ফাইল চিত্র।
দু’বছরের মধ্যেই রিপোর্টে উলটপুরাণ! ‘জলাভূমি বোজানো হচ্ছে’ থেকে ‘জলাভূমিতে জলভাগের অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে’। কোন ‘জাদুকাঠি’র স্পর্শে এই পরিবর্তন সম্ভব হল, তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে পরিবেশবিদ মহলে। সৌজন্যে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য পরিবেশ দফতরের তরফে জাতীয় পরিবেশ আদালতে দাখিল করা সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট।
যে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে জলাভূমিতে জলভাগ বা মাছের ভেড়ির অংশের লক্ষণীয় বৃদ্ধি (নোটিসেবল ইনক্রিজ়) ঘটেছে। অথচ এই সূত্রেই চলে আসছে ওই একই মামলায় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে দু’বছর আগে গঠিত এক বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের প্রসঙ্গ। যেখানে বলা হয়েছিল, ২০০৫ সাল থেকে লাগাতার মাটি ফেলে বোজানো এবং নির্মাণের ফলে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির একটি বড় অংশের জমি পরিণত হয়েছে আবাসিক জমিতে। অর্থাৎ জলাভূমির আয়তন কমছে, জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পরস্পর বিরোধী’ এই দু’টি রিপোর্টের কোনটি ঠিক? তাঁদের বক্তব্য, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় পরিদর্শন করলেই বেআইনি নির্মাণ এবং মাটি ফেলে জলাশয় বোজানোর মতো চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে জলভাগ বা মাছের ভেড়ির অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে—এই দাবির ভিত্তি কী? পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্তের বক্তব্য, ‘‘এই রিপোর্টের তথ্যে বড়সড় গরমিল রয়েছে। এমনিতেই জলাভূমির যে সাড়ে ১২ হাজার হেক্টরের কথা বলা হয়, সেটা এখন একটা মিথ। বহু বছর হল, জলাভূমি বুজিয়ে বড়-বড় বাড়ি হয়ে গিয়েছে এবং ক্রমাগত হয়ে চলেছে। সেখানে জলের ভাগ বাড়ছে, এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত?’’
দীর্ঘ বছর পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নিয়ে গবেষণা করেছেন পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহা। তিনি বলেন, ‘‘তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নিয়ে গবেষণার সূত্রে বলতে পারি, অতীতের একাধিক রিপোর্ট জলাভূমি ভরাটের কথা বলেছে। সেখানে রাতারাতি জলাভূমি এলাকায় জলভাগের অংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই রিপোর্ট কিছুটা অস্বাভাবিকই!’’
যদিও রাজ্য পরিবেশ দফতর এবং পূর্ব কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (ইকেডব্লিউএমএ) পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইকেডব্লিউএমএ-র এক কর্তার কথায়, ‘‘তথ্যে গরমিলের প্রশ্নই আসে না। উপগ্রহ-চিত্রে যা ধরা পড়েছে, তা-ই তুলে ধরা হয়েছে।’’ পরিবেশ দফতরের এক কর্তা আবার জানাচ্ছেন, ২০১৯ সালে এবং সম্প্রতি দাখিল করা—দু’টি রিপোর্টের তথ্যই ঠিক। কিন্তু কী ভাবে দু’টি ‘পরস্পর বিরোধী’ রিপোর্ট একই সঙ্গে ঠিক হতে পারে? ওই কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে আবর্জনা ফেলা, মাটি ফেলে বুজিয়ে দেওয়া, বেআইনি নির্মাণের কোনও কথাই অস্বীকার করা হচ্ছে না। কিন্তু এটাও ঠিক, জলাভূমিতে জলের নীচে থাকা জমির (ল্যান্ড আন্ডার ওয়াটার) পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’’
পরিবেশমন্ত্রী রত্না দে নাগের বক্তব্য, ‘‘২০১৯ সালে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। ফলে সেই সময়ের রিপোর্টের কথা বলতে পারব না। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্টে পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে জলভাগের অংশ বাড়ার যে চিত্র ধরা পড়েছে, তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক।’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘রামসার কনভেনশন অনুযায়ী পূর্ব কলকাতা জলাভূমির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে। শহরের তরল নিকাশি বর্জ্য এখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধিত হয়। সেখানে এই এলাকার মূল্যায়নে ত্রুটি থাকলে তা দুর্ভাগ্যজনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy