দুর্গাপুজোয় আজকাল লোকে ঠাকুর নয় মণ্ডপ দেখেন। কিন্তু মা কালী নিজেই থিম। —নিজস্ব চিত্র।
চেপে ধরলেও কিছুতেই পুজোর বাজেট বলবেন না নব যুবক সঙ্ঘের পুজো কর্তা প্রবন্ধ রায় ওরফে ফান্টা। এ পর্যন্ত বললে কিছুই বোঝা গেল না। কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্টর পুজোর অধিনায়ক ফান্টা একটু থেমে বলেন, “কেষ্টদার নাম ছাড়া এ ভাবে পুজো করতে পারতাম না! এ সত্যিই মায়ের আশীর্বাদের পুজো! এর বাজেট বললে লোকে ভুল বুঝবে!”
তাঁর প্রয়াণের তিন দশক বাদেও আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট পাড়ার গলির পুজোয় মূর্তিমান মিথের মতো ছেয়ে ফাটাকেষ্ট। ফান্টা বলেন, “আমাদের পুজোর কাজে কাউকে ডাকতে হয় না। ঠিকাদার, ডেকরেটর, ঢাকি, আলো— বছরের ঘড়ি ধরা সময়ে এসে বলবেন, এই এলাম! অনেকেই নামমাত্র টাকায় কাজ করেন!” এ পুজোর সঙ্গে যুক্ত বলে অনেকে দুর্গাপুজোয় বড় কাজ পান!
শোনা যায়, ফাটাকেষ্ট এক বার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের অর্ধেকটা ঝলমলে আলোর চাঁদোয়ায় ঢেকে ফেলেছিলেন। একটি আনকোরা পাখা সংস্থা অজস্র পাখায় ভরিয়ে দেয় এলাকা। এ বছর শুক্রবার প্রতিমা উন্মোচনে দেখা গেল, বহুমূল্য সোনার গয়না ছাড়াও মায়ের গলায় ১০০৮ রুপোর জবা! কে মানত রক্ষা করেছেন! কলকাতার ইউনেস্কো-স্বীকৃতি জয়ী দুর্গাপুজোর এখন বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। পুজোর বড় বাজেট (টাকার উৎস ঠিক থাকলে) অনেকে সগর্বে জাহিরও করেন। কিন্তু গড়পড়তা কালীপুজোর মহিমা অন্য জায়গায়। বাইরের জাঁকজমকে বাজেট বোঝা যাবে না!
শহরের মেয়র তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি) চেতলা অগ্রণীতে যত বড়ই দুর্গাপুজো করুন, আসলে তিনি কালীপুজোর লোক। ‘ববিদার’ পরিকল্পনায় বীরাপ্পনের জঙ্গল, শোলে, অ্যাকোয়ারিয়ামের মণ্ডপ একদা কালীপুজোয় তাক লাগাত! চেতলা অগ্রণীর কর্তা সমীর ঘোষ বলেন, “এখন আমাদের দুর্গাপুজো করতেই হয়! সেই মণ্ডপ খুলে ১০-১২ দিনের মধ্যে কালীপুজোয় আলাদা কিছু করা কঠিন। কোটি টাকার দুর্গাপুজোর পাশে, তিন-চার লক্ষে কালীপুজো করি। তবু কালীপুজোয় সবার আবেগ আলাদা।”
দুর্গাপুজোয় আজকাল লোকে ঠাকুর নয় মণ্ডপ দেখেন। কিন্তু মা কালী নিজেই থিম। ভক্তি-ভালবাসা, কিছুটা ভয়েও লোকে কালী নিয়ে নিরীক্ষার ঝুঁকি নেন না। চেতলায় মাত্র তিন-চার কিলোমিটার জুড়ে ২৫০-৩০০টা পুজো হয়। ডাকাত কালী, চামুণ্ডা, রক্ত চামুণ্ডা, শ্বেতকালী, ঘণ্টাকালী, চন্দ্র ঘণ্টাকালী, কৃষ্ণকালী, শ্বেতকালী, দশমুণ্ডকালী থেকে কেওড়াতলার শ্মশানকালী। ফি-বছর সবার বাঁধা জায়গা। পাড়ার ছোটদের উপস্থাপনায় রক্তমাংসের ধূমাবতী, বগলাদের নিয়ে জ্যান্তকালীর মণ্ডপও রয়েছে।
কালীপুজোর সবটা বাজেট অনেকেই প্রতিমাতেই উজাড় করেন। মা কালী জাগ্রত। পাছে উনি গোঁসা করেন, তাই প্রতিমার ধারাবাহিকতা অটুট থাকবেই!
আমহার্স্ট স্ট্রিটে সোমেন মিত্রের পুজোয় না কি শাসকদলের কোনও কোনও নেতার নজর। তবে পুজোর মাথায় ‘বৌদি’ শিখা মিত্র, বাদল ভট্টাচার্যেরা রয়েছেন। তরুণতর কর্মকর্তা সুশান্ত চক্রবর্তী, রাকেশ বণিক, সুমন রায়চৌধুরীরাও পরম্পরা রক্ষায় সক্রিয়। উদ্বোধনে বা অতিথি হিসাবে আবার অধীররঞ্জন চৌধুরী থেকে তৃণমূলের তাপস রায়, দেবাশিস কুমারদের উপস্থিতি ভারসাম্য রাখে। তৃণমূলের তাপস রায় কিন্তু আমহার্স্ট স্ট্রিটেই ৪৮ পল্লি যুবশ্রী-র পুজোর প্রতি একনিষ্ঠ। তাঁর কথায়, “দুর্গাপুজোতেও আছি অনেকের সঙ্গে! কিন্তু পাঁচটা নয়, এই একটা পুজোর জন্যই টাকা জোগাড় করি!” তিন বছর আগে কালীপুজোর দিনেই মারা যান দাপুটে নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রাণের একডালিয়া এভারগ্রিনের কালীপুজো এখন অতীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy