ঠিক এক মাসের ব্যবধান। একই থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় ফের মৃত্যু।
ফের বিমানবন্দর থানা এলাকায় বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হল। রবিবার রাতে, যশোর রোডের উপরে মাইকেলনগরে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক বৃদ্ধ ও এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এক মাস আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই থানা এলাকারই অধীনে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং যশোর রোডের সংযোগস্থলে লরি চাপা দিয়েছিল একই পরিবারের তিন সদস্যকে। এক মাসের ব্যবধানে একই থানা এলাকায় লরির ধাক্কায় পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। অভিযোগ, রাতের যশোর রোডে লরির দাপাদাপি ঠেকাতে যথেষ্ট সক্রিয় হচ্ছে না পুলিশ।
রবিবার রাত ৯টা নাগাদ মাইকেলনগরের ওই দুর্ঘটনায় কাকলি শর্মা দেবনাথ (৫২) এবং সন্তোষকুমার শীল (৭২) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, দু’জন রাস্তায় ছিলেন। সাঁতরাগাছি-বারাসত রুটের একটি বাস আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লে সেটির পিছনে লরিটি ধাক্কা মারে। সেই লরির চাকায় পিষ্ট হন ওই দু’জন। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সন্তোষের মাইকেলনগরে সেলুন রয়েছে। বাড়ি ফিরতে তিনি বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। কাকলি সম্ভবত নিউ টাউনে কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে ওই বাসটিতে চেপেই মাইকেলনগরে নেমেছিলেন নিউ ব্যারাকপুরে বাড়ি ফেরার জন্য। লরির চাকায় দু’জনের শরীরে একাংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাসটি বারাসতের দিকে যাচ্ছিল। পুলিশের অনুমান, সেটি প্রয়োজনমতো বাঁ দিকে যায়নি। ওই বাস থেকেই নেমেছিলেন মহিলা এবং বৃদ্ধ সেটিতেই উঠতে যাচ্ছিলেন। বাসটি আচমকা দাঁড়ানোয় লরিটি সেটিকে বাঁ দিক থেকে কাটাতে গিয়ে তাঁদের চাপা দেয়। লরির ডান দিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুলিশের তেমনই ধারণা। রাতে বারাসত হাসপাতাল চত্বরে মৃতদের আত্মীয়েরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ওই জায়গায় রাতে গাড়ির রেষারেষি হয়। আড়াই নম্বর গেটের পর থেকে দোলতলা পর্যন্ত বাস ও লরির গতিতেও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অভিযোগ, কখনও এই বেপরোয়া গতির দৌড় চলে বারাসত পর্যন্ত। এমনকি সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশ লরি থেকে টাকা তোলেন বলেও অভিযোগ। ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিরাটি, বাঁকড়া, মাইকেলনগর, সুকান্তনগরের মতো এলাকায় যশোর রোডের ধারে অজস্র গাড়িচালক পানশালা থেকে মত্ত অবস্থায় বেরিয়ে বেপরোয়া গতিতে ছোটেন। রাতে ওই সব রাস্তায় পুলিশের সব সময়ে দেখা মেলে না বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা।
ঠিক এক মাস আগে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কিশোরী কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে স্কুটিতে চেপে যাচ্ছিলেন এক গৃহশিক্ষক। পিছন থেকে বেপরোয়া লরি তাঁদের পিষে দেয়। স্থানীয়েরা জানান, রাতে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিক থেকে লরি যশোর রোডের দিকে ছাড়া হয়। লরি চালকেরা পুলিশের সামনে দিয়েই যশোর রোড ধরে বেপরোয়া গতিতে ছোটেন বলে অভিযোগ। ওই সব রাস্তায় পুলিশ কোথাও কোথাও গার্ডরেল বসালেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি, পাঁচটি মৃত্যু তার প্রমাণ।
এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে বিধাননগর কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার সঙ্গে কথা বলা হয়। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। তবে পুলিশ পথ নিরাপত্তায় ওই সব এলাকায় সব সময়ে সচেষ্ট থাকে। রবিবারের দুর্ঘটনার তদন্তে এ পর্যন্ত যা পাওয়া গিয়েছে, তাতে বাসটি আচমকা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তার জেরে লরি পিছন থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসের পিছনে ধাক্কা মারে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)