টিভিতে বৌবাজারের খবর দেখছেন দুর্গা পিতুরি লেনের পুরনো বাসিন্দা সঞ্জয় বসাক। বৃহস্পতিবার, বেলেঘাটার ভাড়া বাড়িতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট। অভিশপ্ত সে রাতে এক কাপড়ে, প্রাণ হাতে করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের একশোটিরও বেশি পরিবার। ফেলে এসেছিল আসবাব, কাগজপত্র, টাকাপয়সা থেকে শুরু করে প্রায় সর্বস্ব। নিজের শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলবে কী ভাবে— সেই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছিল তাঁদের। বুধবার রাতে বৌবাজারেই পর পর বাড়িতে ফাটলের ঘটনা আড়াই বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি ফের মনে করিয়ে দিল ভুক্তভোগীদের। পুরনো পাড়ায় আর ফেরা হবে কি না, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বৌবাজারের ‘ঘরছাড়া’ পরিবারগুলিকে।
আড়াই বছর আগে বাড়িছাড়া কয়েকটি পরিবারকে পরে ফেরানো হলেও অধিকাংশই এখনও রয়েছেন মেট্রোর তরফে দেওয়া ভাড়া বাড়িতে। বুধবার রাতে ফাটলের খবর শুনে আর ঘুম আসেনি তাঁদেরই এক জন, বেলেঘাটার শুঁড়া ইস্ট রোডের ভাড়া ঘরের বাসিন্দা সঞ্জয় বসাকের। বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতেই তাই ছুটে আসেন বৌবাজারের পুরনো পাড়ায়। এ দিন দুপুরে বেলেঘাটার বাড়িতে বসে সঞ্জয় বললেন, ‘‘সেই শেষ রাতে একরকম টেনেটুনেই আমাদের বার করা হয়েছিল। মেয়ের বিয়ের গয়না থেকে শুরু করে সংসারের সব কিছুই রেখে এসেছিলাম। কী ভাবে যে দিনগুলো কেটেছিল! সকাল হলেই ওখানে চলে যেতাম, যদি ঘরের জিনিস কিছু বার করতে পারি, সেই আশায়। আর কোনও দিন ওখানে ফিরতে পারব বলে তো মনে হচ্ছে না।’’
বেলেঘাটার বারোয়ারিতলা রোডের ভাড়া বাড়িতে থাকা, সত্তরোর্ধ্ব মঞ্জুরানি বসাকও ফাটলের খবর শুনে বৌবাজারে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আটকে দেন মেয়ে। চোখের জল মুছে বৃদ্ধা বলেন, ‘‘তখন মেট্রো বলেছিল, আমাদের ওখানে ঘর করে দেওয়া হবে। কিন্তু মেট্রো চলতে শুরু হওয়ার আগেই বাড়িতে বাড়িতে ফাটল ধরছে। মেট্রো চলতে শুরু করলে কী হবে? ওখানে বাস করা মানে তো প্রাণ হাতে করে বাঁচা।’’
এ দিন সকালে আমহার্স্ট স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে বৌবাজারে আসা সৌমিক নন্দী বললেন, ‘‘সে দিন চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুধু বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। এখানে সবাই তো পুরনো প্রতিবেশী। তাই খবরটা শুনে আর বাড়িতে থাকতে পারলাম না।’’ পৈতৃক ভিটেতে আদৌ আর কোনও দিন ফেরা হবে কি না, সেই আশঙ্কায় ভুগছেন রাজদীপ বড়ালও।
একই সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক। ভবিষ্যতে পুরনো পাড়ায় ফেরার অনুমতি পাওয়া গেলেও নিশ্চিন্তে বাঁচা যাবে তো?— সেই উত্তরই এখন খুঁজছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy