বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েই চলেছে। এ বার যাদবপুরে বিজেপির যুব মোর্চার ধর্নায় গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেদের বিরুদ্ধে চড়া সুরে হুঙ্কার দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দু’পক্ষই আবার শুভেন্দুকে পাল্টা জবাব দিয়েছে।
যুব মোর্চার ধর্না-মঞ্চে বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতার মুখে আগাগোড়া ‘তুলে ফেলে দেব’, ‘উপড়ে ফেলব’, ‘হিসেব বুঝে নেব’ জাতীয় নানা হুঙ্কার শোনা গিয়েছে। বাম এবং অতি বামেরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করে শুভেন্দু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাদের তুলে ফেলে দেওয়ার। সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন, ‘‘তিন-চারটে সংগঠন ‘নো ভোট টু বিজেপি’র প্রচার করেছিল। এরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বি-টিম। কাশ্মীর থেকে যে দল ৩৭০ ধারা তুলে দিয়েছে, সেই দল দেশ-বিরোধী দলগুলিকে তুলে ফেলে দেবে!’’ নদিয়ায় মৃত পড়ুয়ার বাড়িতে আজ, শুক্রবার জনাপনেরো বিজেপি বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। কেন সিসিটিভি লাগানো হয়নি, কেন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে ‘তাড়ানো’ হয়েছিল, এ সব প্রশ্ন তুলে এবং বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনের প্রসঙ্গ এনে শুভেন্দু ফের বলেছেন, ‘‘বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে হিসেব বুঝে নেব! এর শেষে দেখে ছাড়ব, এদের উপড়ে ফেলব! আগামীর লড়াই চলছে, চলবে।’’ রাজ্যের কোনও সংস্থা নয়, কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে ছাত্র-মৃত্যুর তদন্তের দাবি তুলেছেন তিনি।
যাদবপুরে দাঁড়িয়ে এ দিন শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকেও নিশানা করেছেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কালিয়াগঞ্জ, রামপুরহাটে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকে পাওয়া যায় না। শিক্ষামন্ত্রী যাদবপুরের মৃত পড়ুয়ার নাম বলেছেন। ব্রাত্য বসুকে নোটিস দেবে ওই কমিশন? যদি না দেয়, আমরা কাল থেকে ওই ছাত্রের নাম বলব, ছবি ব্যবহার করব!’’ বিরোধী দলনেতাকে কালো পতাকা দেখানো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে ‘স্বাধীন’ সংগঠন আরএসএফের সঙ্গে বিজেপির যুব মোর্চা এবং এবিভিপি-র কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি বেধেছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশ আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দিতেও দেখা গিয়েছে বিরোধী দলনেতাকে।
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘র্যাগিংয়ের শিকার একটি বাচ্চা ছেলের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে শুভেন্দু সস্তা রাজনীতি করছেন। ওঁর নৈতিক অধিকার নেই এ নিয়ে কথা বলার! ইউজিসি বলছে, ২০২১ সালে হিসেব অনুযায়ী ডাক্তারির ছাত্রদের সঙ্গে ৫১১টি এই রকম ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বামেদের সব নানা রকম শাখা একজোট হয়েছে। আর তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি তৃণমূলের বিরোধিতা করছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর আবার বক্তব্য, ‘‘র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ সর্বত্র প্রতিবাদে নেমেছে। কিন্তু যাদবপুরের ঘটনাকে উপলক্ষ করে বিজেপি এবং তৃণমূল বামেদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখলদারি করতে চাইছে। দু’পক্ষের একই মনোভাব! তাদের এই লক্ষ্য সফল হতে দেওয়া যাবে না।’’ শুভেন্দু নানা হুঙ্কার দিলেও ছাত্র-মৃত্যুর পরে ইউজিসি যাদবপুরে আসব বলেও আসেনি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন সুজন। বিচার চেয়ে এবং র্যাগিংয়ের প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার সুকান্ত সেতু থেকে যাদবপুর থানা পর্যন্ত নাগরিক মিছিলের ডাক দিয়েছে বামেরা।
মৃত ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী এ দিনই বলেছেন, ‘‘বগটুইয়ে মিহিলাল শেখ আমাকে বলেছিল যে, ‘দিদি বোল দিয়া তো ইনসাফ মিলেগা’। সেই মিহিলাল কিন্তু আজ বিজেপির ঝান্ডা ধরে মিছিলে হাঁটছে। আমি চাইব আমার ভাই, মৃত ছাত্রটি যেন ইনসাফ পায়। কোনও রাজনীতির রং দেখার দরকার নেই।’’ বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন তৃণমূলের রাজ চলছে। হস্টেলে গাঁজা-মদের আসর হয়। সরকারি দলের লোক ছাড়া বা পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া কি সম্ভব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy