রাজ্যের পুর আইন মেনে সোমবার বোর্ড অব কাউন্সিলর্সের বৈঠকে পদত্যাগ করলেন পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায়। সর্বসম্মত ভাবে সেই পদত্যাগ গৃহীত হয়। আগামী ২১ মার্চ ফের পুর বোর্ডের বৈঠক ডেকেছেন উপ পুরপ্রধান। সেই দিন নতুন পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা হতে পারে।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নতুন পুরপ্রধান পদে কাকে বসানো হবে, সে বিষয়ে আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এ দিন পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার পরে অমরাবতী মাঠ বিক্রির প্রসঙ্গে মলয়ের ‘খেলা শেষ হয়নি’ বার্তায় নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের স্থির করা ব্যক্তি যাতে পুরপ্রধান পদে না বসতে পারেন, তার জন্য নতুন কোনও সমীকরণ তৈরি হচ্ছে? যার নেপথ্যে এত দিন ধরে পদত্যাগে নারাজ থাকতে মলয়কে ‘সাহস’ জোগানোর কেউ রয়েছেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে।
পুরপ্রধানের পদত্যাগ নিয়ে টালবাহানার বিষয়ে বিধায়ক নির্মল ঘোষের ভূমিকা নিয়ে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহের এ দিনের মন্তব্য সেই জল্পনায় ঘৃতাহুতি দিয়েছে। অর্জুন বলেন, ‘‘মলয়দার দল ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর নির্মলদা নিজের লাভের জন্য সব কিছুর সঙ্গে আপোস করে নেন।’’ অর্জুন আরও বলেন, ‘‘আসলে তৃণমূল নির্মলদাকে জুজু দেখাচ্ছে। অনুপম দত্ত খুনের ঘটনায় ওঁর জামাইকে ফাঁসিয়ে দেবে। না হলে উনি ঠিক বিদ্রোহ করে দিতেন।’’ যদিও নির্মল শুধু বলেছেন, ‘‘এ সব কথা অর্থহীন।’’
এ দিন পানিহাটি পুরসভার বোর্ডের বৈঠকে মলয়-সহ মোট ৩৩ জন পুরপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এক তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি জেলে থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। সিপিএমের এক জন পুরপ্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেননি। তবে কংগ্রেসের এক জন এবং বাকি তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ দিনের বৈঠককে ঘিরে উত্তেজনা ছিল পুরসভায়। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সহকারী নগরপালের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন ছিল পুরসভা চত্বরে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১২টার কিছু পরে বৈঠক শুরু হয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে তা শেষ হয়। বিদায়ী পুরপ্রধান মলয় বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ সকলকে মেনে চলতে হয়। তাই আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণে সকলেই সম্মতি দিয়েছেন।’’
পদত্যাগ গ্রহণে ভোটাভুটির কথা আগে বললেও পরে তা প্রত্যাহার করেছিলেন মলয়। এ দিন কোনও পুরপ্রতিনিধি অবশ্য তা নিয়ে কথা তোলেননি। বৈঠক থেকে বেরোনোর সময়ে পুরপ্রতিনিধি তথা পানিহাটি শহর (পূর্ব) তৃণমূলের সভাপতি সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে সর্বসম্মতিতে পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। দলনেত্রীর সিদ্ধান্তের উপরে ভোটাভুটির কোনও প্রসঙ্গই উঠতে পারে না।’’ যদিও নতুন পুরপ্রধান নিযুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে মলয় জানান, সিপিএম ও কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধিরা চাইলে ভোটাভুটি হতে পারে। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘দল যাঁকে পুরপ্রধান পদপ্রার্থী করবেন, তাঁকে আমাদের সমস্ত পুরপ্রতিনিধিরা সমর্থন করবেন।’’ বৈঠক থেকে বেরিয়ে মলয় এ দিন বিধায়ক-পুত্র তথা চেয়ারম্যান পারিষদ সদস্য তীর্থঙ্কর ঘোষের ঘরে গিয়ে বসেন।
এ দিনও অমরাবতী মাঠ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মলয়কে। তিনি বলেন, ‘‘মাঠ বিক্রি নিয়ে যাঁরা নোংরামি করলেন তাঁরা, নাকি ওই মাঠ বিক্রি না হওয়াটা সত্য— তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।’’ মলয় আরও বলেন, ‘‘আগামী এক মাসের মধ্যে দল সব সামনে আনবে আশা করি। আর আমি এতে যুক্ত ছিলাম না, সেটা পুরমন্ত্রী ক্লিনচিট দিয়েছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)