গয়ংগচ্ছ: এ ভাবেই হাসপাতাল চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা। শুক্রবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: সুমন বল্লভ।
চোর পালালে যেমন বুদ্ধি বাড়ে, প্রাণ গেলেও তেমন টনক নড়ে! প্রতি বছরের মতো এ বছরেও ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলার ধরন দেখে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করছেন শহরের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ।
শুক্রবার কলকাতা পুরভবনে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৭০০। এ সপ্তাহে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০২। এক সপ্তাহে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে, তা চিন্তার বিষয়।’’ গত তিন দিন ধরে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ তাঁর দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রতি বারই সংক্রমণ তুঙ্গে ওঠার এবং বেশ কিছু প্রাণ চলে যাওয়ার পরে কেন টনক নড়ে পুরসভার? বিরোধীদের প্রশ্ন, বর্ষা যখন শুরু হল, তখনই কেন পথে নামলেন না মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)?
এই মরসুমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা পুরসভার দশ নম্বর বরোর অন্তর্গত। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের ১৬টি বরোর মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক দশ নম্বর বরোয়। সেখানে গত এক মাসে তিন জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। গত বছরেও এই বরো আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষ স্থানে ছিল। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘গত বছরের চেয়েও এ বার ডেঙ্গি পরিস্থিতি বেশি উদ্বেগজনক। অথচ, কলকাতা পুরসভার বাজেটে মশাবাহিত রোগ দূরীকরণে মোটা টাকা বরাদ্দ করা হয়। আমাদের প্রশ্ন, তা হলে ভেক্টর কন্ট্রোলের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাজের কাজ কী হচ্ছে?’’ কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘ডেঙ্গি যখন মহামারির চেহারা নিতে চলেছে, তখন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) রাস্তায় নামছেন। কেন তিনি আগে পরিদর্শনে বেরোননি? পুর স্বাস্থ্য বিভাগ যদি সত্যিই ঠিক মতো কাজ করত, তা হলে ডেঙ্গি এত ভয়াবহ আকার নিত না।’’
এ দিন অতীন তাঁর দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে কলেজ স্ট্রিটের নির্মীয়মাণ ‘বর্ণপরিচয়’ বাজার ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে দেখেন। দু’জায়গাতেই ডেঙ্গিবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মিলেছে। ‘বর্ণপরিচয়’ ভবনের একাধিক অংশে জমা জল ও আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখে বাজারের ব্যবসায়ীদের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অতীন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়েও ছ’টি জায়গায় নানা সামগ্রী পড়ে আছে দেখে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করেন অতীন। তাঁকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
পরিদর্শনের শেষে পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার বৈশাখী বিশ্বাসকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য)। ইডেন ভবনের পিছনে একটি তালাবন্ধ জায়গায় পরিত্যক্ত সামগ্রী পড়ে ছিল। পুরসভা ও হাসপাতালের আধিকারিকদের কাছে অতীন জানতে চান, সেখানে তালা খুলে মশা মারার তেল স্প্রে করা হয় কি না? বৈশাখী জানান, এ বিষয়ে হাসপাতালকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এর পরেই ক্ষুব্ধ অতীন তাঁকে বলেন, ‘‘কেবল নোটিস দিলেই কাজ হবে না। কেন সশরীরে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি?’’ মুখ্য পতঙ্গবিদকেও সতর্ক করেন তিনি।
ডেঙ্গি এই হারে বাড়ছে কেন? অতীনের সাফাই, এখন পরীক্ষা বেশি হচ্ছে বলেই ডেঙ্গি ধরা পড়ছে বেশি। এ বার পরীক্ষার সংখ্যা গত বছরের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) বলেন, ‘‘বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি করছেন। ওঁরা কি এক দিনও ডেঙ্গি মোকাবিলায় রাস্তায় নেমেছেন?’’ বিপদ ঘটার পরে কেন টনক নড়ে পুরসভার? উত্তরে অতীনের দাবি, ‘‘আমরা সারা বছর ডেঙ্গি মোকাবিলায় কাজ করি। মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গি মোকাবিলা অসম্ভব।’’ এ দিন ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের শেষে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দু’-এক জন মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য অনেক মানুষকে ভুগতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy