—প্রতীকী চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ, মালদহের ইংরেজবাজার, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর।
একের পর এক বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে বেআইনি বাজি কারবারের রমরমার চিত্রটা। বার বার প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কারখানা চলে কী করে? অনেকের দাবি, উৎসব এলে বাজির বিপদ আরও বাড়ে। রীতিমতো বারুদের স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু এলাকা। অভিযোগ, চলতি বছরেও একই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাজি বিক্রির কিউআর কোড নিয়ে পুলিশ নমনীয় ভূমিকা নেওয়ায়।
সূত্রের খবর, বাজি বাজারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশের বৈঠকে শনিবার আলোচনা হয়েছে বাজির কিউআর কোড নিয়ে। কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, তা বোঝার প্রধান মাপকাঠি এই কোড স্ক্যান করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেন বাজি বাজারের প্রতিনিধিরা। তাঁরা এ-ও জানান, বাজি প্রস্তুত এবং বিক্রির ব্যাপারে নজরদারি চালানোর কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট' বা নিরি-র তরফে নতুন ভাবে কিউআর কোড তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে না। ফলে বাজি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। পরে বাজি বাজার হলে সেখানে বিক্রি করতেও সমস্যা হতে পারে।
সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে পুলিশের তরফে সমাধান হিসাবে জানানো হয়, রাজ্যের যে ক‘টি সংস্থা অতীতে নিরি থেকে বাজি তৈরির শংসাপত্র পেয়েছে, বাজি বাজারে তাদের তালিকা টাঙিয়ে দিতে হবে। শুধুমাত্র ওই সংস্থার বাজিই বিক্রি করা যাবে বলে উল্লেখ থাকবে। পাশাপাশি, সংস্থাগুলিকে নিজের মতো করে কিউআর কোড বানানোরও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এক বাজি ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘গুগল অ্যাপে স্ক্যান করলেই বেরিয়ে আসবে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিরি-র ছাড়পত্র। তা হলেই এ নিয়ে সমস্যা থাকার কথা নয়। তাই আমরাই কোড বানিয়ে নিচ্ছি।’’
পরিবেশকর্মী থেকে সচেতন নাগরিকদের অনেকেই যদিও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, নিরি-র কর্তারা বার বার স্পষ্ট জানিয়েছেন, শুধু তাঁদের কিউআর কোড-ই বৈধ। প্রতিটি বাজির জন্য আলাদা আলাদা কিউআর কোড থাকার কথা। এই কোডের উপরে সিএসআইআর এবং নিরি-র লোগো থাকবে। নিরি-র নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ দিয়ে স্ক্যান করলে তবেই প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের পাশাপাশি কোন উপাদান দিয়ে বাজিটি তৈরি হয়েছে, তা জানা যাবে।
নিরি-র প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলুও অতীতে কলকাতায় কর্মশালায় বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আমাদের কিউআর কোড এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ, সুরক্ষিত। বাকি সবই জাল করা সম্ভব। যে কেউ নিজের মতো করে কিউআর কোড ছাপিয়ে বাক্সের গায়ে লাগিয়ে দিতে পারেন। ফলে নিরি-র অ্যাপে স্ক্যান করে দেখে না নেওয়া পর্যন্ত কোনও বাজি বৈধ কি না, জানা সম্ভব নয়।’’ সাধনা রবিবার বলেন, ‘‘এমন বহু বাজি কারখানা রয়েছে, যাদের হয়তো নিরি-র ছাড়পত্রই নেই। কোনও এক সময়ে তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছিল। সেই আবেদনপত্রই অ্যাপ প্রস্তুতকারী সংস্থাকে দিয়ে কিউআর কোড বানিয়ে ঢুকিয়ে দিতে পারে তারা। স্ক্যান করে সেটা দেখেই বাজি বৈধ বলে বিক্রি হলে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’’
তা হলে উপায়? নিরি-র কেন্দ্রীয় দফতরের এক বিজ্ঞানী জানান, ব্যবসায়ীদের তৈরি ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, তুবড়ির মতো প্রতিটি জিনিস, আলাদা করে প্রতি বছর পরীক্ষার জন্য দফতরে পাঠাতে হয়। সেগুলি পাশ করলে প্রতিটির জন্য আলাদা করে শংসাপত্র তৈরি হয়। সেটাই কিউআর কোড হিসাবে বাজির বাক্সের গায়ে ছাপা থাকে। কিন্তু যে সংস্থা এই শংসাপত্র অনুযায়ী কোড বানায়, তাদের সঙ্গে দরপত্রের চুক্তি নবীকরণ হয়নি। ফলে নতুন করে কোনও কোড তৈরি হচ্ছে না। নিরি-র বর্তমান অধিকর্তা অতুলনারায়ণ বৈদ্য যদিও বলেন, ‘‘কথাবার্তা চলছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
কিন্তু তত দিন? উৎসবের আগে কি তবে যে কোনও মূল্যে চলতে থাকবে যেমন খুশি বাজি তৈরি? পর পর বিস্ফোরণে মৃত্যুর পরেও কি হুঁশ হবে না? উত্তর মেলেনি কোনও তরফেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy