আবৃতা: বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে ভরসা সেই প্লাস্টিক। সোমবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সোমবার বিকেলে তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। কুমোরটুলির প্রায় প্রতিটি গোলাই ঢেকে গিয়েছে ত্রিপলে। মৃৎশিল্পীরা কোনও রকমে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন দুর্গা প্রতিমাগুলি। তবু দুশ্চিন্তা কাটছে না তাঁদের। এ ভাবে বৃষ্টি হয়ে চলায় এক দিকে যেমন মূর্তি গড়ার কাজ আটকে যাচ্ছে, অন্য দিকে প্রতিমা শুকোনোর কাজও ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কোভিডের কারণে এ বার প্রতিমার বায়না এমনিতেই কম। তা-ও গত কয়েক দিন ধরে কিছু নতুন বায়না আসতে শুরু করেছে। কিন্তু আবহাওয়ার এই অবস্থা হলে তাঁরা কাজ শেষ করবেন কী করে? আপাতত প্রতিটি গোলায় স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে চলছে প্রতিমা শুকোনোর কাজ।
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী তথা ‘কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্পী ও সাজশিল্পী সমিতি’র সম্পাদক অপূর্ব পাল বললেন, ‘‘প্রতিমার মাটি না শুকোলে তো রং করতে পারব না। কারণ, ভেজা মাটিতে রং ধরবে না। অথচ, যে ভাবে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে তো মাটি শুকোচ্ছে না। তাই কাজও থেমে যাচ্ছে। সব সময়ে কি আর বড় বড় ফ্যান চালিয়ে প্রতিমা শুকোনো যায়?’’ তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে কিছু নতুন বায়না পেতে শুরু করেছেন। কিন্তু সেই বায়না নেওয়ার ক্ষেত্রেও এখন দ্বিধায় তাঁরা। কারণ, পুজোর তো আর এক মাসও বাকি নেই। আর এক শিল্পী অমর পাল জানালেন, অন্যান্য বার রথের দিন থেকে প্রতিমার বায়না আসা শুরু হলেও এ বার সেই সময়ে বেশি আসেনি। জন্মাষ্টমীর পর থেকে কিছু নতুন বায়না এসেছে। ফলে সকলেরই হাতে প্রতিমার গড়ার সময় কম।
করোনার জন্য গত বার প্রতিমার বায়না অনেকটাই কম এসেছিল। এ বার পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও ছবিটা বিশেষ আশাব্যঞ্জক নয়। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বায়না অনেকটাই কম এসেছে। থিমের প্রতিমার তুলনায় সাবেক প্রতিমার চাহিদাই এ বার বেশি, জানাচ্ছেন অধিকাংশ শিল্পী। তাঁরা জানালেন, কম দামের সাবেক প্রতিমার বায়না যদি বেশি করে নেওয়া যেত, তা হলেও কিছুটা লাভের মুখ দেখা যেত। কিন্তু রোজ বৃষ্টিতে কাজ এই ভাবে থমকে গেলে খুব মুশকিল। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রতি বারই বর্ষার মধ্যে তাঁদের প্রতিমা বানাতে হয়। কিন্তু অন্যান্য বার কাজ যে হেতু অনেকটাই আগে শুরু হয়ে যায়, তাই প্রতিমা শুকোনোর জন্য সময়ও বেশি পাওয়া যায়।
শুধু মাটি শুকিয়ে রং করতে গিয়েই নয়, ভেজা খড় শুকোতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন কুমোরটুলির শিল্পী তথা ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতি’র সম্পাদক বাবু পাল। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টির জেরে গোলার বাইরে প্রতিমার খড় বাঁধতেও অসুবিধা হচ্ছে। সেই সঙ্গে খড় যদি ভেজা থাকে, তা হলে সেই খড়ে তো মাটিও লাগাতে পারব না।’’ বাবু জানান, এ বছর তিনি ৩০টির মতো প্রতিমা বানাচ্ছেন, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশ কিছুটা কম। বাবু বলেন, ‘‘এ বার তো সহকারী শিল্পীদের সংখ্যাও খুব কম। কারণ, অনেকেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। করোনার প্রকোপের কারণে কলকাতায় আর আসেননি। একে সহকারীর সংখ্যা কম, তার উপরে রোজ বৃষ্টি। কী ভাবে সব সামলে উঠব, সেটাই ভাবছি। বৃষ্টিটা কি ধরবে না?’’ বাবুর কথা শেষ হতেই ফের ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল কুমোরটুলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy