Advertisement
E-Paper

‘মণি আছেন মণিকোঠায়’, স্কুলের দ্বাররক্ষীকে স্মরণ প্রাক্তনীদের

স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা মণি কর্মসূত্রে থাকতেন কলকাতায়। এ দিন তাঁর স্মরণে ‘মণিমঞ্জুষা’ নামে প্রাক্তনীদের লেখার সঙ্কলনও প্রকাশিত হয়।

An image of Moni Shukul

প্রাক্তনীদের স্মৃতিতে মণি শুকুল।

আর্যভট্ট খান , শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৫
Share
Save

তিনি ছিলেন স্কুলের প্রতিটি পড়ুয়ার অলিখিত অভিভাবক। স্কুল ছুটির পরে তারা বাড়ি ফিরল কি না, কেন স্কুলে আসতে দেরি হল, খেলতে গিয়ে কেউ চোট পেল কি না— সব খোঁজই রাখতেন। আবার কঠিন সময়ে তিনিই স্কুলের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতেন। মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখা স্কুলের তিনি শিক্ষক নন, ছিলেন দ্বাররক্ষী। পঞ্চাশের দশক থেকে সত্তরের দশক পর্যন্ত সেই পদ সামলানো মণি শুকুলকেই শুক্রবার, স্কুলের ১১৯তম প্রতিষ্ঠা দিবসে স্মরণ করলেন বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষকেরা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা মণি কর্মসূত্রে থাকতেন কলকাতায়। এ দিন তাঁর স্মরণে ‘মণিমঞ্জুষা’ নামে প্রাক্তনীদের লেখার সঙ্কলনও প্রকাশিত হয়। উপস্থিত ছিলেন মণির নাতি দীনেশকুমার শুকুল। তাঁর হাতে এ দিন স্কুলের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্যও তুলে দেওয়া হয়।

স্কুলের প্রবেশপথের সামনে মণির দাঁড়িয়ে থাকার সেই দিনগুলো কেমন ছিল? সে কথাই বলছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা। তাঁরা জানান, সত্তরের দশকে এক বার কয়েক জন নকশালপন্থী যুবক স্কুলের পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন ওই স্কুলেরই প্রাক্তনী। সে দিন তাঁদের পথ আটকান মণি। বলেছিলেন, ‘‘তোরা এই স্কুলে পড়ে আজ সেই স্কুলের পরীক্ষা বানচাল করতে এসেছিস? এখানে ঢুকতে গেলে আমায় মেরে তোদের ঢুকতে হবে।’’ এ কথা শুনে সে দিন চলে গিয়েছিলেন সেই যুবকেরা।

রাজা বলেন, ‘‘একা কুম্ভের মতো মণি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তাঁর চোখে সব ছাত্রই ছিল সমান। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ছিলেন আমাদের স্কুলের ছাত্র। তিনি এক বার আমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানে আসেন। তাঁর বক্তৃতা শেষ হতেই হঠাৎ মণি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘মানু তোর পুলিশ নকশাল ছেলেগুলোকে এই ভাবে পেটাচ্ছে। তুই কিছু দেখছিস না কেন?’ এমনই ছিলেন মণি।’’

এ দিনের সভায় উপস্থিত প্রাক্তনী পল্লব সেনগুপ্ত, অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, কুমার চট্টোপাধ্যায়রা জানালেন, শাসনে-সোহাগে, সুখে-দুঃখে ছাত্রদের পাশে থেকে মণি সেই সময়ে নিজেই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন।

‘মণিদা’র স্মরণে প্রাক্তনীদের লেখার সঙ্কলন ‘মণিমঞ্জুষা’ এ দিন প্রকাশ করেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ও স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পৌত্র তথা স্কুলের প্রাক্তনী চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। বইটির সম্পাদনা করেছেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অসিত গিরি, প্রাক্তন শিক্ষক শশাঙ্কশেখর ডিঙ্গল ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক রাজা দে। স্কুলের অনুশাসন-শিক্ষক হিসাবে মণিকে বর্ণনা করে আর এক প্রাক্তনী সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানালেন, স্কুলের এক জন দ্বাররক্ষীকে নিয়ে প্রাক্তনীদের এমন স্মৃতিতর্পণ ও বইপ্রকাশের কথা সচরাচর শোনা যায় না। স্কুলের প্রাক্তনীদের মতে, ‘‘মণিদা আছেন আমাদের মনের মণিকোঠায়।’’

Mitra Institution Gate Keeper
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy