Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Environment

রাজনৈতিক চাপেই কি পরিবেশ রক্ষার স্বার্থ জলাঞ্জলি

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন আবেদন খারিজ হলেও সরকার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। সেই প্রস্তুতিই শুরু হচ্ছে। 

ছটপুজোর পরে আবর্জনায় ভরেছিল রবীন্দ্র সরোবর।— ফাইল চিত্র

ছটপুজোর পরে আবর্জনায় ভরেছিল রবীন্দ্র সরোবর।— ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫০
Share: Save:

পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা ইতিমধ্যেই জানা। সেই কারণে দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। তার নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু তার পরেও রবীন্দ্র সরোবরে ফের ছটপুজো করার জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতে আবেদন করেছিল ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)। বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় জাতীয় পরিবেশ আদালত। জানিয়ে দেয়, তাদের নির্দেশ অমান্য করা যাবে না।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন আবেদন খারিজ হলেও সরকার বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। সেই প্রস্তুতিই শুরু হচ্ছে।

পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক চাপেই সরকারের এমন ‘মরিয়া’ অবস্থা! তবে পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এই আবেদন যে খারিজ হবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, রবীন্দ্র সরোবরের দূষণ নিয়ে পর্যালোচনা করতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এর আগেই ছটপুজোর কারণে দূষণ হয় বলে জানিয়েছিল। গত বছরই সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। কিন্তু তার পরেও এই আবেদনের পিছনে রাজনৈতিক চাপটাই কাজ করেছে বলে মনে করছেন তাঁরা। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য রাজনৈতিক চাপের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই। শুধু একটাই চাপ রয়েছে, তা হল মানুষের ভাবাবেগের চাপ। কাউকে আমরা ধর্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। পুজোর জন্য জড়ো হওয়া পুণ্যার্থীদের উপরে লাঠিও চালাতে পারি না।’’

আরও পড়ুন: ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার দম্পতির দেহ, সন্দেহ আত্মহত্যা

পরিবেশকর্মীদের মতে, আগামী বছরের নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠীর কাছে রাজ্য সরকারের তরফে এই বার্তাটা দেওয়ার দরকার ছিল যে, ‘আমরা সরোবরে ছটপুজোর জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরিবেশ আদালতই অনুমতি দেয়নি।’ আর এ ভাবেই পরিবেশের একটি বিষয়ের ‘রাজনীতিকরণ’ ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের চেষ্টাটা ‘রেকর্ডেড’ থাকল এই আবেদনের ফলে। তার ফলাফল সেখানে গৌণ।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘ধর্মের নামে অধর্ম করা হচ্ছে। আসলে এখন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে, পরিবেশের সমস্ত বিষয় রাজনৈতিক নেতৃত্বরা হাইজ্যাক করে নিচ্ছেন। এ যেন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে!’’

কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হবে জানা সত্ত্বেও এই আবেদন কেন? পুরমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা শুধু এক দিন সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। এক দিনে বিশাল কিছু ক্ষতি হয়ে যেত না। পরিবেশের ক্ষতি যাতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করেই ছটপুজোর আয়োজন করা হত।’’

গত বছরই সরোবরের পরিবর্তে অন্যত্র ছটপুজোর ব্যবস্থা করতে বলেছিল পরিবেশ আদালত। সেইমতো কেএমডিএ কয়েকটি জায়গায় ব্যবস্থাও করে। কিন্তু দেখা যায়, সরোবরেই সব থেকে বেশি ভিড় হয়েছিল। গেট ভেঙে সেখানে পুজো-জনতা ঢুকে পড়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন ছিল কার্যত দর্শকের ভূমিকায়। ওই ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়েও রাজ্য সরকার স্পষ্ট বলেছিল, পুজোর জন্য জড়ো হওয়া জনতার উপরে কোনও ভাবেই লাঠি চালানো হবে না। পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘তাতে আদালতের অবমাননা হলেও তাকে গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য সরকার। এ বারও যেমন দিল না! না হলে ফের কেউ সরোবরে পুজোর জন্য আবেদন করে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Environment KMDA Rabindra Sarobar Chhath Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy