জনস্রোত: রবিবাসরীয় নিউ মার্কেটে উপচে পড়ল ভিড়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
আশা ছিল, স্লগ ওভারে চার-ছয় রানের ফুলঝুরি ছুটবে! কিন্তু বাস্তবে পয়লা বৈশাখের আগে চৈত্রের বাজার ঘুরে দেখা গেল, রান উঠলেও চার-ছয়ের দেখা নেই! তবে সকাল থেকে দুপুরের খাঁ খাঁ ছবিটা কিছুটা হলেও বদলাল বিকেলের দিকে। ক্রেতার আনাগোনায় কিছুটা হলেও প্রাণ ফিরে পেল নববর্ষের বাজার। তবে সেলের বাজারে মন্দা থাকলেও শপিং মলগুলি অবশ্য ফিরেছে চেনা ছন্দে।
একে চৈত্রের শেষ রবিবার। তার উপরে সকাল থেকেই রোদের তেজ ছিল তুলনায় কিছুটা কম। ফলে নববর্ষের আগে রবিবারের চৈত্র সেলের বাজারে সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়বে বলেই আশা করেছিলেন বিক্রেতারা।
শনিবার বিকেলের ভিড় তাঁদের সেই আশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এ দিন বাজারে ক্রেতার সংখ্যায় মন ভরল না বিক্রেতাদের। হাতিবাগানের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘এই সময়ে তো হাতিবাগানের বাজারের গলিতে পা ফেলারও জায়গা থাকার কথা নয়। গাড়ি দাঁড় করাতে গেলেও ভোগান্তি হওয়ার কথা! কিন্তু তার কিছুই কি দেখা যাচ্ছে?’’ আর এক ব্যবসায়ী গোপী সাউ বললেন, ‘‘গত দু’বছর তো করোনার জন্য বিক্রিবাটা লাটে উঠেছিল। এ বছর করোনার প্রকোপ খানিক কমেছে বলে জিনিসপত্র বেশি করে তুলেছিলাম। কিন্তু যা দেখছি, ঘরের জিনিস ঘরেই থেকে যাবে মনে হচ্ছে। যা বিক্রিবাটা হচ্ছে, সবই ওই সন্ধ্যার তিন ঘণ্টায়।’’
একই ছবি নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বাজারেও। এ দিন সকালের দিকে সে ভাবে ক্রেতারা না এলেও বিকেলের ভিড় কিছুটা হাসি ফুটিয়েছে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মুখে। দুপুরে নিউ মার্কেট চত্বর ছিল প্রায় জনহীন। তবে বিকেল গড়াতেই ভিড় জমে ওঠে সেখানে।
এমনকি সেই ভিড় সামলাতে রীতিমতো নাকাল হতে হয় পুলিশকে। এ দিন বিকেলে মায়ের সঙ্গে সেলের বাজারে আসা মেঘনা ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘সারা বছর তো শপিং মলে আর অনলাইনে জিনিস কেনাকাটা করি। কিন্তু চৈত্র সেলের বাজারে দরদাম করে কেনার মজাই আলাদা। গত দু’বছর তো করোনার জন্য সে সব হয়নি। এ বছর আর লোভ সামলাতে পারলাম না।’’
তবে নিউ মার্কেটের বিক্রেতাদের একাংশ বলছেন, ভিড় হলেও কেনাকাটা সে ভাবে হচ্ছে না। ব্যবসায়ী সাহিদুর হোসেন বললেন, ‘‘যা দেখছেন, সব ঘুরে বেড়ানোর ভিড়। অনেকেই আসছেন, খাওয়াদাওয়া করছেন আর চলে যাচ্ছেন। কেনাকাটা সে ভাবে করছেন না।’’
গড়িয়াহাট বাজারেরও একই হাল। এ দিন ‘দেড়শো, দেড়শো’ বলে চিৎকার করছিলেন বিক্রেতা বিপ্লব রায়। শ্রান্ত গলায় বললেন, ‘‘শুধুই গলা ভেঙে যাচ্ছে। লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না।’’ আর এক ব্যবসায়ী মহেশ মণ্ডলের কথায়, ‘‘পয়লা বৈশাখের যে পরিমাণ ভিড় হওয়ার কথা, সে রকম তো কিছুই হচ্ছে না। বিকেলের দিকে তবু কিছু অফিস ফেরত লোকজন আসছেন। যা জিনিস তুলেছিলাম, তা আদৌ বিক্রি হবে কি না তাই ভাবছি!’’
তবে শহরের অধিকাংশ শপিং মল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, নববর্ষের আগে চেনা ছন্দ ফিরেছে সেখানে। কসবার এক শপিং মলে এ দিন ছিল চেনা ভিড়ের ছবি। সেখানকার এক কর্তা কে বিজয়ন বললেন, ‘‘করোনার আগে যেমন ছিল, সেই পুরনো ছন্দই আবার ফিরে আসছে।’’ পুরনো ছন্দের ছবি দেখা গেল পার্ক সার্কাস ও দক্ষিণ কলকাতার আরও দু’টি শপিং মলেও।
তবে শপিং মলই হোক অথবা বিভিন্ন বাজার, সর্বত্রই অসচেতনতার ছবিটা এক। কোভিড-বিধি মেনে চলার বালাই তো নেই-ই, সেই সঙ্গে মাস্ক না পরে বা হাতে ঝুলিয়েই দেদার বাজার করতে দেখা গিয়েছে শহরবাসীর একাংশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy