সিভিক ভলান্টিয়ার আলি নওয়াজ়। ছবি: কলকাতা পুলিশের পেজ থেকে প্রাপ্ত।
আরজি কর-কাণ্ড থেকে বিটি রোডের ঘটনায় বার বার সিভিক ভলান্টিয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কালি লেগেছে তাঁদের ভাবমূর্তিতে। অনেকের অভিযোগ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘দাদাগিরি’ দিনে দিনে মাত্রা ছাড়াচ্ছে। অহেতুক হেনস্থারও অভিযোগ উঠছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। সেই আবহে এ বার কলকাতা পুলিশ সমাজমাধ্যমে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মানবিক ভূমিকার কথা প্রকাশ করল।
সমাজমাধ্যমে কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এক বাইক আরোহী। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। রক্তে ভেসে যেতে থাকে তাঁর শরীর। আহত ওই ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েই ছুটে আসেন কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার। কাছেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। খবর দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স আসার আগেই আহত ব্যক্তিকে নিজের কাঁধে তুলে দৌড়ে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ। জোড়াসাঁকো থানা এলাকার মিত্র লেনের এক বাসিন্দা রাতে বাইকে করে যাচ্ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে। সঙ্গে ছিলেন এক আরোহীও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের গেটের কাছে আচমকাই বাইকের চাকা পিছলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উল্টে রাস্তার এক পাশে চলে যায় বাইকটি।
বাইকটি পড়ে যাওয়ায় চালক এবং তাঁর সঙ্গী রাস্তার অন্য পাশে ছিটকে পড়েন। আরোহী তেমন চোট না পেলেও চালক মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন জোড়াসাঁকো থানার সিভিক ভলান্টিয়ার আলি নওয়াজ়। খবর দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। কিন্তু নওয়াজ় বুঝতে পারেন অ্যাম্বুল্যান্স আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হবে না ওই বাইক চালককে। তড়িঘড়ি তিনি ওই চালককে কাঁধে তুলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌঁড় দেন। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসা চলছে আহত ব্যক্তির।
সম্প্রতি আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই চর্চায় সিভিক ভলান্টিয়ারের ভূমিকা। এই ঘটনা এক মাত্র গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি পেশায় এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। চিকিৎসক খুনের নৃশংসতার ছবি দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। প্রতিবাদে সরব সব স্তরের মানুষ। ‘বিচার চাই, দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পূর্ব বর্ধমানের ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ‘দাদাগিরি’র ছবি প্রকাশ্যে আসে। রাতে ডিউটিতে থাকা এক মহিলা চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘আরজি করে কী হয়েছে জানেন তো?’— এই বলে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। শনিবার ভোরেও কলকাতার বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ‘কীর্তি’ সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। অভিযোগ, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে ঢুকে পড়ে তিনি ‘অভব্য’ ব্যবহার করেন। বাইক নিয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার পড়ুয়াদের ব্যারিকেডে ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ। পুলিশ লেখা বাইকই চালাচ্ছিলেন তিনি। পড়ুয়াদের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্যও করার অভিযোগও ওঠে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোর থেকে বিটি রোড অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। শেষে ওই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার হওয়ার পর বিক্ষোভ ওঠে। ঘটনাচক্রে, এই তিনটি ঘটনাতেই অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারেরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ।
সেই আবহেই আলির মানবিক কাজের কথা পোস্ট করল কলকাতা পুলিশ। তাঁর কীর্তি পুলিশের সমাজমাধ্যমের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। অনেকের মতে, আলির হাত ধরেই সিভিক ভলান্টিয়ারের ভাবমূর্তিতে লাগা ‘কালি’ মুছতে তৎপর কলকাতা পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy