Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
K2

চ্যালেঞ্জ নিতে এ বার শীতে শৃঙ্গ-অভিযান ভারতেও

হিমাচলের দেও টিব্বা শৃঙ্গারোহণের (৬০০১ মিটার) উদ্দেশে চলতি মাসের শেষেই কলকাতা থেকে রওনা হচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:২৯
Share: Save:

তাপমাত্রা মাইনাস ৪০-৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। চরম প্রতিকূল আবহাওয়া। ক্ষণে ক্ষণে বরফ-ধস এবং তুষারঝড়ের আশঙ্কা। এ সব কিছুর তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি শীতে কে-টু শৃঙ্গে
সফল অভিযান চালিয়ে পর্বতারোহণে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ১০ জন নেপালি অভিযাত্রী। এ বার এমনই শীতকালীন অভিযানের সাক্ষী হতে চলেছে ভারতীয় পর্বতারোহী মহলও।
শীতে শৃঙ্গারোহণের স্বাদ নিতে দেশের পাহাড়ি পথে পা বাড়াচ্ছেন একাধিক ভারতীয় অভিযাত্রী।

হিমাচলের দেও টিব্বা শৃঙ্গারোহণের (৬০০১ মিটার) উদ্দেশে চলতি মাসের শেষেই কলকাতা থেকে রওনা হচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। বেঙ্গল পুলিশে কর্মরত, সোনারপুরের বাসিন্দা রুদ্রপ্রসাদের এই অভিযানে সঙ্গী হচ্ছেন দক্ষিণ গড়িয়ার বাসিন্দা রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী। বাঙালি পর্বতারোহী মহল যাঁকে ডাকে ‘জুনিয়র’ নামে।

কেন এই অভিযান? এভারেস্টার রুদ্রপ্রসাদ বলছেন, ‘‘দেওটিব্বা শৃঙ্গে শীতে আরোহণ হয়েছে কি না, জানা নেই। তাই এই অভিযানে অন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চাই। সাধারণ সময়ের তুলনায় এ বারের অভিযানে অত্যধিক ঠান্ডা, পশ্চিমীঝঞ্ঝা ও তুষারধসের আশঙ্কা থাকছে। থাকছে নতুন বরফে শরীরের অনেকটা ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কাও। ফলে প্রতি মুহূর্তে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে।’’

সেই নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সাধারণ পর্বতারোহণ সরঞ্জামের পাশাপাশি বিশেষ বরফ-জুতো ব্যবহার করবেন রুদ্র-জুটি। সেই সঙ্গে ধসে কেউ বরফের নীচে চাপা পড়ে গেলে তাঁকে খুঁজে পাওয়ার জন্য থাকছে বিশেষ যন্ত্রও।

২০১৯ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সফল অভিযান সেরে আঙুলে ফ্রস্টবাইট নিয়ে ফিরেছিলেন রুদ্রপ্রসাদ। হাত বাঁচাতে পরে বাদ দিতে হয়েছিল গোটা চারেক আঙুল। সেই অভিযানের পরে এ বারই পাহাড়ে ফিরছেন তিনি। ‘‘অভিযানের প্রস্তুতিনেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঙুল যাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা সহ্য করতে পারে, সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছি। আঙুল তো ভালই সাড়া দিচ্ছে।’’— বলছেন এই অদম্য আরোহী।

জোড়া রুদ্রের এ বারের অভিযান শুরু হচ্ছে মানালির অদূরে জগৎসুখ থেকে। সেখান থেকে দেও টিব্বা বেসক্যাম্প কয়েক দিনের হাঁটাপথ। এ সময়ে বেসক্যাম্পেই তাপমাত্রা হতে পারে মাইনাস ২০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তার পরে ‘অ্যালপাইন’স্টাইলে ধীরে ধীরে শৃঙ্গের দিকে এগোনো।

শুধু দেও টিব্বা নয়। উত্তরাখণ্ডের ত্রিশূল পর্বতেও (৭১২০ মিটার) এই শীতে পা পড়তে চলেছে ভারতীয় অভিযাত্রীদের। ১৯০৭ সালে প্রথম আরোহণের সময়ে এটিই ছিল বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ, যার চূড়া ছুঁয়েছিলেন কোনও পর্বতারোহী। তবে এ বারই প্রথম শীতে সাত হাজারি এই শৃঙ্গে অভিযানের অনুমতি দিয়েছে ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন (আইএমএফ)। অভিযানে বিশিষ্ট পর্বতারোহী অর্জুন বাজপেয়ীর সঙ্গী হচ্ছেন মুম্বইয়ের পার্থ উপাধ্যায় এবং লাদাখের মহম্মদ আলি খান।

অর্জুন-পার্থের পরবর্তী লক্ষ্য অন্নপূর্ণা অভিযান। তবে শীতের ত্রিশূল-অভিযান যে খুব সহজ হবে না, তা মেনে নিচ্ছেন বছর পঁচিশের পার্থ। আজ, সোমবার তাঁদের দিল্লি থেকে চামোলি জেলার সুতোল যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ট্রেক করে বেসক্যাম্প। তার আগে দিল্লি থেকে ফোনে পার্থ বললেন, ‘‘এই পাহাড়ে বরফধস বেশি হয়। সঙ্গে শীতের খামখেয়ালি আবহাওয়া তো আছেই। ক্যাম্প-১ পৌঁছতে গেলেই ৬০-৭০ ডিগ্রি ঢালু পথ পেরোতে হবে, এ ছাড়াও রয়েছে ১০০০ মিটার উঁচু বরফের প্রাচীর। শীতে আগে এখানে অভিযান হয়নি। ফলে এই সময়ের পরিস্থিতি পুরোটাই অজানা।’’ ১৯০৭ সালে যে উত্তর-পূর্ব রুট ধরে ত্রিশূলে প্রথম সাফল্য এসেছিল, সেই পথেই এগোবেন অর্জুন-পার্থেরা।

কিন্তু কেন হঠাৎ শীতকালীন অভিযানের দিকে ঝুঁকছেন ভারতীয় অভিযাত্রীরা? কে-টু অভিযানের সাফল্য কী কোনও ভাবে প্রভাবিত করছে তাঁদের? পার্থের কথায়, ‘‘বিদেশের পাহাড়ে আকছার শীতকালীন অভিযান হলেও এ দেশের পাহাড়ে তেমন চল নেই। কারণ, এ নিয়ে সচেতনতা নেই। সেই মানসিকতারই বদল ঘটাতে চাইছি আমরা। শীতের অনমনীয় কে-টুতে যদি অভিযান সফল হতে পারে, আমরাই বা পারব না কেন?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nepal Mountaineers K2
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy