—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কারও স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে। কেউ শৌচাগারে বা অন্য কোথাও হঠাৎ পড়ে যাচ্ছেন। কারও দ্রুত ওজন কমে যাচ্ছে। খিদে নেই। দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে। কারও কারও আবার চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে, মূত্রের বেগ এলে ধরে রাখতে পারছেন না! কিন্তু বয়স বাড়লে এ সবই হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। প্রবীণেরা তো ভাবছেনই, নিকটাত্মীয়েরাও তাঁদের বোঝাচ্ছেন, ‘এ ভাবেই বাঁচতে হবে!’ তাই হাসপাতালে এসেও চোখ বা হৃদ্রোগের সমস্যার কথা জানিয়েই তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন। হচ্ছে না সার্বিক চিকিৎসা!
বিশ্ব প্রবীণ দিবসে এ-ও এক চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন চিকিৎসক থেকে সচেতন নাগরিকদের বড় অংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সার্বিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত না হওয়া পর্যন্ত বয়স্কদের সুস্থ জীবনের অধিকার সুরক্ষিত করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাস্থ্যের এই দিকটির গুরুত্ব বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে যেখানে প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৯, সেখানে ২০২০ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩-য়। ২০৫০ সালে প্রতি ১০০ জন নাগরিকের মধ্যে প্রবীণের সংখ্যা ২০-তে গিয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, এ দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে দু’জনই হবেন প্রবীণ। চিকিৎসকদের দাবি, এর সঙ্গেই তৈরি হয়েছে কম সন্তান জন্ম দেওয়ার সচেতনতা। আরও একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে এক সময়ে যেখানে দেশবাসীর গড় আয়ু ছিল ৪০-৫০ বছর, এখন সেটাই বেড়ে হয়েছে ৭০ থেকে ৭২ বছর। অর্থাৎ, স্বাধীনতার পরের ৭৫ বছরে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় ৩০ বছর। কিন্তু প্রবীণদের সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার দিকটি তেমন গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দেখেছে, বয়স্কদের সুস্থ রাখাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। এই জন্যই ২০২০ থেকে ২০৩০, এই দশককে ‘ডেকেড অব হেলদি এজিং’ বলে ঘোষণা করেছে তারা। অর্থাৎ, বয়স বাড়ুক, কিন্তু স্বাস্থ্য ভাল থাকুক। এর পরে ভারত সরকার এই সূত্রেই প্রবীণদের সার্বিক চিকিৎসার লক্ষ্যে চালু করেছে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর হেলথকেয়ার অব এল্ডারলি’ (এনপিএইচই) প্রকল্প। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অরুণাংশু তালুকদার জানান, এনপিএইচই প্রকল্পে দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে একটি করে রিজিয়োনাল জেরিয়াট্রিক সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। বয়স্কদের সার্বিক চিকিৎসার লক্ষ্যে পূর্ব ভারতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগই প্রথম, যেখানে এমডি মেডিসিনের কোর্সও চালু হয়েছে। ওই বিভাগই এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের চিকিৎসকদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে।
অরুণাংশু বলেন, ‘‘যে কোনও রোগের উপসর্গ এবং বহিঃপ্রকাশ এক জন বয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনও মাঝবয়সির চেয়ে আলাদা হবে। কিন্তু হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও বয়স্কদের এমন বহু সমস্যা থাকে, যা সেই সব চিকিৎসকের পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না। ধরা যাক, কেউ বার বার মূত্রত্যাগ করছেন, কিন্তু তাঁর প্রস্টেটে কোনও সমস্যা নেই! এটার সুরাহা মিলতে পারে বয়স্কদের বিভাগে। দেখা যাবে, ওই ব্যক্তির হয়তো চামড়া শিথিল হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই এমন বয়স্কদের চিকিৎসার জন্য আলাদা বিভাগ দরকার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ইন্ডোর এবং আউটডোর মিলিয়ে সেটাই করা গিয়েছে।’’ এমডি পাঠক্রমের পাশাপাশি এখানে বয়স্কদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ডিপ্লোমা কোর্সও চালু করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাহায্যে রাজ্যের ২৭টি জেলা হাসপাতালে ইতিমধ্যেই সপ্তাহে এক দিন করে বয়স্কদের বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। চালু হয়েছে ১০ শয্যার পৃথক বয়স্কদের বিভাগও। গত এক বছরে এর জন্য সমস্ত জেলা হাসপাতালের দু’জন করে চিকিৎসক ও দু’জন করে নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতিটি জেলা হাসপাতালেই পাঠানো হয়েছে ফিজ়িয়োথেরাপি এবং মিউজ়িক থেরাপির সরঞ্জাম।
কিন্তু এত সব সত্ত্বেও বয়স্কদের রোগ নিয়ে অবহেলা কমছে কি? উত্তর কলকাতায় প্রবীণদের
একটি ক্লাবের সম্পাদক, বছর সত্তরের সজল হাজরা বললেন, ‘‘বড় কিছু না হলে কখনওই ছেলেমেয়েরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায় না। কানে শুনতে না পেলেও খোল জমেছে বলে এড়িয়ে যায়। বয়স্কদের বোঝা বলে ভাবা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সুরাহাই সম্ভব নয়।’’ (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy