—প্রতীকী চিত্র।
ন্যূনতম প্রাপ্যের নিশ্চয়তা নেই। অথচ, উপরি আয়ের আশ্বাস দেওয়া চলছে! নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়েও এই পরিস্থিতির বদল হচ্ছে না বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বর্ষশেষের সময়ে অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থায় বরাত বাড়লেও সেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্তেরা তার সুফল এখনও পাচ্ছেন না। উল্টে উপরি আয়ের মোহে বেপরোয়া ভাবে বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে যখন-তখন। গত তিন বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ বার এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, এই ধরনের অনলাইনে বরাত দেওয়া খাবার বা সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে তারা। সেখানে উপরি আয়ের বদলে অন্য কোন পথে চলা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে খবর।
পুলিশ সূত্রের খবর, পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে শীতের শহরে বাইক দুর্ঘটনা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। যার মধ্যে ৭০ শতাংশ মোটরবাইকই ঘটনার সময়ে কোনও না কোনও অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার হয়ে কাজে যুক্ত ছিল। সব চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত এমন দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ৩০০, মৃত্যু ঘটেছে ৩২টি ক্ষেত্রে। ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ১৩২ জন। পুলিশ মনে করছে, উপরি আয়ের তাড়নায় যেমন খুশি মোটরবাইক বা স্কুটার ছোটাতে গিয়েই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সচেতনতা প্রচার করেও তেমন কাজ হয়নি। তাই সংস্থাগুলিকে ডাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, কয়েকটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের ২৪ শতাংশ এই ধরনের অস্থায়ী কর্মী বা গিগ ওয়ার্কার ভারতীয়। ভারতের জিডিপি-তেও প্রতি বছর এই ক্ষেত্রের অবদান থাকে প্রায় ১.২৫ শতাংশ। অথচ রাজস্থান সরকার ‘গিগ ওয়ার্কার্স রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট, ২০২৩’ পাশ করিয়ে একটি তহবিল তৈরি করে অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলিকে বরাতপিছু মোট মূল্যের ২ শতাংশের কম এবং ১ শতাংশের বেশি টাকা তাতে জমা করতে বললেও এ রাজ্যে তেমন কিছু হয়নি। উল্টে সুইগির মতো সংস্থা আড়াই-তিন ঘণ্টা হিসাবে কাজের সময় ভাগ করে ২০, ৪০, ৪২ বা সর্বাধিক ৫৯ টাকা করে দিচ্ছে। পুরনো কিছু কর্মীদের জন্য ১৪টি বরাত পৌঁছে দিতে পারলে ৭৭৫ টাকা, ১৮টির ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা এবং ২৪টির ক্ষেত্রে ১৪০০ টাকা উপরি আয়ের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তবে বাকিদের জন্য থাকছে ১৫টি বরাতের জন্য ১৫০ টাকা, ১৮টি বরাতের জন্য ২৫০ টাকা উপরি আয়ের আশ্বাস। জোম্যাটোর ক্ষেত্রেও দু’ঘণ্টা হিসাবে সর্বাধিক ৮০-১০০ বা ৮৫-১১৫ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে ২৬৫ টাকা আয় করতে পারলে ১২৫ টাকা আর ৪৫০ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা উপরি আয়ের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সারা দিনে ৭০০ এবং ১১৫০ টাকা আয় করতে পারলে বাড়তি দেওয়া হবে যথাক্রমে ১২০ টাকা এবং ২৭৫ টাকা।
যদিও এই ধরনের এক কর্মীর দাবি, ‘‘উপরি আয় তো দূর, ন্যূনতম খরচ চলার মতোও আয় হচ্ছে না। সংস্থাগুলি নিজেদের সহযোগী সংস্থাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।’’ আর এক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘দিনে তিন-চার বার করে সংস্থার ফোন আসছে। নতুন লোক নিয়োগ করাতে পারলে তিনি মাসে ২০০ টাকার কাজ করলেই আমি ৯০০০ টাকা পাব। আমাদেরই বরাত পেতে কালঘাম ছুটছে, নতুনেরা বরাত পাবে কী করে!’’
‘ডেলিভারি ভয়েজ়’ নামে একটি সংগঠনের তরফে প্রিয়স্মিতা বললেন, ‘‘যত দিন অস্থায়ী (গিগ) কর্মীর অধিকার সুরক্ষিত না হচ্ছে, তত দিন এ জিনিস বন্ধ হবে না। বার বার বলা হচ্ছে, এখানে নাকি সকলেই পার্টনার। কিন্তু এমন ভাবে অ্যাপ-নির্ভর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে আদতে মালিক-কর্মীর সম্পর্কই চলছে। তা-ই যদি হবে, তা হলে এই
ধরনের কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া হবে না কেন?’’ ‘ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাপ বেস্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স’-এর তরফে আবার দাবি, ‘মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট, ১৯৪৮’, ‘দ্য এমপ্লয়মেন্ট কম্পেনসেশন অ্যাক্ট, ১৯২৩’, ‘দ্য কনট্র্যাক্ট লেবার অ্যাক্ট, ১৯৭০’-সহ যে সমস্ত আইনে এ দেশের শ্রমিকেরা নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, তা এই ধরনের গিগ ওয়ার্কারদের ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। অবিলম্বে তা কার্যকর করতে হবে।
তবে কি এ বার পুলিশ এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলাবে? অন্তত দুর্ঘটনা রুখতে গিয়ে কি দেখা যাবে সদর্থক পদক্ষেপ? আশায় রয়েছেন এমন কাজে যুক্ত লক্ষ লক্ষ কর্মী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy