দুর্গোপূজো আসন্ন, কিন্তু নিম্নচাপের জন্য বৃষ্টির মধ্যে প্যান্ডেলের বাইরের কাজ করা বন্ধ l গৌরীবাড়ি এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আর জি কর-কাণ্ডের জেরে পুজো নিয়ে দোলাচল চলছে গত দেড় মাস ধরে। ফলে, কাজ এমনিতেই এগোচ্ছিল খানিক ধীর গতিতে। এ বার গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো হাজির হয়েছে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি। পুজোর আগে ‘স্লগ ওভার’-এ তাই এখন মাথায় হাত প্রতিমা শিল্পী থেকে পুজোর উদ্যোক্তা— সকলেরই। কোথাও কাজ বন্ধ করে স্রেফ বসে রয়েছেন কারিগরেরা, কোথাও আবার কোনও মতে প্লাস্টিকের আড়ালে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পুজোর আগে সময়মতো প্রতিমা ও মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ হবে কিনা, সেটাই এখন ‘লাখ টাকার প্রশ্ন’।
বৃহস্পতিবার গৌরীবাড়ি এলাকার একটি পুজো মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেল, সামনের মাঠ জলে-কাদায় মাখামাখি। ওই পুজোর উদ্যোক্তা মান্টা মিশ্র বলেন, ‘‘বৃষ্টির জন্য মণ্ডপসজ্জার বাইরের দিকের কাজ কার্যত পুরো বন্ধ। কাদা প্যাচপেচে মাঠে কী ভাবে কাজ হবে? আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। মণ্ডপের অন্দরসজ্জার কাজ চলছে। কিন্তু এখন আমাদের মণ্ডপের বাইরের কাজ শেষ করার বেশি প্রয়োজন ছিল।’’ দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি এলাকার একটি পুজোর উদ্যোক্তা মনোজ সাউ বললেন, ‘‘মণ্ডপের বাইরের কাজ ত্রিপল টাঙিয়ে হচ্ছে। কিন্তু পুরোটা তো হচ্ছে না। মণ্ডপের ভিতরে কাজ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু জায়গা ভিজে রয়েছে। সেই জায়গা দ্রুত শুকিয়ে ফেলতে বড় পাখার বন্দোবস্ত করতে হয়েছে।’’
কাজ কার্যত বন্ধ বাগুইআটির রেলপুকুর এলাকার একটি পুজো মণ্ডপেও। ওই পুজো কমিটির কর্তা উৎপল চন্দ্র বললেন, ‘‘আমাদের মণ্ডপের বাইরের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি। রেলপুকুরের এই অংশে জল ওঠেনি ঠিকই, কিন্তু আশপাশের কিছু অংশে জল জমেছে। আমাদের মণ্ডপের পাশের পুকুরটাই টইটম্বুর হয়ে গিয়েছে। পাম্প করে সেই জল বার করা হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য অনেক শ্রমিক মণ্ডপসজ্জার কাজে এসেও বসে রয়েছেন। আর যাঁরা কাজ করতে চাইছেন, তাঁদের আমরাই কাজ করতে দিচ্ছি না। কারণ, বৃষ্টির মধ্যে বাঁশে উঠে কাজ করা আরও বিপজ্জনক।’’
প্রায় একই অবস্থা কুমোরটুলিতেও। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে প্লাস্টিক দিয়ে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে শিল্পীদের স্টুডিয়োগুলি। প্রতিমার রং শুকোতে কোথাও কোথাও বড় পাখা চালিয়ে রাখা হয়েছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সভাপতি মন্টু পাল বলেন, ‘‘প্রতিমার রং শুকোচ্ছে না। বাইরে থেকে যে সমস্ত কারিগর এই সময়ে কুমোরটুলিতে কাজে আসেন, তাঁদের অনেকে আসতে পারছেন না। তবে যে সব প্রতিমার এখনও মাটির কাজ চলছে, সেখানে সমস্যা সব চেয়ে বেশি। মাটিই না শুকোলে কাজ এগোবে কী করে?’’
আর এক মৃৎশিল্পী অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘গণেশ পুজোর পরে দুর্গার কিছু বায়না নিয়েছিলাম। সেই সমস্ত প্রতিমার মাটির কাজই শেষ হয়নি। এ দিকে, মাটি না শুকোলে কাজও এগোতে পারছি না! কিছু সংগঠনের প্রতিমার কাজ আবার মণ্ডপে গিয়ে করতে হয়। টানা বৃষ্টির জন্য সেখানেও কাজ করা যাচ্ছে না।’’ শিল্পী মালা পালের কথায়, ‘‘আমার কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু তার সবই প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা আছে। কারণ, উদ্যোক্তারা বৃষ্টিতে প্রতিমা নিতে আসতে পারছেন না। আমার তৈরি একটি প্রতিমা বিমানে কাতার যাওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টি না কমলে সেটিকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে কী ভাবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy