Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
Aged Persons

প্রতারণা ও নির্যাতনের সাঁড়াশি ফাঁদে প্রবীণেরা, ইঙ্গিত পুলিশি সমীক্ষায়

কলকাতাতেই প্রবীণদের উপরে নির্যাতনের এমন অভিযোগ জমা পড়েছে দু’হাজারের কাছাকাছি। গোটা রাজ্যের হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার।

খোদ প্রবীণেরাও কি নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন নন?

খোদ প্রবীণেরাও কি নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন নন? —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪০
Share: Save:

সারা জীবনের সঞ্চয় বেহাত হয়ে যাচ্ছে নিমেষে। সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে খোয়া যাচ্ছে স্থায়ী আমানতের টাকাও! সদ্য শেষ হওয়া বছরে বয়স্কদের সঙ্গে হওয়া এমন আর্থিক প্রতারণার ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত আনা যায়নি বলে অভিযোগ। নতুন বছরের শুরুতে নতুন করে ফের চিন্তায় পুলিশ। দেখা যাচ্ছে, শুধু আর্থিক প্রতারণা নয়, বয়স্কদের উপরে নির্যাতনের যে অভিযোগ জমা পড়েছে ২০২৪ সাল জুড়ে, তা-ও যথেষ্ট উদ্বেগের। শুধুমাত্র কলকাতাতেই প্রবীণদের উপরে নির্যাতনের এমন অভিযোগ জমা পড়েছে
দু’হাজারের কাছাকাছি। গোটা রাজ্যের হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তবে কি আইন থাকলেও বয়স্কদের অধিকার সুরক্ষিত হচ্ছে না? সন্তান, পরিবারের লোকজন তো বটেই, খোদ প্রবীণেরাও কি নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন নন?

কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিসিং বিভাগই একটি সমীক্ষায় দেখেছে, প্রতি সাত জন প্রবীণের মধ্যে তিন জন কোনও না কোনও ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যে সমস্ত প্রবীণ অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশ আত্মীয়দের দ্বারা, ১৫ শতাংশ দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্তদের দ্বারা এবং ২০ শতাংশ প্রতিবেশীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। বাকি ৪০ শতাংশই আবার নিজের সন্তান বা সন্তানের সঙ্গীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে যে প্রবীণেরা একা থাকেন, তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। সন্তানের সঙ্গে থাকেন, কিন্তু স্বামী বা স্ত্রীকে হারিয়েছেন, এমন প্রবীণেরাও আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখযোগ্য হারে। পুলিশ সূত্রের খবর, নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনাই স্বাস্থ্য নিয়ে গাফিলতি এবং আর্থিক প্রতারণার। সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত এক পুলিশ অফিসার বললেন, ‘‘পরিবারের কোনও সদস্য বা সন্তানের দ্বারা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এত বেশি সংখ্যায় এসেছে যে, চিন্তায় পড়ার মতো ব্যাপার। দ্রুত এ ব্যাপারে সচেতনতার প্রচার শুরু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রের দাবি, এই সমস্ত তথ্য ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’য় পাঠানো হতে পারে। চলতি বছরে ভারত সরকারের তরফে বয়স্কদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই কারণেই এই সমীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে।

ভারত সরকারের ‘রিজিয়োনাল রিসোর্স অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট অব জেরন্টোলজি’-র প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রবীণদের উপরে নির্যাতন সব সময়েরই একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এখন মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছেন বলে এত বেশি সংখ্যায় অভিযোগ জমা পড়ছে পুলিশের কাছে। সমাজে জায়গায় জায়গায় মহিলা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা দরকার। স্বামী না-থাকা মায়েরা সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাচ্ছি। বয়স্কদের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা গেলে সুফল পাওয়া
যাবে।’’

প্রবীণদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী জানালেন, প্রবীণেরা শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে বুঝতে সমস্যা হয় না। কিন্তু দোষ দেওয়া, হুমকি দেওয়া, বকুনি, দিনের পর দিন অপমান এবং অবহেলা করা যে আবেগে আঘাত হিসাবে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা অনেকেই জানেন না। পাশাপাশি, টাকা বা অন্য কিছু চুরি করা, এটিএম, ক্রেডিট কার্ড ও পাসবইয়ের অপব্যবহার, জোর করে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’র হাতবদল অর্থনৈতিক নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। দিনের পর দিন খেয়াল না রাখার কারণে কোনও প্রবীণের যদি বেডসোর হয়ে যায়, সেই ঘটনাকে নির্যাতনের মধ্যে ফেলে আইনি পদক্ষেপ করা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে ‘দ্য মেন্টেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অব পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজ়েন্স অ্যাক্ট, ২০০৭’ কার্যকর হতে পারে। ভারতের সংবিধানেও বয়স্ক নাগরিকদের জীবনযাপন মসৃণ করতে এবং তাঁদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিয়ে নানা কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে, বেঁচে থাকার অধিকার মানে শুধুমাত্র পশুর জীবন অতিবাহিত করা নয়।’’

কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কি? পুলিশের সাম্প্রতিক সমীক্ষাই আশঙ্কা তৈরি করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud torture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy