সাইবার অপরাধীদের খপ্পরে পড়ে বছরে কয়েক কোটি টাকা খোয়াচ্ছেন শহরের নাগরিকদের একাংশ। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের তৎপরতায় সেই টাকা প্রতারকদের হাতে যাওয়ার আগে আটকে যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গেটওয়েতে। আদালতের নির্দেশ মেনে তা ফেরতও দিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, অনেক ক্ষেত্রেই সেই টাকা ফেরত পেতে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আটকে যাওয়া টাকা যাতে দ্রুত ও বিনা বাধায় প্রতারিতদের ফেরত দেওয়া যায়, তার জন্য এ বার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। সম্প্রতি এক বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে। এর পরেই কী ভাবে আটকে দেওয়া টাকা দ্রুত মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন পুলিশকর্তারা।
লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুলিশের ১০টি ডিভিশনে একটি করে সাইবার সেল রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপ-নগরপালের অধীনে। এ ছাড়া, লালবাজারে রয়েছে সাইবার অপরাধ থানা। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ১২ থেকে ১৫টি সাইবার অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ছে বিভিন্ন সাইবার সেল বা থানায়। এর পাশাপাশি গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, প্রতারকেরা বার বার তাদের কাজের ধরন বদল করছে। যার জন্য তদন্তে নেমে মাঝেমধ্যেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এই সমস্যার সুরাহায় সম্প্রতি রাজ্য পুলিশ খুলেছে বিশেষ সাইবার ক্রাইম উইং (সিসিডব্লিউ)। এর অধীনে কাজ করছে প্রতিটি জেলার সাইবার থানা। এ বার সেই ধাঁচেই ঢেলে সাজানো হচ্ছে কলকাতা পুলিশের সাইবার উইংকে। সূত্রের খবর, সাইবার অপরাধ রুখতে লালবাজারের সাইবার থানাকে নিয়ে ছ’টি শাখা গঠন করা হয়েছে। নগরপাল মনোজ বর্মার জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, সাইবার থানার সঙ্গে রয়েছে অর্গানাইজ়ড সাইবার ক্রাইম শাখা, সাইবার নিরাপত্তা এবং সাইবার সেফটি শাখা, সাইবার প্রতারণা রিকভারি শাখা, সাইবার ফরেন্সিক ল্যাব এবং সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন ও সাপোর্ট শাখা। এই শাখাগুলি শুক্রবার থেকেই কাজ শুরু করেছে।
লালবাজার জানিয়েছে, এই ছ’টি শাখা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধানের অধীনে কাজ করবে। সাইবার থানায় সাত জন ইনস্পেক্টর থাকার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে থাকছেন ১০ জন অফিসার এবং ২৫ জন কনস্টেবল। অর্গানাইজ়ড সাইবার ক্রাইম শাখায় আছেন ছ’জন ইনস্পেক্টর এবং ২৫ জন অফিসার। তাঁরা মূলত স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ তৈরি করে সাইবার অপরাধ চিহ্নিতকরণ এবং তা ঠেকানোর কাজ করবেন। বাকি শাখাগুলির দায়িত্বে থাকছেন এক জন বা দু’জন করে ইনস্পেক্টর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)