Advertisement
E-Paper

পুজোর মাঠেই নমাজের জমায়েত

ক্লাবের সেই ঘরে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। লাগোয়া হুসেন শাহ পার্কের মাঠে ফি বছর সরস্বতী পুজো, কালীপুজো, দুর্গাপুজোর আয়োজন। খুশির ইদের সকালে এ দিন সেই মাঠেই প্রায় ৭০০ জন মিলে নমাজ আদায় করলেন।

মোমিনপুরের হুসেন শাহ পার্কে নমাজ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

মোমিনপুরের হুসেন শাহ পার্কে নমাজ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৪৮
Share
Save

কেউ কেউ নিজস্ব জায়নমাজ বা নমাজ পড়ার আসন হাতে এসেছিলেন। তবে পার্ক জুড়েই মাদুর বা শতরঞ্চি।

বুধবার সকালে নমাজ শেষে সে সব গুটিয়ে পাশেই তরুণ সঙ্ঘের ক্লাবঘরে রাখা হল। শরবতের গেলাস হাতে ক্লাবকর্তা তথা স্থানীয় বাসিন্দা অরুণাভ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড্ডায় বসলেন মোমিনপুর নমাজ ইদাইন কমিটির কর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ ওরফে আলমদা, অবসরপ্রাপ্ত সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল রহমান, সমাজকর্মী মহম্মদ আশরফ আলি, সাবির আহমেদরা।

ক্লাবের সেই ঘরে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। লাগোয়া হুসেন শাহ পার্কের মাঠে ফি বছর সরস্বতী পুজো, কালীপুজো, দুর্গাপুজোর আয়োজন। খুশির ইদের সকালে এ দিন সেই মাঠেই প্রায় ৭০০ জন মিলে নমাজ আদায় করলেন। ‘‘স্থানীয় হিন্দু পরিবারগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখানে নমাজের ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে,’’ বলছিলেন মহম্মদ আশরফ আলি। মাঠ সাফসুতরো করে মাদুর পাতা, রঙিন চাঁদোয়া খাটানো মুখের কথা নয়! গলা ভেজাতে ড্রামে শরবত ঢালা, বরফ মেশানোও ম-স্ত কাজ। শ্যামল পাল, অমর পাল, দীপক রাম ওরফে বুড়োর মতো অনেকেই তাতে বছর বছর এগিয়ে আসেন! প্রবীণ অরুণাভবাবু বলছিলেন, ‘‘আমার মেয়ে ইদ এলেই দুবাই থেকে ফোনে ঘ্যানঘ্যান করে! কলকাতার ইদের কাছে কোনও ইদ লাগে না! ইদে বাড়িতে সিমুই-মিষ্টি-চিকেনে ফ্রিজ উপচে পড়বেই।’’

খিদিরপুর-মোমিনপুরের পাঁচমিশেলি মহল্লায় সহাবস্থানের এটাও পরম্পরা। হিন্দু বাঙালি পরিবারগুলি খানিকটা সংখ্যালঘু কলকাতার এ পাড়ায়। গত বছর অরুণাভবাবুর মাতৃবিয়োগের পরেও তিনি হতবাক! অশৌচের সময়ে পড়শি আশরফের স্ত্রী একগাদা ফল-মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। নমাজের মাঠে এ দিন অনেকেই খুঁজছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ফৈজ়ুর রহমানকে। তরুণ সঙ্ঘের পুজোর দীর্ঘদিনের ‘সেক্রেটারি-বাবু’ ফৈজুর। পুজোর রীতি অনেক হিন্দু সন্তানের থেকে ভাল জানেন। নমাজের আগে-পরে ইমাম সাহেবের বক্তৃতায় সেই মাঠেই বারবার মুসলিমদের ‘গ্যায়র মুসলিমদের’ (অমুসলিম) আপন করে নেওয়ার দায়ের কথা বলা হচ্ছিল।

কলকাতায় মুসলিমপ্রধান এলাকা বা বিভিন্ন মসজিদে ইদের জমায়েতে সাধারণত ইমামেরা নমাজের আগে-পরে হিন্দি-উর্দু মিশিয়ে কথা বলেন। ‘আলমদা’, রহমান সাহেবরা সগর্বে বলছিলেন, ‘‘আমরা এখানে বাংলায় নমাজ পরিচালনাই জারি রেখেছি।’’ নমাজ শেষে আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা বা খুতবার সময়ে তরুণ ইমাম ক্বারি জ়িয়াউর রহমান কান্নার আর্তিতে মনে করালেন, ইদ মানে স্রেফ নিজের সন্তানকে নতুন পোশাক পরানো নয়! ভায়ে-ভায়ে গলাগলি বা গরিব-অনাথদের সেবাকাজও মানুষ-জীবনের কর্তব্য।

জ়াকারিয়া স্ট্রিট-কলুটোলায় ইফতারের খাবারের খোঁজে হাজির সর্বজনীন ভিড়টা ইদানীং বলছে, এই সময়টা এখন মুসলিম-অমুসলিম মিলে বেড়া ভেঙে উদ্‌যাপনের মরসুম। তবে ইদেও অনেকেই বিরিয়ানি-কবাবের টানে বিভিন্ন হোম-ডেলিভারি অ্যাপে ফোন করে হতাশ হয়েছেন। অনেক রেস্তরাঁই বাড়তি ভিড়ের চাপে ফোনের অর্ডার সরবরাহের চাপ এড়িয়ে যাচ্ছিল। তবে শহরের অনেক মুসলিম পরিবারের বাড়িই অতিথির ভিড়ে ছয়লাপ। প্রধানত বাড়ির মেয়েদের উপরেই রান্নার চাপ। আলিপুর কোর্টের আইনজীবী সাফিনা আহমেদ রোজ অত বেশি রান্নার সময় পান না। তবে ইদে দিনভর অতিথি সমাগমের জন্য দু’দিন ধরে ১০ কেজি মাংসের পদ ও বিপুল সিমুই রান্না করেছেন। তবে কলকাতাতেও কালীঘাট ক্লাবের মাঠে গত কয়েক বছরের মতো মেয়েদের ইদের নমাজের ব্যবস্থা ছিল।

শহরের কয়েকটি এলাকায় আবার নমাজ শেষে কাজে যাওয়ার তাড়া! বারুইপুরের বোরানুল আমিন, মহসিন গায়েনরা মোমিনপুরের বুড়ি মসজিদে নমাজ পড়েই তড়িঘড়ি আলিপুর কোর্টে ছুটলেন। তরুণ স্থপতি ফারহান আলির আফশোস, কয়েক জন কাছের বন্ধু আইআইটি-র একটা পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত। ইদের আড্ডা তাই জমল না।

এর মাঝেই নমাজের জমায়েতে বসে হঠাৎ কেঁদে ওঠা আড়াই বছরের নাতিকে কোলে নিতে ছুটে এসেছেন প্রৌঢ়া ঠাকুরমা। নমাজের গাম্ভীর্যেও ছোট বোনের হুটোপাটিতে মৃদু হেসে ফেলেছে তার খুদে দাদাটি। বাঙালির ইদময় এমন নানা টুকরো মুহূর্তের মালা।

Puja Committee Muslim Namaz

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।