বড়দিনে চিড়িয়াখানা এবং ইকো পার্ক। নিজস্ব ছবি।
শুধু রকমারি সান্তা টুপি পরা মাথার ভিড়। পিছনে ‘ক্রিসমাস ট্রি’ রেখে চলছে নিজস্বী তোলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাত ছাপিয়ে সেই ভিড় ধীরে ধীরে রাস্তায় নেমে এসেছে। বড়দিনে উৎসবমুখর শহর কলকাতার ছবিটা ঠিক এ রকমই। রবিবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে পার্ক স্ট্রিটে। বেলার দিকে ময়দান চত্বরেও জায়গায় জায়গায় গোল হয়ে বসে জমিয়ে চলেছে আড্ডা। সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও। কেউ আবার ঘোড়ার পিঠে চেপে ছবি তুলতে ব্যস্ত। এ ছাড়াও ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর শহরের সর্বত্রই সকাল থেকে থিকথিকে ভিড় দেখা গিয়েছে। কিন্তু ভিড় টানার দৌড়ে কে এগিয়ে থাকল, দিনের শেষে তা খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
সকাল থেকেই শাল-সোয়েটার গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। ভিড় উপচে পড়েছিল চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রাল-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায়। এ দিন সকাল থেকেই চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লম্বা লাইন। বেলা বাড়তে পার্কিং নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। বাঘ-সিংহ-হাতি দেখার পরে কচিকাঁচাদের হাত ধরে মানুষ যখন মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খান নিরাপত্তাকর্মীরা। চিড়িয়াখানার সামনে বাস কিংবা ট্যাক্সি দাঁড়ানো নিষেধ। কিন্তু তাতে কী! নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই সেখানে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়ি। যার প্রভাব পড়েছে লাগোয়া কয়েকটি রাস্তাতেও। বেলভেডিয়ার রোড, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যাভিনিউ, আলিপুর রোড, এমনকী ডায়মন্ড হারবার রোডেও গাড়ি এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে হসপিটাল রোড, এজেসি বোস রোড এবং এজেসি বোস রোড উড়ালপুলেও। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, বড়দিনে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৮৭ হাজার ৩৭৩টি।
তবে ভিড় টানার দৌড়ে চিড়িয়াখানাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ইকো পার্ক। কর্তৃপক্ষের দাবি, বড়দিনে ৯১ হাজার ১৩৬ জন মানুষের ভিড় হয়েছে সেখান। পুলিশ সূত্রে খবর, ইকো পার্ক চত্বরে নজরদারি চালাতে দু’টি ব্যাটারিচালিত গাড়ি রাখা হয়েছিল। প্রতিটি গাড়িতে চেপে সাত জন করে পুলিশকর্মী ইকো পার্কে নজরদারি চালিয়েছেন। ভিড়ের মধ্যে সাদা পোশাকে ঘুরেছেন মহিলা পুলিশকর্মীরাও।
সকাল থেকে ভিক্টোরিয়া আর ভারতীয় জাদুঘরের সামনেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। গাড়ির চাপে যানজট তৈরি হয় গোটা রাস্তায়। সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়দিনে সেখানে অন্তত ১১ হাজার জনের ভিড় হয়েছিল। সায়েন্সসিটিতেও ছিল মাত্রাছাড়া ভিড়। কর্তৃপক্ষের দাবি, সেখানেও অন্তত সাড়ে ২২ হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। রবির সকালে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল ময়দানের ছবিটাও। বড়দিনে চন্দননগর থেকে সপরিবার কলকাতায় এসেছেন কুন্তল বসুর পরিবার। হাঁটতে হাঁটতে খানিক ক্লান্ত হয়ে ময়দানে চাদর বিছিয়ে বসে খাওয়াদাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন তাঁরা। বাড়ি থেকে আনা লুচিতে কামড় বসিয়ে কুন্তল বললেন, ‘‘ভিড়ের জন্য আর রেস্তরাঁয় যেতে ইচ্ছে করেনি। দু’বছর ধরে ঘরবন্দি। বছরের শেষে একটা দিন পরিবার নিয়ে যতটা মজা করা যায় আর কী!’’
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্ক স্ট্রিট উৎসবমুখী জনতার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে শুরু করে। ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকে সেখানকার একাধিক রেস্তরাঁয়। সন্ধ্যার দিকে আলোর রোশনাইয়ে উৎসব প্রাঙ্গণের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে আসা সেমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড়দিনে একটি বার না এলে আর কীসের বড়দিন।’’ সন্ধ্যার পর থেকে ভিড়ের নিরিখে পিছিয়ে ছিল না বো বারাকও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy