ফেরা: সুনীলকে তুলে দেওয়ার হচ্ছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে। বারুইপুরের সেই মানসিক হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
কিডনি-চোর বা ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারা হয়েছিল তাঁদের। কোনও মতে তাঁদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। তাঁদের অনেকেই এখন সুস্থ। বেশ কয়েক জনকে বাড়িও ফেরত পাঠাতে পেরেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মাস কয়েক আগে গুজব-কাণ্ডে উত্তাল হয়ে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটা বড় অংশ। ‘কিডনি চোর’, ‘ছেলেধরা’ এলাকায় ঢুকে পড়েছে বলে রটে গিয়েছিল দিকে দিকে। সন্দেহের বশে একের পর এক গণপিটুনির খবর আসছিল পুলিশের কাছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারধরের শিকার হচ্ছিলেন ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীনেরা। সে সময়ে এমন একাধিক মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে এনে বারুইপুরের একটি মানসিক হাসপাতালে
রেখেছিল পুলিশ।
ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা সুনীল বছর কুড়ি আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেননি। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কী ভাবে যেন পৌঁছে গিয়েছিলেন বকুলতলা এলাকায়। এলাকার মানুষের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
বাঁকুড়ার সুজাতা মাহাতোর গল্পটাও অনেকটা একই রকম। মানসিক ভারসাম্যহীন বছর আটান্নর বৃদ্ধা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে। তার পরে দু’তিন মাস কোনও খোঁজ ছিল না। ফেব্রুয়ারি মাসে বারুইপুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বারুইপুরের গোবিন্দপুরের ওই মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গুজবের জেরে মারধরের ঘটনা শুরুর পর থেকে প্রায় তিরিশ জন মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবঘুরেকে আনা হয়েছিল তাঁদের কাছে। শুরু হয় চিকিৎসা। সুনীল, সুজাতাদের মতো বেশ কয়েক জনকে ইতিমধ্যে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এপ্রিল মাসে হাসপাতাল থেকে সুজাতাকে নিয়ে যান তাঁর ছেলে। কিছুটা সুস্থ হয়ে সুজাতা নিজেই তাঁর ঠিকানা জানিয়েছিলেন। তার পরে হাসপাতাল থেকেই পুলিশ মারফত যোগাযোগ করা হয় তাঁর পরিবারের সঙ্গে। সুনীলকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। ঝাড়খণ্ড পুলিশ মারফত খবর পেয়ে গত মাসে তাঁর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে আসেন। নিয়ে যান সুনীলকে।
হাসপাতালের আধিকারিক থমাস জন বলেন, ‘‘কাজটা আমাদের কাছে নতুন নয়। মানসিক ভাবে অসুস্থদের সুস্থ করে বাড়ি ফেরানোর কাজ আমরা গত চল্লিশ বছর ধরে করে আসছি।’’ গণপিটুনির হাত থেকে উদ্ধার করে যাঁদের আনা হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি যত্ন নিতে হয়েছিল বলে জানান থমাস। কারও কারও শারীরিক চিকিৎসারও দরকার পড়ে। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্রেফ সন্দেহের বশে মারধর করা হয়েছিল অনেককে। অনেককে মারধরের আশঙ্কা করেছিলাম আমরা। সে কারণেই আগেভাগে উদ্ধার করে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকে সুস্থ হয়েছেন, এটা আমাদের কাছে খুবই স্বস্তির বিষয়।’’
থমাস জানালেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবেই কাজ করেন তাঁরা। বাংলার পাশাপাশি ভারতের নানা প্রান্ত থেকে রোগীরা আসেন। ভর্তি থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর সুযোগ। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল নয়, এখানে রোগীরা থাকেন নিজের বাড়ির মতোই। গান শেখার ব্যবস্থা আছে। কেউ ছবি আঁকেন। অনেকে হাতের কাজ করেন। সফট্ টয় তৈরি করেন কেউ কেউ। এদের আঁকা ছবি, তৈরি করা জিনিস বিক্রিরও ব্যবস্থা আছে।’’
হাসপাতাল তথা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি কমল প্রকাশের অভিজ্ঞতায়, যাঁরা চিকিৎসার জন্য আসেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পরেও ফেরার সুযোগ থাকে না। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা এখানকার পরিবেশের সঙ্গে এতটাই মিশে যান, আর বাড়ি ফিরতে চান না। পাঠালেও বারবার ফিরে আসেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy