অতিথি: বিধাননগর মেলায় কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা। নিজস্ব চিত্র
শীতের শহরে দেখা মেলে ওঁদের। কাশ্মীরি শাল থেকে আখরোট-পেস্তা-বাদামের পসরা নিয়ে দোরে দোরে ঘুরতে থাকেন বিক্রির আশায়। তবে এ বারের শীতে তাঁদের সেই চেনা হাসিমুখ কিছুটা অমিল। ব্যবসার আশায় ঘর থেকে বহু দূরের শহরে এলেও আশঙ্কা এখন নিত্যসঙ্গী ওই কাশ্মীরি শালওয়ালাদের।
কেমন আছেন তাঁরা? শীতের পোশাক থেকে আখরোট, পেস্তা-বাদাম বা কাওয়া চায়ের পসরা নিয়ে বিধাননগর মেলায় স্টল দিয়েছেন বেশ কিছু কাশ্মীরি ব্যবসায়ী। মোট ৪০টি স্টলে মিলছে কাশ্মীরি পোশাক এবং খাবার। প্রশ্নটা শুনে খানিক থমকালেন শ্রীনগরের ইমরান শওকত। ‘‘পর্যটন থেকে শুরু করে ব্যবসা, কাশ্মীরে সবই প্রায় বন্ধ। ইন্টারনেট আজও চালু হয়নি। বড় বিপদের মধ্যে রয়েছি। তবু এখানে শীতের মরসুমে কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে।’’—এক দমে বলে গেলেন ইমরাম। জানালেন, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরে থাকার কথা রয়েছে তাঁদের। কিন্তু তার পরে?
সদ্য বিয়ে করা বৌকে রেখেই কলকাতায় চলে এসেছেন ইমরান। ফিরে যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে আনন্দ নয়, আশঙ্কা ফুটে ওঠে তাঁর চোখেমুখে। আকাশের দিতে তাকিয়ে বলেন, ‘‘কে জানে তার পরে কী। দেশে তো কোনও কাজ নেই। গ্রামে তবুও ঘরে ঘরে ছ’মাসের খাবার মজুত রাখা থাকে। কিন্তু শহরের অবস্থা আরও খারাপ।’’
সেই খারাপ অবস্থার কিছুটা বদল ঘটাতে কলকাতাই আপাতত বড় ভরসা ইমরানদের। এ শহর যেন ওঁদের খড়কুটো, যাকে আঁকড়ে ধরে জীবনযুদ্ধে কোনও ভাবে ভেসে থাকতে চাইছেন তাঁরা।
কলকাতায় কাশ্মীরি কাওয়া চায়ের স্বাদ পৌঁছে দিতে মেলায় স্টল দিয়েছেন শ্রীনগরবাসী বিলাল আহমেদ। ভিড়ও হচ্ছে বিস্তর। মোগল আমল থেকে প্রচলিত এই চা কী ভাবে তৈরি হয়, কী কী উপকরণ লাগে, তা নিয়ে ক্রেতাদের উৎসাহও রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। সেই চা-ব্যবসায়ী বিলাল অবশ্য ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। চা তৈরির যন্ত্রে কয়লা ভরতে ভরতে বললেন, ‘‘সব দিন খারাপ যাবে, এমনটা হতে পারে না। নিশ্চয়ই সুদিন ফিরবে।’’
তবে সুদিন আসতে যে এখনও দেরি আছে, তা হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছেন শ্রীনগরের বড়গাঁওয়ের শাজাদ আহমেদ সফি। গত অগস্টে কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট। যার ফল ভুগতে হচ্ছে কলা বিভাগের ছাত্র শাজাদের মতো আরও অনেক পড়ুয়াকে। কলেজে ছুটি থাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিধাননগর মেলায় আসা শাজাদ বলছেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধে খুব সমস্যায় পড়েছি। পড়াশোনা চালাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। জানি না দেশে ফিরে গিয়ে কী দেখব।’’ আশার আলো দেখছেন না শাল বিক্রেতা জইন ইকবালও। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসার কাজে প্রায়ই
কলকাতায় আসেন। বলছেন, ‘‘কাশ্মীরে পর্যটন, আপেল চাষ, হাতের কাজ করেই সংসার চলে। সে সবই এখন বন্ধ। পরিস্থিতি ভাল হওয়ার কোনও আশা দেখছি না। এখানে তবু কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে।’’
বিপদের দিনে বাংলায় আসা এই কাশ্মীরিদের আপন করে নিয়েছে শহরবাসীও। সল্টলেকের প্রাক্তন বাসিন্দা দিলীপ বসু বলছেন, ‘‘৩০ বছর সল্টলেকে ছিলাম। নিসারবাবা, ইকবাল, সাবির আরও কত নাম। ওরা সব তো আমাদের ঘরের ছেলেই হয়ে গিয়েছে।’’ শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ছোটবেলায় মা শাল কিনে দিয়েছিল। আজও রেখে দিয়েছি। ওঁরা ছাড়া এমন শাল কে তৈরি করবে! বাংলা যে ওই কাশ্মীরিদের রুজি-রোজগারের কিছুটা হলেও সুরাহা করছে, সেটাই ভাল লাগা।’’
এ শহরের উপরে ভরসা রাখছেন ইকবাল কাশ্মীরিও। তিন দশক ধরে বাংলায় ব্যবসা করতে আসা ইকবালের নিজের দোকান রয়েছে শ্রীনগরে। বলছেন, ‘‘দেশের অবস্থা তেমন ভাল নয়। আপনাদের সঙ্গে, বাংলার সঙ্গেই সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক আমাদের। এখানে এলে ভাল থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy