Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sexual Harassment

বাবাই ধর্ষণ করেছে! বান্ধবীকে প্রথম সে কথা জানায় নাবালিকা, দাম্পত্য কলহের শিকার নির্যাতিতা?

স্বামী-স্ত্রীর এই অশান্তির প্রভাবই কি পড়ল দম্পতির কিশোরী মেয়ের উপরে? নিজের বাবার বিরুদ্ধেই দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে দায়ের করে বছর তেরোর মেয়েটি।

An image of Sexual Harassment

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০০
Share: Save:

গোটা বাড়ি সিসি ক্যামেরায় মোড়া! সদর দরজার বাইরে এবং ভিতরে তো বটেই, বাদ নেই রান্নাঘর, বসার ঘর, এমনকি শোয়ার ঘরও। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, স্ত্রীকে সন্দেহ করেই বাড়ি জুড়ে এত ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এই সন্দেহের জেরেই নিত্য অশান্তি লেগে থাকত পরিবারে। গত পুজোয় ষষ্ঠীর দিন এ কারণেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার কালিয়াগঞ্জে বাবা-মায়ের কাছে চলে যান মহিলা। স্বামী-স্ত্রীর এই অশান্তির প্রভাবই কি পড়ল দম্পতির কিশোরী মেয়ের উপরে? নিজের বাবার বিরুদ্ধেই দিনের পর দিন ধর্ষণ করার অভিযোগ পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে দায়ের করে বছর তেরোর মেয়েটি। তার পরেই ওই প্রশ্ন উঠছে। যদিও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই বলা সম্ভব নয় বলে পুলিশ দাবি করেছে।

এ দিকে, ধৃতকে শুক্রবার আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের এজলাসে তোলা হলে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি আইনজীবী রাধানাথ রং বলেন, ‘‘অভিযুক্ত নিজে আইনের রক্ষক। এক জন পুলিশকর্মী। এমন জঘন্য অপরাধের অভিযোগে সমাজের কাছে ঘৃণার বার্তা পৌঁছেছে।’’ বিষয়টি এর পর ‘প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (পকসো) আইন সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে উঠতে পারে। আপাতত সরকারি হোমে থাকা অভিযোগকারিণী নাবালিকার শারীরিক পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করছে পুলিশ। নাবালিকার গোপন জবানবন্দি নেওয়ার দিনও চাওয়া হয়েছে আদালতে। লালবাজার সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে ওই নাবালিকা তার স্কুলের এক বান্ধবীকে প্রথম জানিয়েছিল যে, বাবা তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করে।

জানা গিয়েছে, বছর ষোলো আগে ওই নাবালিকার বাবা-মায়ের বিয়ে হয়। কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা মায়ের পরিবার এবং বালুরঘাটের বাসিন্দা বাবার পরিবারের মধ্যে দেখাশোনা করেই বিয়ে হয়েছিল। কলকাতা পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত নাবালিকার বাবা এর পরে বাড়ি কেনেন পর্ণশ্রী থানা এলাকায়। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া নাবালিকার সাত বছরের একটি বোনও রয়েছে।

এ দিন ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায়, গোটা বাড়ি সিসি ক্যামেরায় মোড়া। বাড়ির কোল্যাপসিবল গেটে তালা ঝুলছে। এক প্রতিবেশী জানান, স্বামীর গ্রেফতারির খবর পেয়ে এ দিন সকালেই কালিয়াগঞ্জ থেকে এসেছেন নাবালিকার মা এবং দিদিমা। ওই প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের পর থেকেই অশান্তি চলছে। স্ত্রীকে খুবই সন্দেহ করতেন ওই ব্যক্তি। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যায় যে, এই বাড়ি ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে চলে যান মহিলা। কিন্তু তার পরে কী হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু দুই মেয়েকে কখনও অযত্ন করতে দেখিনি ওদের বাবাকে। বড়দিন উপলক্ষে তিনি মেয়েদের নিয়ে সারা দিন ঘুরে রাতে বাড়ি ফিরেছেন।’’

অন্য এক প্রতিবেশী মহিলা আবার দাবি করেন, ‘‘ওদের মা চলে যাওয়ার পর থেকে দুই মেয়ে আমার কাছেই থাকত। আমার বাড়িতেই খাওয়া-দাওয়া করত। গত কয়েক দিন ধরে দেখছিলাম, বড় মেয়েটা আর বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেই না। আমার বাড়িতেও আসছিল না। কী হয়েছে কে জানে!’’ মহিলার দাবি, ‘‘কাল বিকেলে আমার স্বামী দেখেছেন, পুলিশের গাড়ি এসেছে ওই বাড়ির সামনে। মেয়ে দুটো নেই। ওদের বাবা গাড়িতে বসা। তিনি শুধু বলেছেন, বড় মেয়েটা আমায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। অন্য কারও ইন্ধন না থাকলে এটা কেউ পুলিশে গিয়ে বলতে পারে না।’’

আদালত ঘুরে দুই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে নাবালিকার মা যদিও বললেন, ‘‘বাচ্চা মেয়ে বাবার নামে ভুল করে অভিযোগ করে ফেলেছে। অভিযোগ তুলে নিতে মেয়েকে বোঝাব। আমার টিউমার ধরা পড়েছে। আমি অসুস্থ। সংসারটা ভেসে যাক আমি চাই না।’’

লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘যে হেতু পকসো মামলা, তাই এখনই বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে সব দিক দেখেই মামলা হয়েছে এবং গ্রেফতারি হয়েছে।’’ মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘তদন্তে কী উঠে আসছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মায়ের অশান্তি অবশ্যই ওই নাবালিকার জীবনে বড় প্রভাব ফেলে থাকতে পারে। কিন্তু এটাও ভুললে চলবে না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের দ্বারাই সব চেয়ে বেশি যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sexual Harassment Sexual Assult Minor Abuse Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy