দোলের আগেই যে বাজার উপচে পড়ে আবির আর রঙের পসরায়, দেওয়ালির আগে সেখানেই টুনি লাইট আর প্রদীপের কারবার। আর অগস্ট এলেই পুরো বাজারটাই বদলে যায় গেরুয়া সাদা আর সবুজে। চিনাবাজার ক্যানিং স্ট্রিটের পাইকারি বাজারের বদলে যাওয়া চেহারা দেখেই বোঝা যায়, ১৫ আগস্ট হাজির দোরগোড়ায়। অগস্ট মানেই স্বাধীনতার উদ্যাপন, আর তার কেন্দ্রে থাকে জাতীয় পতাকা। আগে শুধু খাদির অথবা হাতে তৈরি সুতি, উল বা সিল্কের কাপড় দিয়েই জাতীয় পতাকা তৈরির নিয়ম ছিল দেশের ‘ফ্ল্যাগ কোড’ অনুযায়ী। কিন্তু রং ও কাপড় টেকসই হওয়ার ভাবনা মাথায় রেখে ২০২১-এ সেই কোড সংশোধন করে মেশিনে তৈরি ও পলিয়েস্টার কাপড়ের পতাকাও আইনসিদ্ধ হয়েছে।
তবে এ বছর সুতির পতাকার জোগান বেশ কম। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে দামও বেশ চড়া। বাড়ি বা স্কুলে ব্যবহারের মতো, ছোট থেকে মাঝারি মাপের পলিয়েস্টারের পতাকার দাম ডজনপ্রতি পঞ্চাশ থেকে আড়াইশো টাকার মধ্যে; রাস্তায় শিকল সাজানোর, ছোট আকারের, কাগজের দু’শো পতাকার প্যাকেট পঞ্চাশ টাকা করে। পতাকা ছাড়াও তেরঙা মালা, টুপি, রিস্ট ব্যান্ড, কোট-পিন, ব্যাজ, বেলুন, অফিসের টেবিল বা গাড়িতে সাজানোর কাজে লাগার মতো বাহারি নানা জিনিসে উপচে পড়ছে দোকান (উপরের ছবি)। তবে অধিকাংশ জিনিস প্লাস্টিক বা অ্যাক্রিলিকের মতো জিনিসের তৈরি বলে পরিবেশের উপর বাড়তি চাপের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কলকাতার এই পাইকারি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্যবসায়ীরাও।
কলকাতা আর জাতীয় পতাকার সম্পর্ক বহু পুরনো। আমাদের জাতীয় পতাকার পথ চলার শুরু হয়েছিল এ শহর থেকেই, বলাটা অত্যুক্তি নয়। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম বইটির প্রথম খণ্ডে সঞ্জীবনী পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল বাংলার কথা— ১৯০৬ সালের ৭ অগস্ট গ্রিয়ার পার্কে (আজকের সাধনা সরকার উদ্যান) ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্জীবনী পত্রিকায় তার বিবরণ: “সবুজ, পীত ও লাল জমির উপর প্রথম লাইনে আটটি পদ্ম, দ্বিতীয় লাইনে সংস্কৃত অক্ষরে বন্দেমাতরম্ এবং শেষ লাইনে সূর্য্য ও অর্ধচন্দ্রাকৃতিই জাতীয় পতাকার চিহ্ন হইয়াছিল।” (মাঝের ছবি) তৎকালীন ভারতের প্রদেশগুলির প্রতিভূ হিসাবে আটটি পদ্ম ও চন্দ্র-সূর্যের মতো প্রতীকের সংযোগে পতাকাটিকে ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্বের প্রথম প্রয়াস হিসাবে ধরা যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ‘ক্যালকাটা ফ্ল্যাগ’ নামে পরিচিত এই পতাকাটির নকশায় কিছু রকমফেরও দেখা যায়। বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সেই পতাকা আজ দেশের ত্রিবর্ণরঞ্জিত, অশোকচক্র শোভিত জাতীয় পতাকায় রূপ পেয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে সেই পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সঙ্গে তাই কোথাও যেন জড়িয়ে থাকে তার ইতিহাসকে মনে রাখার নাগরিক কর্তব্যও।
নতুন চোখে
রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষের পর থেকে নানা সময়ে কথা উঠেছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়নভঙ্গি ঘিরে নানা প্রতিষ্ঠানের ‘আধিপত্য’ স্থাপনের চেষ্টা নিয়ে। বিনোদন বাজারে নামী ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার পর থেকেই, গানের পরিসরে নানা বিরোধে ক্রমাগত খণ্ডিত রবীন্দ্রনাথ (ছবি)। উত্তর-আধুনিক অ্যাকাডেমিক চর্চায় নতুনতর পাঠ যখন খুব একটা চোখে পড়ছে না, তখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস বিভাগের উদ্যোগে চালু হল রবীন্দ্রসঙ্গীত পাঠ বিষয়ক একটি কোর্স, সমাজ রাজনীতি ইতিহাস দর্শন সাহিত্য সিনেমা নন্দনতত্ত্বের নিরিখে— নতুন চোখে। গতে বাঁধা সিলেবাস বা আধিপত্যময় মতবাদকে প্রাধান্য না দিয়ে ছ’মাসের পাঠক্রমটি তৈরি করেছেন শ্রীমতী মুখোপাধ্যায়, ‘পড়াবেন’ আনন্দ লাল প্রমিতা মল্লিক শ্রীকান্ত আচার্য শ্রাবণী সেন প্রবুদ্ধ রাহা শৌনক চট্টোপাধ্যায় পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্য প্রমুখ, সত্যজিৎ রায়-ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রয়োগ বিষয়ে শৈবাল বসু।
মৌখিক ইতিহাস
ইতিহাস নির্মাণে মৌখিক ইতিহাসের ভূমিকা কী? ক্ষেত্র সমীক্ষা কী ভাবে হয়ে ওঠে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের যৌগ ক্রিয়া? মৌখিক ঐতিহ্য ও মৌখিক ইতিহাসের পার্থক্য কোথায়? লোকপ্রত্নতত্ত্বের কাল্ট নির্মাণে বহুস্তরীয় ভাষ্যের প্রভাব, মধ্যযুগের ইতিহাস চর্চায় স্থানিক ভাষ্য ও প্রতীকের গুরুত্ব, মৌখিক বই-এর ভূমিকা, এই সব এবং আরও অনেক বিষয় উঠে এল পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ ও ভারতীয় সংগ্রহালয়ের উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক কর্মশালায়, গত ৪ থেকে ৬ অগস্ট। ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক ইতিহাসবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, প্রত্নতাত্ত্বিক, গবেষকেরা। মৌখিক ইতিহাসকে উপাদান হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গবেষকের নৈতিক দায়িত্ব মনে করিয়ে দিলেন বক্তারা, বহু স্বর শুনেও কোন সূত্র ব্যবহার করবেন ইতিহাসবিদ, সেই সচেতনতার কথাও।
উৎসবে
বহুরূপী ছাড়া আর কোনও নাট্যদলে কাজ করেননি; অবসর ভেঙে মঞ্চে ফিরছেন দেবেশ রায়চৌধুরী, প্রাচ্য-র নতুন প্রযোজনা কোয়ারেন্টাইন-এ। আর্থার মিলার-এর আ ভিউ ফ্রম দ্য ব্রিজ অবলম্বনে কাবেরী বসুর নাটক, নির্দেশনায় বুদ্ধদেব দাস, প্রথম অভিনয় প্রাচ্যর জন্মদিনে, ১৯ অগস্ট অ্যাকাডেমি মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। তার আগে দুপুর ৩টেয় মণিকর্ণিকায় মণিকা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় অঙ্ক, অতএব থেকে প্রাচ্য উপহার দিচ্ছে সমাজ ও জীবন-সচেতন নানা নাট্য, অ্যাকাডেমিতে তাদের পনেরো পূর্তির অনুষ্ঠান শুরু ১৭ অগস্ট সন্ধ্যায়, দায় আমাদেরও নাটক দিয়ে। পরদিন বিকেলে তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে হিরণ মিত্র ভূষিত হবেন এ বছরের ‘প্রাচ্য সম্মান’-এ, সাড়ে ৭টায় ‘সবার পথ’-এর অন্তরঙ্গ নাটক শীতলপাটি।
শ্রাবণগান
মার্গ সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীতের মেলবন্ধন, একই মঞ্চে। কলকাতার বহুল চর্চিত স্ট্রিং অর্কেস্ট্রা ‘কলকাতা ইয়ুথ অঁসম্বল’ (কেওয়াইই)-র শতাধিক শিল্পী আজ মধুসূদন মঞ্চে বিকেল ৫টায় অর্কেস্ট্রায় জাগাবেন লোকসঙ্গীতের সুর। বিশ্বের নানা প্রান্তের লোকসঙ্গীত কী ভাবে ভারতীয় জনপ্রিয় সঙ্গীতধারায় ছাপ ফেলেছে, সুরে সুরে বুঝিয়ে দেবে অর্কেস্ট্রা: বেহালা, ভোকাল সিম্ফনি, বাদ্যযন্ত্রে। পরিবেশিত হবে চারটি সান্ধ্য রাগও। অন্য দিকে, প্রতি বছরের মতোই এ বারও শ্রাবণে ‘মল্লার উৎসব’-এর রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কে; আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় বিবেকানন্দ হল-এ কণ্ঠসঙ্গীত সন্তুর সরোদ তবলায় বর্ষারাগে আরশাদ আলি খান, সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত তন্ময় বসু, উস্তাদ আশিস খান ও উস্তাদ সাবির খান।
দেশের ছবি
শহরের সংস্কৃতি-মানচিত্রে ‘কলকাতা পিপল’স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর আলাদা গুরুত্ব, ভিন্ন ধারার এই চলচ্চিত্রোৎসব আগামী জানুয়ারিতে পা দেবে দশে। সেই উপলক্ষে উৎসব-উদ্যোক্তা পিপল’স ফিল্ম কালেক্টিভ আগামী কয়েক মাস ধরে বড় পর্দায় ফিরে দেখবে গত দশ বছরে প্রদর্শিত ছবি থেকে বাছাই ক’টি। স্বাধীনতা দিবসে উত্তম মঞ্চে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উৎসব, নাম ‘ফ্রেমস অব ফ্রিডম’। পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রে গত এক দশকের ভারতচিত্র: চৈতন্য তামহানের কোর্ট, নাগরাজ মঞ্জুলের ফ্যান্ড্রি, কিশলয়ের অ্যায়সে হি, রীতেশ শর্মার ঝিনি বিনি চাদরিয়া আর অনামিকা হকসরের ঘোড়ে কো জলেবি খিলানে লে জা রিয়া হুঁ। সেই সঙ্গে মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলবেন অরুণাভ সইকিয়া।
ভিন্ন ধারা
যামিনী রায় নামটা মনে পড়তেই মানসচক্ষে ভেসে ওঠে এক শহুরে পটুয়ার অস্বচ্ছ জলরঙে করা অনুপম লোকভাষ্য— কালীঘাটের পট আর বাংলার মন্দির-টেরাকোটার অনবদ্য সংমিশ্রণের ছবি। অথচ এই শিল্পীই তাঁর শিল্পজীবনের প্রাথমিক দুই দশক চিত্রচর্চা করেছিলেন একেবারেই পাশ্চাত্যধারায়। সেই সময়ের— ১৯০৮ থেকে ১৯২০ সময়কালে আঁকা, একেবারে ইমপ্রেশনিস্ট ঘরানার সতেরোটি তেলরঙে তৈরি ল্যান্ডস্কেপ (নীচের ছবিতে তারই একটি) নিয়ে প্রদর্শনী চলছে এই মুহূর্তে কলকাতায়, ৫৫ গড়িয়াহাট রোডের চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে। কিউরেটর প্রভাস কেজরীওয়ালের কথায়, ছবিগুলি অধিকাংশই অদেখা; তাঁর সঙ্গে প্রদর্শনীর সহ-আয়োজনে আছেন আশাতীত হালদার। ১ অগস্ট শুরু হয়েছে প্রদর্শনী, চলবে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা অবধি।
বিপ্লবী কলমে
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল বাংলার সমাজজীবন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে। তারই এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বাংলার বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বয়ানে ও লেখনে তাঁদের উপর ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচার, সহ-সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা, এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী মানুষের বিশ্বাসভঙ্গের কাহিনিও। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর স্মরণ ও উদ্যাপনে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির উদ্যোগে, বাংলার বিপ্লবীদের লেখা আত্মকাহিনিগুলি এ বার প্রকাশিত হবে কয়েক খণ্ডে— কারাকাহিনি: বাংলার বিপ্লবীদের আত্মকথন (সম্পা: বারিদবরণ ঘোষ) নামে। প্রথম খণ্ডে (ছবিতে প্রচ্ছদ) রয়েছে উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাসিতের আত্মকথা, বারীন্দ্রকুমার ঘোষের অগ্নিযুগ, উল্লাসকর দত্তের আমার কারা-জীবনী, মতিলাল রায়ের আমার দেখা বিপ্লব ও বিপ্লবী, প্রকাশ পাবে স্বাধীনতা দিবসে, আগামী ১৫ অগস্ট।
স্মরণে, চর্চায়
ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার কবিতা ও নাটকে ধরা আছে স্পেন তথা গোটা বিশ্বের টালমাটাল এক সময়। দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝের সেই সময়টা ইউরোপ-আমেরিকায় সভ্যতার প্রবল সঙ্কটকাল, যা ছায়া ফেলেছিল লোরকার সাহিত্যকর্মে, বক্তৃতায়, চিঠিতে। ১৯৩৬ সালে মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে স্পেনের স্বৈরাচারী শাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর ভাড়াটে খুনিদের হাতে মৃত্যু তাঁর স্মরণ ও চর্চা ব্যাহত করতে পারেনি। এগিয়ে আসছে সেই প্রয়াণদিনটি, ১৯ অগস্ট— এ বছর লোরকার জন্মের ১২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার বছরও। কলকাতার স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র ‘লোস ইস্পানোফিলোস’-এর উদ্যোগে আজ ও কাল, ১২ ও ১৩ অগস্ট বিকেল ৫টা থেকে ২৪ অশ্বিনী দত্ত রোডের শরৎ স্মৃতি ভবনে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকাকে নিয়ে আলোচনা, তাঁর কবিতা ও নাটক পাঠ; থাকবেন মালবিকা ভট্টাচার্য-সহ লোস ইস্পানোফিলোস-এর সদস্যরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy