ভোগান্তি: বৃষ্টির মধ্যেই প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
হাঁটুজল ঠেলে এগোতে হচ্ছিল সামনের দিকে। তারই মধ্যে তীব্র হাওয়ায় উল্টে যাওয়া ছাতা সামলাতে গিয়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন এক যুবক। কোনও মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বাঁ হাতের মুঠোয় ধরা রক্তের নমুনা দেখিয়ে বললেন, ‘‘এটা পড়ে যায়নি, ভাগ্য ভাল।’’ শুধু এই একটি ঘটনা নয়, রেমাল-পরবর্তী নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে সোমবার সকাল থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সামনে দৃশ্যটা ছিল এমনই!
হাসপাতালের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের অদূরেই রয়েছে ওই দু’টি বিভাগ। পাশ দিয়ে যাওয়া যায় স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের (এসটিএম) ভবনে। ওই গোটা চত্বরই জলমগ্ন থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। ভোগান্তির ছবি দেখা গিয়েছে শহরের অন্যান্য হাসপাতালেও। গোটা চত্বর জুড়ে জল জমে না থাকলেও এসএসকেএম, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক ভবন থেকে আর এক ভবনে ট্রলিতে করে রোগীদের নিয়ে যেতে ভরসা ছিল পলিথিন। রোগীদের আপাদমস্তক ঢেকে ট্রলি ঠেলতে দেখা গিয়েছে পরিজনদের!
ভারী বৃষ্টি হলেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসটিএমের বিস্তীর্ণ চত্বর জুড়ে জমা জলের এই ছবিটা ফিরে আসে। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কলকাতা মেডিক্যালের প্যাথলজি বিভাগের সামনে হাঁটুজল ঠেলে যাতায়াত করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রোগীর পরিজন এবং কর্মীরা। সেখানেই স্ত্রীর হাত ধরে হাঁটুজল ঠেলে এগিয়ে আসা ক্যানসার রোগী মুকেশ শর্মা বললেন, ‘‘কোন দিকে যাব, বুঝতে পারছি না। সব দিকেই তো জল!’’ ওই জল ঠেলে কিছুটা এগোতেই এসটিএমের পুরনো ভবন। সেটির বেসমেন্ট পুরো জলমগ্ন। লিফ্ট-ও কার্যত জলে ডুবে থাকায় সামনের বারান্দায় কোল্যাপসিবল গেটে তালা ঝোলানো হয়েছে। পাশে মেডিক্যাল স্টোরেও একই জল-ছবি। শতাব্দীপ্রাচীন ওই বাড়ির চার দিকে হাঁটুজল। সেই জল ঢুকেছে রক্ত পরীক্ষার ঘরেও। চেয়ারে পা তুলে বসে থাকা কর্মী বললেন, ‘‘জমা জলের মধ্যে তো কারও রক্ত সংগ্রহ সম্ভব নয়। তাই তেতলায় ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
ভোগান্তির কথা মানছেন এসটিএমের অধিকর্তা শুভাশিসকমল মিত্র। তিনি জানালেন, এসটিএমের হাসপাতাল ভবন থেকে সামনের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং পাশের কলুটোলা লেন অনেকটা উঁচু। ওই রাস্তার জমা জল না নামলে হাসপাতালের ভিতরের জলও নামানো যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীদের ভোগান্তি হলেও পরিষেবা সচল ছিল। নতুন ভবনে বর্ধিত বহির্বিভাগ ও মেডিক্যাল স্টোর সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু ভবনটি এখনও পূর্ত দফতর হস্তান্তরিত করেনি।’’ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের দিকের নিকাশি নালা দিয়ে কলকাতা মেডিক্যালের দক্ষিণ দিকের জল বেরোয়। কিন্তু বড় রাস্তার নিকাশি নালা ভরে থাকার কারণেই সমস্যা হয় বলে দাবি কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসেরও।
এ দিন এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজি বিভাগের সামনে জমা জল ঠেলেই বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে ঢুকতে হয়েছে রোগীদের। হাসপাতালের এক ভবন থেকে অন্যত্র রোগীদের পলিথিন চাপা দিয়েই নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তীব্র হাওয়ায় বার বার পলিথিন উড়ে যাওয়ায় ভিজে একসা হতে হয়েছে রোগীদের। রেডিয়োথেরাপি বিভাগ থেকে এমন ভাবে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মালদহের যুবক বিশু মণ্ডল বললেন, ‘‘এত ভিজলে জ্বর এসে তো আরও সমস্যা তৈরি হবে।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জল যাতে জমে না থাকে, তার জন্য অনেকগুলি পাম্প কাজে লাগানো হয়েছে। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখে আগেই গাছের ডালপালা ছাঁটা হয়েছিল। কারণ, আগের ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে সমস্যা হয়েছিল।
পলিথিন মুড়ে যাতায়াতের ছবি দেখা গেল ন্যাশনাল মেডিক্যালেও। পেটে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে আসা বারুইপুরের কল্পনা চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তির আগে এক্স-রে করিয়ে আনতে বললেন চিকিৎসকেরা। অগত্যা তীব্র বৃষ্টির মধ্যেই পলিথিন চাপা দিয়ে তাঁকে ট্রলিতে করে জরুরি বিভাগ থেকে এক্স-রে করার ভবনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু দমকা হাওয়ায় বার বার উড়ে যাচ্ছিল সেই পলিথিন। জরুরি বিভাগ থেকে রাজা রামমোহন রায় ব্লকে যাওয়া রোগীদের সকলেরই ভরসা ছিল পলিথিন। কর্মীরা জানাচ্ছেন, রবিবার রাতে গোরাচাঁদ রোডের জমা জল ঢুকেছিল হাসপাতালের ভিতরেও। সকালে হাসপাতালের ভিতরে জল না জমলেও রাস্তা জলমগ্ন থাকায় ভোগান্তি হয়েছে রোগীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy