নগরপাল বিনীত গোয়েল। —ফাইল চিত্র।
তোমার কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে? লালবাজারে তাঁর ঘরের গেটের দায়িত্ব সামলানো কনস্টেবল পদ-মর্যাদার পুলিশকর্মীকে প্রশ্ন করলেন পদস্থ আইপিএস অফিসার। লাজুক হাসি হেসে কনস্টেবলের উত্তর, ‘‘এখনও নয়। কেন স্যর?’’ আইপিএস এ বার ভারী গলা করে নির্দেশের সুরে বললেন, ‘‘বরযাত্রীর বাস লাগলে আবেদন করে দিতে পারো। প্রস্তাব এসেছে, পুলিশের বাস পুলিশকর্মীর বিয়েবাড়ির জন্য ভাড়া দেওয়া যেতে পারে!’’ হাসি হাসি মুখ করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আর কথা বাড়াননি ওই কনস্টেবল।
গত কয়েক মাস ধরে এই বিয়ের বাস নিয়ে মশকরা চলছে লালবাজারে। কারণ, কলকাতা পুলিশের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দলের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পুলিশের উদ্বৃত্ত বাস পুলিশকর্মীদের বিয়েতে ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের ২৫টি ৫৪ আসনের বাস রয়েছে। যেগুলি মূলত ডিউটির সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পুলিশকর্মীদের পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের বাস সম্পূর্ণ ভরে না। খুব বেশি হলে এক-এক বারে ২০-২৫টি আসন পূর্ণ হয়। বেশ কিছু বাস বহু সময়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। তেমন কাজেও লাগে না। তাই ঠিক হয়েছিল, এমন কতগুলি উদ্বৃত্ত বাস রয়েছে, সে ব্যাপারে সমীক্ষা করা হবে। বাসগুলি কী কাজে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারেও রিপোর্ট দেওয়া হবে সমীক্ষার পরে।’’
রিপোর্টে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার মধ্যে পুলিশকর্মীদের বিয়েতে ভাড়া দেওয়ার
পাশাপাশি সাইবার-সুরক্ষার প্রচারের কাজেও ওই বাস ব্যবহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিষয়টি এর পরে পৌঁছয় কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের কাছে। তিনি অবশ্য রিপোর্ট দেখে প্রথমেই বিয়েবাড়ির জন্য বাস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব বাতিল করে দেন। সূত্রের খবর, নগরপাল নাকি মন্তব্য করেছেন, পুলিশের বাস কেউ ভাড়া নেবে না! বদলে সাইবার-সুরক্ষার প্রচারে ব্যবহার করার বিষয়টি তাঁর মনে ধরে। সেই মতো এ বার কলকাতা পুলিশের এমনই একটি বাসকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ট্যাবলোর আকারে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার এ বিষয়ে বললেন, ‘‘বিয়েতে বাস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব বাতিল হওয়ার পরে সাইবার-সুরক্ষার প্রচারেই মন দেওয়া হয়েছে। বাসটিকে চার দিক থেকে ট্যাবলোর মতো করে সাজানো হচ্ছে। গায়ে বিভিন্ন স্টিকারে সাইবার-সুরক্ষার নানা দিক তুলে ধরা হবে। অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে সেই ব্যক্তিকে কোনও ব্যক্তিগত তথ্য না দেওয়া থেকে শুরু করে সাইবার হেনস্থার পুরোটাই তাতে থাকবে। নাম ভাবা হয়েছে ‘সাই-বাস’। অর্থাৎ, সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাস।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহ থেকেই এই বাস শহরের রাস্তায় নামতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরবে সেটি। এক দিকের সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখা যাবে, বাসের ভিতরের সাজ। অন্য সিঁড়ি থাকবে নামার জন্য। দিনভর ঘোরার মধ্যে কিছু জায়গায় বাসটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে পথচারীদের দেখার জন্য। এর জন্য বেশ কিছু পার্ক এবং এলাকার পাশাপাশি স্কুলের নামও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বাস অভিনব। আপাতত এটা হোক, এর পরে বিয়ের বাস হলেও মন্দ হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy