n দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার সহযোগিতায় ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কেলের বিতর্কসভায় ( বাঁ দিক থেকে) জর্ডন অ্যান্ডারসন, স্বপন দাশগুপ্ত, সাজ়িয়া ইলমি, দীপা ঈশ্বর, দেশরতন নিগম, বিবেক রেড্ডি, কুণাল সরকার, পবন বর্মা, জহর সরকার, সঞ্জয় ঝা, ফারহা নকভি, সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় এবং হেদার রবিনসন। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
দুঃখ করছিলেন রাষ্ট্রীয় সেবক সঙ্ঘের জাঁদরেল নেতা দেশরতন নিগম। ‘‘রামজন্মভূমি এক সামূহিক আর্তির বিষয়। আর ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই হিন্দুদের অধিকার কেড়ে নেওয়া।’’ তাঁর মতে, মুসলিমদের ওয়াকফ-সম্পত্তি থেকে শুরু করে বিজাতীয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ফরমান— সব কিছুর জোরেই ধর্মনিরপেক্ষতা লাঠি ঘোরাচ্ছে হিন্দুদের মাথায়।
এর জবাবে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিয়ন নেত্রী ঐশী ঘোষকে উদ্ধৃত করলেন ফারহা নকভি: ‘‘বিতর্ক, আলোচনার পরিসরেই সব লাঠি, লোহার রডের জবাব দেওয়া হবে!’’ ঐশী এই বাংলার মেয়ে— নারী অধিকার রক্ষা কর্মী, সুলেখিকা ফারহা এটা বলা মাত্র হাততালিতে ফেটে পড়ল ক্যালকাটা ক্লাব। সদ্য ঘটা জেনইউ-কাণ্ডের অভিঘাত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি বা নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গই বার বার ঘুরপাক খেল শুক্রবারের সান্ধ্য বিতর্কের আসরে। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার সহযোগিতায় ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কেলের বচ্ছরকার জাতীয় বিতর্কসভার বিষয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা এক মহা ভাঁওতাবাজি!’ এই মতের বিরুদ্ধ-শিবিরের বক্তারা বারে বারেই ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হলেন।
সভার মতের পক্ষে বিবেকানন্দের শিকাগো-বক্তৃতার ধরতাই দিয়ে কর্নাটকের বিজেপি নেতা বিবেক রেড্ডি বলেন, ‘‘এ দেশ বরাবরই সারা দুনিয়ার নিপীড়িত উদ্বাস্তুদের ঠাঁই দিয়েছে।’’ প্রাক্তন আমলা জহর সরকারের জবাব, ‘‘সে তো ঘটেছিল সিএএ তৈরির অনেক আগে। এখন আর সেটা সম্ভব হত না!’’ ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, সব ধর্মকে গ্রহণ করা। এই যুক্তিতেই স্থিত থেকেছে বিরোধী পক্ষ। কংগ্রেসের সঞ্জয় ঝা উবাচ: ভারতে কখনও একই সঙ্গে এক জন মুসলিম, ইহুদি, শিখ ও পার্সি সামরিক বাহিনীর প্রধান চার গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন। সভার মতের পক্ষে বলতে উঠেছিলেন বামপন্থীদের উপরে ক্ষুব্ধ কেরলে শবরীমালার মন্দিরের পরম্পরা রক্ষার লড়াকু নেত্রী দীপা ঈশ্বর। তিনিও বলে ফেললেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে বহুত্বকে স্বীকার করা।
ধর্মনিরপেক্ষতার ভাঁওতাবাজি বলতে মুসলিম তোষণের নামে মুসলিমদের ক্ষতি করার কথা বলেছেন বিজেপি নেত্রী সাজ়িয়া ইলমি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আসলে মুষ্টিমেয় আলোকপ্রাপ্ত সুবিধাভোগী, বললেন রাজ্যসভার বিজেপি সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত। সম্প্রতি সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের পড়ুয়াদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার শপথ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘নিছক সংবিধান নয়, আসলে সভ্যতাই আমাদের অস্তিত্ব।’’ কিন্তু সভ্যতাই তো সঙ্কটে, বললেন সংযুক্ত জনতা দলের মুখপাত্র পবন বর্মা। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি প্রহারমন্ত্র হয়ে ওঠায় আক্ষেপও করলেন তিনি। রামচন্দ্রকে নিয়ে বই লিখছেন পবন। তাঁর মতে, তুলসীদাসের রামের কাছে পরপীড়নই সব থেকে বড় অধর্ম!
বিতর্কসভার বিশ্লেষক দুই প্রাক্তন ‘ডিবেটিং বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ জর্ডন অ্যান্ডারসন, হেদার রবিনসনের মতে, ধর্মনিরপেক্ষতার উপযোগিতাটুকু সংখ্যালঘুরাই ভাল বোঝেন। বাগ্যুদ্ধের ফাঁকে সঞ্চালক হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকারের সরস টিপ্পনী বিঁধেছে দু’পক্ষকেই। বিরুদ্ধ শিবিরের বক্তা, স্নায়ুশল্য বিশারদ সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হিন্দু, মুসলিম বা অন্য ধর্মের কারও মস্তিষ্কে আজ পর্যন্ত ফারাক দেখলাম না!’’
হাত তুলে সমর্থন করে জনতাও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষেই রায় দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy