ওই দু’টি কুকুরছানাকে খুঁজে বার করে তিনি তাদের সোজা নিয়ে আসেন কড়েয়া থানায়। তবে, এর কিছু দিন পরেই কড়েয়া থেকে মানিকতলায় বদলি হয়ে যান তিনি। তখন ওই দুই কুকুরছানাকেও সঙ্গে করে মানিকতলা থানায় নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকেই ওই থানা চত্বরই ছিল ওই পোষ্যদের ঠিকানা। পরে তাদের সঙ্গী হয় স্থানীয় আরও কয়েকটি কুকুর। তাদের জন্য মানিকতলা থানার ভিতরে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। ওসির তত্ত্বাবধানে তিন বেলা তাদের জন্য আলাদা করে রান্না হত। নিয়মিত তাদের দেখে যেতেন পশু চিকিৎসকেরাও। মৃণালকান্তির কথায়, ‘‘ছোট ছোট বাচ্চাদের কেউ যে নৃশংস ভাবে মারতে পারে, সেটাই মানতে পারিনি। তাই ওদের নিয়ে এসে নিজের কাছে রেখেছিলাম। পুলিশের হাজার কাজের ফাঁকে ওদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে ভাল লাগত।’’

যদিও সপ্তাহখানেক আগে বদলির নির্দেশ আসতেই মৃণালকান্তির চিন্তা বাড়ে। পোষ্যদের কী হবে? সাময়িক ভাবে ওদের মানিকতলা থানায় রেখেই তড়িঘড়ি যাদবপুর থানায় যোগ দেন তিনি। তবে সেখানে দায়িত্ব বুঝে নিয়েই কোথায় পোষ্যদের এনে রাখা যাবে, তার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলেন। মৃণালকান্তি বলেন, ‘‘থানার কয়েক জনকে ওদের জন্য ব্যবস্থা করার কথা বলে দিয়েছিলাম। বহু কষ্টে থানার ভিতরেই একটি বন্দোবস্ত করা গিয়েছে। ওরা যত দিন বাঁচবে, আমার সঙ্গেই থাকবে। ওদের ছেড়ে থাকা যায় নাকি!’’

যদিও ওসির পাশাপাশি পোষ্যদের এই ‘বদলিতে’ মনখারাপ মানিকতলা থানার পুলিশকর্মীদের। মানিকতলা থানার এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘ডিউটিতে এসে ওদের দেখতাম। মাঝেমধ্যে আমাদের সঙ্গে খেলাধুলোও করত। পিছনে পিছনে ঘুরত। মায়া পড়ে গিয়েছিল। থানায় এসে এখন আর ওদের দেখতে পাব না, এটা ভেবেই খারাপ লাগছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Officer In Charge Transfer pet dogs Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy