আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা মহম্মদ সুলেমান। —নিজস্ব চিত্র।
সকালে স্ত্রী ফোন করে সুখবরটা দিল। আমাদের দুই ছেলেই পরীক্ষায় পাশ করেছে। বড় ছেলে দ্বিতীয় হয়েছে। ছোট ছেলে তৃতীয়। আর তারদু’ঘণ্টা পরেই এল দুঃসংবাদ। স্ত্রী রাজ বিবি জানাল, আগুন লেগে আমাদের বাড়ি ভস্মীভূত হয়েছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গিয়েছে দুই ছেলের রেজাল্টও।
আমি গাড়ি চালাই। সকালেই সেই কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আগুন লাগার খবর যখন পাই, তখন ছিলাম সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। ছেলেদের ভাল ভাবে পাশ করার আনন্দ নিমেষে পরিণত হল উদ্বেগ ও আতঙ্কে। পড়িমরি করে ছুটে এলাম বাড়িতে।
বড় ছেলে সাত বছরের মহম্মদ জোহির মোল্লা তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠল। ছোট ছেলে চার বছরের মহম্মদ ফায়জান মোল্লা এ বার উঠল দ্বিতীয় শ্রেণিতে। দু’জনেই স্থানীয় সরকারি স্কুলে পড়ে। আগুন লাগার সময়ে বাড়িতে স্ত্রী এবং দুই ছেলে ছিল। আমি এসে দেখি, গোটা বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। প্রথমে স্ত্রী এবং দুই ছেলেকেও খুঁজেপাচ্ছিলাম না। চার দিকে তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। অনেক পরে খোঁজ পেলাম স্ত্রী এবং দুই ছেলের। আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লরাজ। ওকে সান্ত্বনা দেব কী, আমিও কেঁদে চলেছি তখন। কত ক্ষতি হল আমাদের! কিছু দিন আগেই ১৩০০ টাকা দিয়ে এক বস্তা চাল কিনে মজুত করে রেখেছিলাম। সব চাল পুড়ে গিয়েছে।
ছেলে দুটো পরীক্ষায় এত ভাল ফল করল, অথচ আনন্দই করতে পারল না। বড় ছেলে আমাকে বলেছিল, ‘‘বাবা, আমি ভাল রেজাল্ট করলে আমাকে একটা সাইকেল কিনেদিও।’’ জানতাম ছেলে ভাল রেজাল্ট করবে। তাই জোহিরকে সাইকেল কিনে দেব ঠিক করেছিলাম। সমস্ত কথাও হয়ে গিয়েছিল। এখন আর কী করে ওকে সাইকেল কিনে দেব? ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে। আমরা এখন কী খাব, কোথায় থাকব, সেটাই তো জানি না।
ক্ষতি শুধু আমাদের হয়নি। হয়েছে গোটা বস্তির। এই পাড়ার দু’টি ছেলে এবং একটি মেয়ের বিয়ে সামনেই। আগুনে তাঁদের পরিবারও সর্বস্ব খুইয়েছেন। ফলে বিয়ে হওয়া নিয়েই চিন্তায় পড়েছে ওই তিনটি পরিবার। প্রায় ১০ বছর আগে এই বস্তিতে আগুন লেগে সব পুড়ে গিয়েছিল। আবার এক বার আগুনের গ্রাসে সব হারালাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy