কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।
‘ঘুষতন্ত্র’ আছেই। কলকাতা পুরসভায় পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ করাতে এলে টেবিলের তলা দিয়ে ‘কিছু’ দিতে হবে, পুর আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশের মধ্যে অলিখিত নিয়ম এটাই। সে মিউটেশন বা অন্য পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ যা-ই হোক, এটা ছিল পুর মহলের একাংশের ক্ষেত্রে ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য’! কিন্তু প্রতিবাদ করলে কাজ আটকে যাওয়ার ভয়ে এত দিন নাগরিকেরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন না। ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে সরাসরি মেয়রের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে ফিসফিসানির সেই অচলায়তন কিছুটা হলেও ভেঙেছে। নাগরিকেরা সাহস করে সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। যার জেরে পুর মহলের ঘুষ দুর্নীতি রুখতে কিছুটা বাধ্য হয়েই বিশেষ দল গঠন করলেন পুর কর্তৃপক্ষ! শুধু ঘুষই নয়, কাটমানির অভিযোগ পেলেও সেই বিশেষ দল তদন্ত করে দেখছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, বিশেষ দলটি বিভিন্ন বরো অফিসে আচমকা অভিযান চালিয়ে দেখছে, কোথাও কোনও রকম অনিয়ম হচ্ছে কি না। পরিষেবা নিতে আসা নাগরিকদের সঙ্গে কথাও বলবেন দলের সদস্যেরা। কাটমানি প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আসার পরে পুরসভার এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পুরকর্তাদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার অন্দরে যে কাটমানি, ঘুষের অভিযোগ ছিল, তা নির্মূল করার প্রাথমিক ধাপ এটা।
পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘বিশেষ দল তৈরি করতে কলকাতা পুলিশের থেকে লোক নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরসভার কর্মীরাও রয়েছেন। কোথাও অনিয়ম হচ্ছে কি না দেখতে তাঁরা বরো অফিসগুলিতে ঘুরে ঘুরে অভিযান চালাচ্ছেন। কাটমানি, ঘুষ, দুর্নীতি সব কিছুই নজরে রাখা হচ্ছে।’’ কর্মীদের কাজে নজরদারি চালাতে বরো অফিসগুলিতে সিসি ক্যামেরাও লাগানো হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুর কমিশনার।
প্রসঙ্গত, ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ইতিমধ্যেই নাগরিকদের একাংশ বিভিন্ন দফতরের অসহযোগিতার কথা বলেছেন। কী ভাবে পুরসভায় কাজ করাতে গিয়ে তাঁদের হেনস্থা হতে হয়, তা সরাসরি জানিয়েছেন তাঁরা। পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি বস্তি দফতরের দু’জন আধিকারিকের বিরুদ্ধেও কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘বিষয়টি এখনও আমার নজরে পড়েনি। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কেউ অভিযোগ
করেছেন, না কি অভিযোগের সত্যিই ভিত্তি আছে, তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।’’ পাশাপাশি, পুরসভায় কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে। সে সবেরও তদন্ত করবে ওই বিশেষ দল।
তবে পুরকর্তাদের অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, পুরসভায় কোনও কাজ করাতে এলে বহু ক্ষেত্রেই নাগরিকদের হেনস্থা হতে হয়। শুধু দালাল-চক্রই নয়,
পুরকর্মী-আধিকারিকদের একাংশ সরাসরি সেই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন। কাজ করে দেওয়ার পরিবর্তে নাগরিকদের থেকে ঘুষ চাওয়া হয়। তা না দিলে কাজ করা হয় না অথবা কাজে অনর্থক দেরি করা হয়। এক
পুরকর্তার কথায়, ‘‘এটা অস্বীকারের কোনও উপায় নেই যে পুরকর্মীদের একটা অংশ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। এত দিন মানুষের থেকে সরাসরি অভিযোগ শোনার কোনও উপায় ছিল না। ‘টক টু মেয়র’
অনুষ্ঠান নাগরিকদের সামনে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।’’
নাগরিকদের যাতে পুরসভায় আসতে না হয়, তাই সব কাজকর্মই অনলাইনে চালু করার পরিকল্পনা করছেন কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে অনেক পরিষেবাই অনলাইনে চালুও
হয়েছে। পুরসভার ফাইল সংক্রান্ত কর্মসংস্কৃতি পুরো বদলে দিয়ে অনলাইন করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। পুর কমিশনারের কথায়, ‘‘অফিসে যত কম লোক আসবেন, তত দুর্নীতির আশঙ্কা কম থাকবে। সব কাজ যাতে অনলাইনেই করা যায়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। তাতে কাজে
স্বচ্ছতা আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy