তবে পুরসভার ওয়ার্ড কুলিরা নিকাশি নালা পরিষ্কারের পরিবর্তে কার নির্দেশে সেচ দফতরের জমি দখল করছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুর চেয়ারম্যান।
সরকারি জমিতে এ ভাবেই গজিয়ে উঠেছে পর পর দোকান। নিজস্ব চিত্র
পুরভোটের ফল ঘোষণার পরদিন থেকেই রাস্তার পাশে নির্বিচারে পূর্ত ও সেচ দফতরের একের পর এক জমি দখল করে দোকান তৈরির অভিযোগ উঠল রাজপুর-সোনারপুরে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সব কিছু জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং পুরসভার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিধায়ক। তাঁদের দাবি, এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সব কিছু সরেজমিনে খতিয়ে দেখে পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও কোনও প্রতিকার হয়নি।
অভিযোগ, রাজপুর-সোনারপুরের চার নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাজোয়ারা এলাকায় পূর্ত দফতরের ফাঁকা জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক দরমার ঘর তৈরি করে। এবং সেই সরকারি জমি ‘বিক্রি’ও করে দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকায়। দখলদারির এই কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাস মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এমনকি, কাউন্সিলরের বাড়ি সংলগ্ন সরকারি জমিও দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। জমি দখল করানোর পিছনে বহু টাকার লেনদেন চলছে বলেও দাবি।
সরকারি জমি দখল ও বিক্রির ঘটনায় কাউন্সিলর-ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুরসভা, নরেন্দ্রপুর থানা, বারুইপুরের মহকুমাশাসকের দফতর, জেলাশাসকের দফতর ও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে খবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠেরা যে জমি দখল করছেন, সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর পরে সমাজমাধ্যমে সেই ছবিও ছড়িয়ে পড়ে, যাতে দেখা যাচ্ছে, পুরসভার ওয়ার্ড কুলিদের ওই জমি দখলের কাজে লাগানো হচ্ছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে গঙ্গাজোয়ারা থেকে গড়িয়া স্টেশন পর্যন্ত একটি প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করেছিল পূর্ত দফতর। সেখানেই রাস্তার পাশে কয়েকটি বেআইনি দোকান তোলা হয়েছিল প্রথমে। ভোট মিটতেই সেই দখলদারি মারাত্মক রকম বেড়ে যায়।
পুর চেয়ারম্যান পল্লব দাস বললেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছে পুরসভা। জমি দখল ও বেআইনি ভাবে তা বিক্রি নিয়ে সতর্ক করতে পুলিশকে মাইকে প্রচারও করতে বলা হয়েছিল। উচ্ছেদ তো দূর, পুলিশ মাইকিংটুকুও করেনি।’’
সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম বলেন, ‘‘পূর্ত ও সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ওই সমস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বেআইনি দখলদারির বিষয়ে নরেন্দ্রপুর থানাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। উচ্ছেদের জন্য বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপারকে গোটা পরিস্থিতির রিপোর্ট-সহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। পুরসভা বা আমার তো কোনও বাহিনী নেই। পুলিশ ছাড়া উচ্ছেদ সম্ভব নয়।’’
চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিভাস মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, বেআইনি দখলদারির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর দাবি, সর্বত্রই সরকারি জমি দখল হচ্ছে। তাই তিনিও পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাবেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির পাশেই তো একের পর এক সরকারি জমি দখল হয়ে যাচ্ছে? বিভাসবাবুর দাবি, ‘‘ওই সব জমি আগেই দখল হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন করে দরমা লাগাচ্ছে।’’ স্থানীয়দের অবশ্য অভিযোগ, বিভাসবাবুর মদতেই দখলদারি চলছে। পার্শ্ববর্তী তিন নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি জমি দখল করার বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তার পরেও কোনও দলীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সরকারি জমি বিক্রির অভিযোগ উঠলে তা অত্যন্ত লজ্জার। পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগের বিষয়ে মহাকুমাশাসকের দফতরের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অবকাশ নেই বলেই জানিয়েছে নরেন্দ্রপুর থানা। ওই থানার আধিকারিকদের দাবি, উচ্ছেদের জন্য বিরাট বাহিনীর প্রয়োজন। সেই কারণে পুরসভার চেয়ারম্যান ও বিধায়কের রিপোর্টের ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।’’ বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা বলেন, ‘‘নরেন্দ্রপুর থানার আবেদন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তবে পুরসভার ওয়ার্ড কুলিরা নিকাশি নালা পরিষ্কারের পরিবর্তে কার নির্দেশে সেচ দফতরের জমি দখল করছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন পুর চেয়ারম্যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy