বেআইনি নির্মাণ রুখতে কলকাতা পুরসভার নতুন পদক্ষেপ। —ফাইল চিত্র।
মার্চ মাসের ১৭ তারিখে মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ঘরে-বাইরে মুখ পুড়েছিল কলকাতা পুরসভার। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শহরে বেআইনি নির্মাণ রুখতে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছিল। সেই আবহে এ বার বেআইনি নির্মাণে বেশ কিছু পরিষেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, কোনও বেআইনি নির্মাণের খোঁজ মিললে কলকাতা পুরসভার তরফে সেই আবাসনে পানীয় জল ও নিকাশির সংযোগ দেওয়া হবে না। পাশাপাশি দেওয়া হবে না কলকাতা পুরসভার তরফে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (সিসি)-ও। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে এত দিন কেন কলকাতা পুরসভা এই কড়া অবস্থান নেয়নি? কারণ, এমন কড়া পদক্ষেপ আগে নেওয়া হলে কলকাতা শহরে বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা অনেকটাই কমানো যেত। আর গার্ডেনরিচের মতো ঘটনাও ঘটত না।
বেআইনি নির্মাণে এই দুই সংযোগ যাতে না দেওয়া হয়, সেই ক্ষমতা খাতায়কলমে কলকাতা পুরসভার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার নিয়মানুযায়ী, যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমতিপত্র, নকশা এবং সিসি দেখার পর পানীয় জল ও নিকাশির সংযোগ দেওয়া হয়। তাতেই বেআইনি নির্মাণ ধরা পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ বেআইনি নির্মাণেই দেখা যায়, অসাধু উপায়ে পানীয় জল ও নিকাশি সংযোগের ব্যবস্থা করে ফেলেন প্রোমোটারেরা৷ এই কাজে অসাধু প্রোমোটারেরা স্থানীয় স্তরের পুর প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করেই এই ধরনের ‘কাজ’ করে থাকেন বলে অভিযোগ। এর পর সেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে প্রোমোটার বেআইনি নির্মাণের দায় ঝেড়ে ফেলেন। ফলে, ওই বেআইনি নির্মাণের বাসিন্দাদের কথা ভেবেই পুরসভা কর্তৃপক্ষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই দুই সংযোগ কাটতে পারেন না। নাগরিকদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই পদক্ষেপ করা হয়ে ওঠে না পুর আধিকারিকদের পক্ষে। গার্ডনরিচের ঘটনার পর নিজেদের হাতে থাকা নিয়মাবলির সঠিক ব্যবহার করতে চাইছে পুরসভা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করার কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেআইনি নির্মাণ রুখতে একটি অ্যাপ চালু হয়েছে। ফলে, কোনও ক্ষেত্রে বেআইনি নির্মাণ চোখে পড়লে তাতে এই দুই প্রয়োজনীয় সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমেই কোনও নতুন আবাসনে এই জোড়া পরিষেবা না থাকলে সেখানে ফ্ল্যাট কিনতে কোনও ক্রেতা আগ্রহী হবেন না, এমন ভাবনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে কলকাতা পুরসভা।
এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ রুখতে যথেষ্ট কড়া নিয়ম রয়েছে পুরসভার হাতে। তবে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পুরসভার হাতে না এলে পদক্ষেপ করা যায় না। গার্ডেনরিচের ঘটনার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন জন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সঙ্গে এমন কিছু প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে সহজেই বেআইনি নির্মাণের কথা দ্রুত পুর প্রশাসন জানতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারদের সাসপেন্ড ও প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিতে প্রশাসনের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কড়া বার্তা চলে গিয়েছে। বেআইনি নির্মাণ রুখতে এ বার থেকে কোনও গাফিলতি হলে যে পুর প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ছেড়ে কথা বলবেন না, সেই বার্তাও নিচুতলা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নির্মাণের সময় কোনও নির্মীয়মাণ বহুতলে যদি অবৈধ কোনও বিষয় চোখে পড়ে, তা হলেই পানীয় জল এবং নিকাশির সংযোগ দেওয়া হবে না। আর তাতেই বেআইনি নির্মাণ রুখতে অনেকটা সফল হবে কলকাতা পুরসভা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy