Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Death

ছেলের মৃত্যুতে অভিযুক্ত ডাক্তার, মেডিক্যালে বিক্ষোভ বাবা-মায়ের

সরশুনা থানা এলাকার শিবরামপুরের বাসিন্দা দেবাশিস পাল ও সোমা পালের একমাত্র সন্তান দীপঙ্করের রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে বছরখানেক আগে। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন দীপঙ্কর।

An image of Death

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
Share: Save:

চিকিৎসক আশ্বাস দিয়েছিলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু বার বার জিজ্ঞাসা করা হলেও ওই তরুণের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বিস্তারিত কিছু জানাতেন না বলে দাবি বাবা-মায়ের। তাঁদের না জানিয়েই বেশি ডোজ়ের ইনজেকশন দেওয়া হয়। তার পরেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কয়েক দিনের মধ্যে একমাত্র ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ বাবা-মায়ের। দিনকয়েক আগে হাসপাতালের উপাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করার পরে, কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানতে বুধবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান দম্পতি। অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে দেখতে পেয়ে তাঁর উপরে চড়াও হন ওই তরুণের বাবা-মা।

নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেন ওই চিকিৎসককে। তাতে আরও রেগে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন ওই দম্পতি। উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে কান্নায় মাটিতে আছড়ে পড়ে ছেলের মৃত্যুর সুবিচার চাইতে শুরু করেন মা। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি পুলিশকর্মীরা গিয়ে দম্পতিকে সরানোর চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও বচসা শুরু হয়। পরে অবশ্য দু’জনকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।

সরশুনা থানা এলাকার শিবরামপুরের বাসিন্দা দেবাশিস পাল ও সোমা পালের একমাত্র সন্তান দীপঙ্করের (২২) রক্তের ক্যানসার (হজকিন্স লিম্ফোমা) ধরা পড়ে বছরখানেক আগে। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন দীপঙ্কর। দেবাশিস জানাচ্ছেন, প্রথমে এসএসকেএমে নিয়ে গেলেও সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁদের। সেই মতো ওই হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক স্বর্ণবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে চিকিৎসা চলছিল দীপঙ্করের।

দেবাশিস বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবু সব সময়ে বলতেন, চিন্তা করতে হবে না। ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু ছেলে ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল।’’ দম্পতির অভিযোগ, গত ১৮ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দীপঙ্করকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সময়ে ওই তরুণের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে বার বার বলা হলেও স্বর্ণবিন্দু তা করেননি বলেই দাবি। দেবাশিস বলেন, ‘‘বার বার মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়েও পাইনি। ফলে দ্বিতীয় মতামত নেওয়ার সুযোগ পাইনি। ডাক্তারবাবু শুধু বলতেন, ছেলে সেরে উঠবে। আমাদের না জানিয়েই হাই-ডোজ়ের কেমোর ইনজেকশনও দিয়েছিলেন।’’ ২৩ নভেম্বর দীপঙ্করকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। সোমা বলেন, ‘‘বাড়িতে ফিরে ছেলে ছটফট করত। বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতাও ছিল না। ছুটির সময়েও বিস্তারিত মেডিক্যাল রিপোর্ট দেওয়া হয়নি।’’ ২৯ নভেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই তরুণের মৃত্যু হয়।

এর পরেই ছেলের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় যান দেবাশিস ও সোমা। ৩ জানুয়ারি প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ এবং পরে সরশুনা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, এ দিন ক্যানসারের ডে-কেয়ারের সামনে চেঁচামেচি করতে থাকেন ওই দম্পতি। সেই সময়ে সেখান থেকে বেরিয়ে উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন স্বর্ণবিন্দু। অভিযোগ, কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে সেখানেই চিকিৎসকের সোয়েটার ধরে টানাটানি শুরু করে চিৎকার করেন সোমা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর পোর্টালে অভিযোগ জমা পড়ার পরে, সেটিরই রিপোর্ট তৈরির জন্য এ দিন সব খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে স্বর্ণবিন্দু শুধু বলেন, ‘‘আমি কেন, কোনও চিকিৎসকই চাইবেন না, রোগী মারা যান। সন্তানশোকে ওঁরা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ওঁদের জন্য পূর্ণ সমবেদনা রয়েছে।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই তরুণের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে পরিজনদের জানানো হয়েছিল। পরে বাড়িতে গিয়ে ওঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাবা-মা যে অভিযোগ করেছেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Medical Negligence Cancer Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy